রাজশাহীতে পোল্ট্রির কেজি ১৭০

মেহেদী হাসান, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ১০ দিনের ব্যবধানে রাজশাহীতে ব্রয়লার মুরগির কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ১১০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হতো পোল্ট্রি মুরগি। এখন প্রতিকেজি পোল্ট্রি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা।

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন,‘ করোনার প্রভাব পড়েছে সর্বত্রই। ঈদের আগে মুরগির দাম আরোও বাড়তে পারে। অধিকাংশ খামার ফাঁকা হয়ে গেছে। এই ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না। খামারিরা করোনার কারণে একবার মুরগি বিক্রি করে আর বাচ্চা তোলেননি। দাম না বাড়লে খামারিরা লোকসানে পড়বে আবার অতিরিক্তি দামে ভোক্তারা বিপদে পড়বে’।

করোনায় ডিমের বাজার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ ডিমের খামারিরা চরম ভোগান্তিতে আছেন। রমজানের শেষে চাহিদা কম থাকায় দাম কমে। কিন্তু এবার করোনার কারণে ১৮-২০ মাসের দীর্ঘমেয়াদি এ প্রজেক্টের মুরগি তারা বিক্রি করতেও পারছেন না। আশায় বুক বেঁধে আছেন খামারিরা। এই বুঝি দাম বাড়লো।

এ অবস্থায় থাকলে ২ তিন মাসের মধ্যে ডিম দেওয়া মুরগি বিক্রি করতে বাধ্য হবেন তারা। ফলে আবার ডিমের দাম বাড়বে। তবে স্বাভাবিক স্থিতিশীল বাজার আমাদের কাম্য’

মঙ্গলবার সকালে বাজারে এসেছিলেন বিদ্যুত হোসেন। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান,‘ করোনার লকডাউনে এমনিতেই আমাদের অবস্থা খারাপ। ঘরবনদী জীবনযাপন করতে হচ্ছে। আয়-রোজগার নেই। বাজার করতে এসে জিনিসপত্রের দাম বেশি। মুরগির দামটা বেশি কিন্তু ডিমের দাম কম। এখন ডিম খাওয়াই বেশি হচ্ছে। তারপরেও ১ কেজি ৪০০ গ্রামের একটা পোল্ট্রি কিনলাম’

করোনায় নিম্ন আয়ের প্রত্যেক মানুষকেই হতাশ হতে হচ্ছে মুরগিরসহ বিভিন্ন মাংসের দামে। গত ১০ দিনের ব্যবধানে রাজশাহীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে পোল্ট্রি মুরগির দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে কেজি ১৬৫-১৭০ টাকা ছুঁয়েছে। খুচরার পাশাপাশি ফার্মেও পোল্ট্রি মুরগির দাম বেড়েছে। কয়েক দফা দাম বেড়ে এখন ফার্মে দ্বিগুণের বেশি দামে পেল্ট্রি মুরগি বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশ করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে পোল্ট্রি মুরগির চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যায়। ফলে দামও কমে। করোনার আগে ১৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পোল্ট্রি করোনার শুরুতে ১১০ থেকে ১০০ টাকায় নেমে আসে। তবে রোজার শুরুতে কিছুটা দাম বাড়ে। এতে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হতে থাকে পোল্ট্রি মুরগি। বেশ কিছুদিন এই দাম স্থির থাকার পর চলতি মাসের ৮ তারিখে এক লাফে পোল্ট্রির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকা হয় যায়। দামের উঠানামা করতে করতে এখন ১৭০ টাকায় ছুঁয়েছে।

সাহেববাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে পোল্ট্রি মুরগির দাম যে হারে বাড়ছে তাতে ঈদের আগে হয়তো কেজি ২০০ টাকা হয়ে যাবে। কারণ এখন গরু ও খাসির মাংসের অনেক দাম। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে গরু ও খাসির মাংস কিনে খাওয়া সম্ভব না। ফলে ঈদের দুই-তিনদিন আগে পোল্ট্রি মুরগির চাহিদা আরও বেড়ে যাবে।

হঠাৎ পোল্ট্রি মুরগির অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ও উৎপাদকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের শুরুতে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যায়। এতে ফার্ম মালিকরা লোকসানে কম দামে মুরগি বিক্রি করেন। যে কারণে তারা নতুন বাচ্চা উৎপাদন হয়নি। নতুনভাবে খামারিরা ঋণ করে বাচ্চা তুলেননি। তাদের লোকসানের কথা ভেবে ঝুঁকি নিতে চাননি।একটা গ্যাপ পড়েছে মাংস উৎপাদনে। আর সরবরাহ কম থাকলে তো দাম বাড়াই স্বাভাবিক। ঈদের আগে আরো দাম বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।

সাহেববাজরের ব্যবসায়ী তুষার এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, এখন প্রায় প্রতিদিনই পোল্ট্রি মুরগির দাম বাড়ছে। কিছুদিন আগে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা পোল্ট্রি মুরগি এখন ১৭০ টাকা হয়েছে। যে হারে দাম বাড়ছে তাতে ঈদের আগে হয়তো ২০০ টাকা কেজি হয়ে যাবে।

তিনি আরোও বলেন, ঈদের আগে দাম কমার সম্ভাবনা খুবই কম। এখন বাজারে মুরগির চাহিদা আগের থেকে বেড়েছে। কয়েকদিন আগেও বসে বসে কাটাতে হতো। প্রতিবছরই ঈদের আগে মুরগির মাংসের দাম বেশি হয়। এবার আবার করোনা।

আজ মঙ্গলবার সকালে নগরীর সাহেব বাজার, উপশহর নিউ মার্কেট এলাকা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়। কালবার্ড লাল ২০০ টাকা, কালবার্ড সাদা ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা, সোনালী মুরগী ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। মুরগির ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে বলে এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান ফাহিম ডিম ভাণ্ডারের মালিক মাসুদ রানা ও বাদশা। লাল ডিম পাইকারি ৫০০ টাকা শ’ সাদা ডিম ৪০০ টাকা শ’।

প্রসঙ্গত, রাজশাহীতে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০, বাড়েনি ডিমের দাম এতে ব্রয়লার খামারিরা কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও লেয়ারের খামারিরা বিপাকেই পরে আছেন। আরও পড়ুন: মঙ্গলবারের (১৯ মে) পোল্ট্রির ডিম, মুরগি ও বাচ্চার পাইকারি দাম