নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীতে ফেলনা মাছের আঁশের কদর দিনে দিনে বাড়ছেই। শহর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই মণ মাছের আঁশ কেনাবেচা হচ্ছে। আর আঁশের এই ব্যবসা প্রসারের জন্য সরকারি সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতাও প্রয়োজন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজশাহী থেকে সরাসরি আঁশ রপ্তানির কোনো সুযোগ নেই। যদি সুযোগ থাকতো তাহলে ভালো দাম পাওয়া যেতো। তাই সম্ভাবনাময় এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন বিকল্প পেশার মানুষ। আর আঁশের ব্যবসার প্রসারের জন্য সবার আগে সরকারি সহায়তা।

আরও পড়ুন: শীতকালে মাছের ক্ষত, লেজ ও পাখনা পচা রোগ প্রতিরোধে করণীয়

মাছের আঁশের ব্যবসা রাজশাহীতে অনেকটাই নতুন। আগে এখানকার হাট-বাজারে মাছের আঁশের কদরই ছিল না। বাজারের মাছপট্টিতে জমা হওয়া আঁশগুলো ময়লা নর্দমায় ফেলে দেওয়া হতো। সময়ের বিবর্তনে এখন সেই আঁশেরই কদর তুঙ্গে। রাজশাহীর বাজারগুলোতে এখন ৪০ থেকে ৫০ জন ব্যবসায়ী মাছের আঁশ সংগ্রহ করছেন। সাধারণত একটি মাছ কাটার জন্য পাঁচ থেকে দশ টাকা করে মজুরি নেওয়া হয়।

এর পাশাপাশি তারা আলাদা করে মাছের আঁশ সংগ্রহ ও বিক্রির ব্যবসা করছেন। ফলে সরাসরি মাছ বিক্রি না করলেও বাজারে মাছ কেটে ও মাছের আঁশ কেনাবেচা করে এখন অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। মাছ বিক্রির পাশাপাশি এটি বিকল্প পেশা হিসেবেও এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছে রাজশাহীতে। মাছের সঙ্গে আঁশ বিক্রি করে খুলেছে অতিরিক্ত আয়ের পথ। এই ফেলনা জিনিসটিও তাই সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

নগরের শালবাগান বাজার এলাকার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, শুরুর দিকে তিনি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেন যেন মাছের আঁশগুলো ফেলে দেওয়া না হয়। এজন্য নিজেই বাজারে বাজারে নিজে ঘুরে বেড়াতেন। মাছ কাটা ও আঁশ ছাড়ানোর পর যেন সেগুলো যত্ন করে জমিয়ে রাখেন। বিনিময়ে মাসে একটা নির্ধারিত টাকা দিতেন। এখন অবশ্য কেজি দরে কিনতে হয়। প্রতি কেজি মাছের আঁশের দাম পড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর মণ হিসেবে ১ হাজর ৬শ টাকা থেকে ২ হাজার ৫শ টাকা পড়ে।

আরও পড়ুন: ঝটপট তৈরি করুন মাছের স্টেক

শফিকুল ইসলাম জানান, কেবলে রাজশাহীই নয়, এখন দেশজুড়েই তাদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে রাজশাহী ছাড়াও, ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাছের আঁশ কেনাবেচার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। অন্তত শতাধিক লোক আঁশ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত। বাজারে যারা মাছ কাটেন এবং আঁশ ছাড়ান, প্রথম কাজটা তারাই করেন। মাছের আঁশ সংগ্রহের পর তা ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে বাজারজাতের উপযোগী করে তুলছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রথম পর্যায়ে এভাবে একসাথে ৩/৪ মণ মাছের আঁশ বস্তায় পুরে জমানো হয়। এরপর রাজধানী ঢাকা থেকে পাইকারী ক্রেতারা আঁশ কিনতে রাজশাহী আসেন। দরদাম করে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভে তাদের কাছে মাছের শুকনো ঝরঝরা আঁশগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়। তবে বাজারে চাহিদা থাকলেও রাজশাহী থেকে মাছের আঁশ সরাসরি রপ্তানির সুযোগ নেই। তাই ব্যবসায়ীরা বিক্রিত মাছের আঁশের কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

রাজশাহীর পাইকারি আঁশ বিক্রেতা সালেক হোসেন জানান, মাছের আঁশের বড় রপ্তানির গন্তব্য হচ্ছে জাপান। কিন্তু সরাসরি জাপানে পাঠানো যায় না। জাপানি একটি বড় কোম্পানি চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় দুটি আলাদা কোম্পানি খুলেছে। ওখানে আগে পাঠানো হয়। মূল কোম্পানি পরে নিয়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়াতেও এখন কারখানা গড়ে উঠেছে। রপ্তানির জন্য তৈরি করার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে। তাদের সনদ পাওয়ার পরই রপ্তানির অনুমতি মেলে।বছরে দেশ থেকে ৮শ থেকে ১ হাজার টন আঁশ রপ্তানি হয় বলেও জানান সালেক হোসেন।

বর্তমানে দেশে তিনটি কারখানা আছে। মোট রপ্তানি হয় আনুমানিক দেড় লাখ ডলারের পণ্য। তবে সুযোগ না থাকায় রাজশাহী থেকে সরাসরি মাছের আঁশ রপ্তানি করা যায় না। মূলত ঢাকা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তাদের মাছের আঁশ জাপানসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। জাপান ছাড়াও থাইল্যান্ড এবং ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে মাছের আঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উন্নতমানের প্রসাধনসামগ্রী ফুড সাপ্লিমেন্ট, ক্যাপসুলের ক্যাপ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার হয় ফেলে দেওয়া এই মাছের আঁশ।

আরও পড়ুন: ১০ হাজার লিটার বায়োফ্লকে মাছ চাষে আয়-ব্যয়ের হিসাব

রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা এগ্রিকেয়ার.কমকে বলেন, রাজশাহীর বাজারে মাছের আঁশের ব্যবসাটি একেবারে নতুন। ব্যবসায়ীরা  রাজশাহী থেকে আঁশ  ঢাকায় পাঠায়। সেখান থেকে পক্রিয়া জাত করে বিদেশে পাঠায়। আর এই বিষয়টি এখন পর্যন্ত সরকারের নীতিনির্ধারনী মহলের কাছে পৌঁছয়নি। ব্যবসাটি আরো লাভজনক হলে সরকার এই খাতে নজর দেবে। তখন মাছের আঁশ রপ্তানি উপযোগী করতে ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাদের সার্বিক সহযোগিতা সহযোগিতায় সরকার এগিয়ে আসবে। যেকোনো পণ্য রপ্তানিযোগ্য করতে আগে প্রশিক্ষণ দরকার। সরকার সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।

এগ্রিকেয়ার / এমবি