মেহেদী হাসান, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পর চালের দাম এখন কমছে। গত ১০ দিনের ব্যবধানে রাজশাহীর বাজারে দফায় দফায় কমেছে চালের দাম। এদিকে রাজশাহীর বাজারে আসছে নতুন  চাল, এ কারণেও দাম কমছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া রাজশাহী নগরীতে চালের দাম কমার অন্যতম কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বর্তমানে লাখ লাখ শিক্ষার্থী বাসায় অবস্থান করছে, ফলে চালের চাহিদাও কমে গেছে। চাল ব্যবসায়ী ও বাজার ঘুরে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

আজ সোমবার (১১ মে, ২০২০) রাজশাহীর সাহেববাজার, নিউমার্কেট এলাকা সরেজমিনে দেখা যায়, পুরাতন আঠাশ চালসহ অন্যান্য চালের দাম ওঠানামার মধ্যে নতুন আঠাশ ও মিনিকেট চালের দাম কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা কমেছে।

কয়েক সপ্তাহ আগে রাজশাহীর সাহেব বাজারে নতুন আঠাশ চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। যা গত শুক্রবার বিক্রি ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা কেজি। মিনিকেট বিক্রি হয়েছিলো ৫৬ টাকা যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়। নতুন চালের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে দাম আরো কমবে বলে মনে করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার রাজশাহীতে ৬৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে বোর ধানের আবাদ করা হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ২৭ টন। এখন পর্যন্ত শতকরা ১২% ধান কাটা হয়েছে। ধান কাটা, মাড়াই শেষে চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে।

খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, কৃষকরা এখন বোর ধান কাটছেন। এতে নতুন চাল বাজারে কিছু আসছে। নতুন চাল বাজারে আসলে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা প্রভাব পড়ে। বাজারে চালের সরবরাহ বাড়লে দাম আরো কমবে।
নগরীর সাহেব বাজারের এপি চাউল ভান্ডারের মিলন প্রসাদ এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, নতুন চালের মধ্যে নতুন আঠাশ চালটা বাজারে আসতে শুরু করেছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে দামও কেজিতে ৫ টাকা কমেছে। আর এখনো ধান কাটা শেষ হয়নি। সামনের ৮-১০ দিন পর চাল সহজলভ্য হলে দাম আরও কমবে বলে আশা করছি।

আরেক চাল ব্যবসায়ী সুশীল চাউল ভান্ডারের মালিক সুশীল কুমার বলেন, আমাদের ব্যবসা মূলত শিক্ষার্থীদের কাছে। রাজশাহী ফাঁকা। ছাত্র- ছাত্রীরা বাসায় চলে গেছে। আমাদের বেঁচা- কেনা আগের মতো নেই। চালের দাম কমেছে ৫-৬ টাকা করে। আবার নতুন চাল বাজারে আসছে । আরো দাম কমবে ।

আরোও পড়ুন: বাড়ন্ত মুরগি নিয়ে বিপাকে রাজশাহীর পোল্ট্রি খামারিরা

চাতাল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, রাজশাহীর স্থানীয় বাজারে নতুন আঠাশ ধান ৯০০ থেকে ৯৫০ পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে। যেটা পাড়নে ভিজে যায় সেটার দাম কিছুটা কমে যায়। আর এখনো নতুন ধানের হাট জমতে শুরু করেনি। কয়েকদিন পর জমতে শুরু করবে। তবে দাম হয়তো কমতে পারে। আর ধানের দাম কমলে চালের দামও কমবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, আমরা আশা করছি রাজশাহীতে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে। আমাদের ধান মাত্র ১২% কাটা হয়েছে। সব ধান কাটা শেষ হতে আরো ১ মাস মতো সময় লাগবে।

এখন কিছু ধান মাড়াই, শুকানো চলছে। এবং কিছু স্থানীয় বাজারেও যাচ্ছে। আর প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগে বোর আবাদের তেমন ক্ষতি হয়নি। এবার ফলন ভালো হবে। রাজশাহীতে খাদ্যশস্য ধান, গম, ভুট্টায় সবসময় উদ্বৃত্ত থাকে। যেগুলো ঢাকা, চট্রোগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় যায়। আমরা আশাবাদি বরাবরের মতো এবারো উদ্বৃত্ত থাকবে।

তিনি আরো জানান, রাজশাহীতে এবার সরকারিভাবে প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হবে। কৃষকদের থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে এ ধান কেনা হবে। এতে বাজারে একটা প্রভাব পড়বে।

এদিকে, নগরীর সাহেব বাজারে পুরাতন আঠাশ চাল বিক্রি হয় ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা কেজি, শরনা৩৮-৩৯ থেকে ৪২টাকা, জিরাশাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা ও বাসমতি ৬০ টাকা কেজি। রাজশাহীর বাজারে আসছে নতুন চাল, কমছে দাম ‍শুধু একটি নির্দিষ্ট একটি এলাকা নয় পুরো দেশজুড়ে যেন চালের দাম কমে সে ব্যবস্থার ওপর জোর দেন সংশ্লিষ্টরা।