মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: বিগত কয়েক বছরের তুলনায় রাজশাহীতে এবার সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হয়েছে ভালো ফলন। অবশেষে তেল জাতীয় এ ফসলের বাজারও বেশ ভালো। তবে এবারই রেকর্ড দামে এই দানা শস্য বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে খুশি রাজশাহীর চাষিরা।

সরিষা ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ কাঁচা সরিষা দুই হাজার পাঁচ শ’ থেকে দুই হাজার সাত শ’ টাকায় বিক্রি করছেন কৃষক। বর্তমানে রাজশাহী কৃষি অঞ্চল রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় শুকনা সরিষা তিন হাজার ছয় শ’ থেকে তিন হাজার সাত শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সবেচেয়ে ভালো মানের সরিষা ৪ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, কাঁচা সরিষা এর আগে এমন দামে কখন বিক্রি করতে পারেননি তারা।

রাজশাহী কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা লক্ষ্যমাত্রা চাষের ধরা হয়। সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন। হেক্টরে ১ দশমিক ৫৯ টন ফলন ধরা হয়েছে। (উফশী) জাতের বারি সরিষা- ১৪, বারি সরিষা- ১৭, বারি সরিষা- ১৮। এছাড়া বিনা জাতের সরিষা চাষ হচ্ছে।

পড়তে পারেন: মহাদেবপুরে বারি সরিষায় বাজিমাত, বিঘায় ফলন ৯ মণ

চার অঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারের ব্যবসায়ী ও আড়ত মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরে যে দামে সরিষা বিক্রি হয়েছে এর আগের কয়েক বছরের মধ্যে এ দাম পাননি তারা। চার হাজার টাকা মণ হিসেবে শুকনো সরিষা বিক্রি হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার বলেও বলছেন তারা। অনেক ব্যবসায়ী এক’শ থেকে পাঁচশ মণ সরিষা কিনে মজুদ করে রেখেছিলেন। তারা কয়েক মাসের মধ্যে মণে প্রায় হাজার টাকা লাভ করেছেন।

নওগাঁ জেলার এক চাষি জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছিলেন। কাঁচা অবস্থায় তিনি ২০ মণ সরিষা বিক্রি করেছিলেন ২৩’শ টাকা মণ। পরে আরো ৫০ মণ সরিষা কিনেছেন আড়াই হাজার টাকা দরে। পরে ৩ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

পড়তে পারেন: কোন তেল ব্যবহার করবেন-সয়াবিন নাকি সরিষা?

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার এক চাষি হামিদ মোল্লা তিন বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। তার খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। আর সরিষা পেয়েছেন ২০ মণ। ২০ মণ সরিষা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছেন ৪৮ হাজার ৪০০ টাকায়।

নাটোরের বড়াইগ্রামের কৃষক কিসমত আলী পাঁচ মণ সরিষা বিক্রি করেছেন ১৪ হাজার টাকায়। আউষ, আমন ও বোরো চাষের মাঝে সরিষা করলে কোন সারের দরকার হয়না। সামান্য ইউরিয়া ছাড়া তেমন খরচ নেই। বীজ বোনার দুই মাসের মধ্যে সরিষার ফসল ঘরে তোলা যায়। চারা গজানোর পর আগাছা পরিষ্কার করা ছাড়া তেমন কোনো শ্রমেরও দরকার হয় না। আর সরিষা মেশিন দিয়ে মাড়াই করার কারণে তেমন খরচই নাই। আর কাঁচা বিক্রি করা যায়। টাকা পাওয়া যায় একসাথে।

পড়তে পারেন: সরিষা চাষ করে আলুর বাদামি পচা রোগ প্রতিকারের কৌশল

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের ইউসুফ আলী বলেন, আড়াই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলাম। এর আগে কোনদিন সরিষার এতো দাম পাইনি। ২৮০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি কাঁচা ভেজা অবস্থায়। আর কিছু রেখেছিলাম পেড়াই (তেল তৈরি করে) করে খেয়েছি। এখন যে দাম রয়েছে তা কয়েক বছরের চেয়ে সর্বোচ্চ। এখন ৪ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: মোজদার হোসেন বলেন, অনুকূল আবহাওয়া ও নিবিড় পরিচর্যার কারণে এ এলাকার কৃষক সরিষা আবাদ করে বেশ ভালো ফলন পেয়েছেন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার আবাদও হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা সরিষা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ এরই মধ্যে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। বাজারমূল্য ভালো থাকলে সরিষা চাষের দিকে কৃষকেরা আরো ঝুঁকবেন। টরি-৭ জাতের সরিষা আমরা নিরুৎসাহিত করছি চাষিদের। ফলন কম হওয়ার কারণে এটা চাষ করতে নিষেধ করা হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ