নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মাছ চাষ করে ময়মনসিংহের সফল ব্যক্তি এ কে এম নুরুল হক। ১৯৯৩ সালে লিজের একটা পুকুর দিয়ে শুরু করেছিলেন পথচলা। সেই থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সুদের ৩০ হাজার টাকা দিয়ে করেছিলেন পুুঁজি। অথচ তিন দশক পর তাঁর সম্পদের হিসেবে হয়েছেন কোটিপতি। কিনেছেন ৩ একর বা ৬০ বিঘা জমি। এলাকার সফল মাছচাষি হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি।

শহরতলি শম্ভুগঞ্জের চরপুলিয়ামারী এলাকায় গড়ে তুলেছেন ব্রহ্মপুত্র ফিশ ফিড কমপ্লেক্স। এই প্রতিষ্ঠানের বদৌলতে মাছ চাষে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৭ সালে জাতীয় যুব পুরস্কার, ১৯৯৮ সালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পদক (রৌপ্য), ২০০৯ সালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পদক (স্বর্ণ) ও ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক (ব্রোঞ্চ) পেয়েছেন।

সফলতার গল্প জানতে কথা হয় তাঁর সাথে। নুরুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, শুরুতে এ কাজে পারিবারের বাধা ছিল। গণিতে অনার্স পাস করে অন্য চাকরি না করায় বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তিন বছর থেকেছি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার বারান্দায়। পরে শুরু করি মাছ চাষ।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের অন্যান্য নিউজ পড়তে পারেন:

 বড় নয়, মাঝারি দেশাল গরুর দিকে যে কারণে ঝুঁকছে খামারিরা

আলোহীন চোখ নিয়ে গরুর খামারে লাখোপতি ফাহিম

গরুর নতুন খামারের জন্য বকনা ও গাভীর প্রাপ্তিস্থান-মূল্য

অনেক কষ্টের পর সফলতা আসতে শুরু করল। তখন অবশ্য সবাই মেনে নিয়েছিলেন এবং উৎসাহ জুগিয়েছেন। প্রথম দিকে পুকুরে রেণু থেকে পোনা উৎপাদনের কাজে হাত দিলেও চাহিদা বাড়ায় ১৯৯৩ সালে ব্রহ্মপুত্র ফিশ ফিড কমপ্লেক্স নামের একটি হ্যাচারি গড়ে তোলেন। এখানে কার্প জাতীয় রেণু উৎপাদন করা হতো। ১৯৯৮ সালে দেশি মাগুর ও ১৯৯৯ সালে শিং মাছের পোনা উৎপাদন শুরু করেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত চলে এটি। এরপর ২০০১ সালে পাবদা, ২০০৩ সালে থাই কই মাছের পোনা উৎপাদনে সফল হন।

২০১০ সাল থেকে তেলাপিয়ার সুপার পুরুষ থেকে শুধু পুরুষ পোনা উৎপাদন, ২০১৫ সালে গাং মাগুর ও ২০১৮ সালে মলা মাছের কৃত্রিম প্রজনন শুরু করেন। সর্বশেষ ২০২০ সাল থেকে রানি মাছ নিয়ে কাজ করছেন নুরুল হক। ১৯৮৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু চাকরির পেছনে না ছুটে মাছ চাষে ঝুঁকে পড়ে তিনি পৌঁছেছেন সফলতার শীর্ষে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের অন্যান্য নিউজ পড়তে পারেন:

রাজশাহীতে ভয়ংকর এলএসডি আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বাড়ছে

গরুর প্রাণঘাতী ব্যাবেসিওসিস রোগ সম্পর্কে জানেন কি?

গরুর তড়কা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

সফল এসব মাছচাষি যেমন নিজেরা সমৃদ্ধ হচ্ছেন, তেমনি অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করছেন। সৃষ্টি করছেন কর্মসংস্থানও। রাখছেন অবদান দেশের অর্থনীতিতে। মাছের পুকুর ও হ্যাচারিতে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করে আজ তারা খুশি, যা দিয়ে চলে তাদের সংসার।

ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাছ উৎপাদিত হয় ময়মনসিংহে। ইতোমধ্যে আমরা তিন হাজার চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আরও দেড় হাজার চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। চাষিদের প্রয়োজনে তাঁরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে মৎস্য অফিস থেকে সহযোগিতা করা হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ