সজিব ইসলাম, চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাটে উপজেলার আমের সুনাম দেশব্যাপি। প্রতি বছর এ উপজেলার আমের বাম্পার ফলন হলেও এবছর বৃষ্টির অভাবে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আম ও লিচু। চাষিরা আশঙ্কা করছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে লোকসান গুণতে হবে তাদের।

উপজেলার আমচাষী ও ব্যবসায়ী আব্দুর সবুর জানান, এবছর আমের পরিস্থিতি খুব খারাপ। বৃষ্টি নেই, রোদে পচন ধরে ঝরে যাচ্ছে।

চারঘাট উপজেলার চকগোচর গ্রামের আমচাষী শহিদুল ইসলাম প্রায় ১২ বছর ধরে বাগান ইজারা নিয়ে আমের ব্যবসা করছেন। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, এ বছর পর্যাপ্ত গুটি এলেও অতি খরায় গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। যেসব আম গাছে থাকছে তার গায়ে কালো দাগ দেখা দিয়ে ধীরে ধীরে পচে যাচ্ছে।

গত মৌসুমে করোনার প্রভাব ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয় আমচাষিদের। চলতি বছর গাছে প্রচুর আম ধরায় বাগানীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সে আশায় হানা দিয়েছেন খরা।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আম চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনাবৃষ্টির ফরে গাছ থেকে আম ঝরে পড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়ায় আম ছোট ছোট। এবার মুকুল আসছিল ভালো, আমও আসছিল ভাল। কিন্তু এখন আম একটু বড় হওয়ার পর ঝরে যাচ্ছে। পানি পেলে আম যেমন বড় হয় তেমনি বোটাটাও শক্ত হয়।

চলতি মৌসুমের শুরুতে অনুকূল আবহাওয়ায় বেশির ভাগ আম ও লিচু বাগান গুলোতে বিগত বছরের সমপরিমাণ ফল ধরেছে। তবে সম্প্রতি গত কয়েকদিনের তীব্র খড়া ও পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবার চাষিরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চাষিরা দাবি করছেন বিগত বছরের সমপরিমাণ পরিচর্যা করেও এবার বেশির ভাগ বাগান গুলোতে বিভিন্ন রোগ-বালাই দেখা দিয়েছে। যার কারণে এবার বাগান মালিকরা চরম লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

চারঘাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর নতুন ও পুরাতন মিলে প্রায় ৩৮৫০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। চলতি বছর এ উপজেলায় আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ মেট্রিক টন।

অপরদিকে বাজার ভালো থাকায় প্রতিবছর লিচুর বাগান রোপণে আগ্রহী হচ্ছেন এ উপজেলার অনেক চাষিরা। এই এলাকায় নতুন পুরোনো মিলে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। অনাবৃষ্টিতে লিচুতেও লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

উপজেলার লিচু চাষি ইলিয়াস হোসেন বলেন, এবার বৃষ্টিপাত হয়নি। তার ওপর এখন অনেক তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এতে আম ও লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যার কারণে এবার ব্যবসায়ীরা আগাম আম ও লিচুর বাগান কিনতে আগ্রহী হচ্ছে না।

কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর থেকে এই উপজেলায় বৈরি আবহাওয়ার বিরাজ করায় চাষিরা বিভিন্ন ধান-গমসহ ফসল উৎপাদন করে লোকসানের মুখে পড়ছেন। যার কারণে তারা স্বল্প খরচে অধিক লাভের আশায় ফসলি জমি গুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির আম ও লিচুর গাছ রোপণ করছেন। গত বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ বছর বেশির ভাগ আম ও লিচু বাগানে মুকুল দেখা দেয়।

কিন্তু মৌসুমের শুরু থেকে কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনেক মুকুল ও কুঁড়ি গুলো শুকিয়ে ঝড়ে যায়। তার ওপর এবার মাত্রাতিরক্ত তাপদাহ হওয়ায় বাগান মালিকরা ব্যাপক লোকসানের মুখে রয়েছেন। অনেক বাগান গুলোতে পচন রোগের প্রভাব দেখা দিয়েছে। তীব্র তাপদাহে লিচুর ওপরিভাগের অংশ পুড়ে ও ফেটে যাচ্ছে। চাষিরা ফেটে যাওয়া ও পচন রোধে বিভিন্ন প্রতিরোধক ব্যবহার করেও পর্যাপ্ত সুফল পাচ্ছে না। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেখা দেয়ায় বাগান মালিকরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের ব্লক সুপারভাইজার (উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা) আক্তারুজ্জামান  এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আম-লিচু সাধারণত দু’টি কারণে পচন ধরতে পারে। একটি হচ্ছে ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোয়ার কারণে বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। অপরটি হলো আম ও লিচু ছিদ্রকারী মাছি পোকার কারণে হতে পারে। আর সূর্যের তাপ রোধে লিচুর গাছে নেট বা জাল ব্যবহার অনেক অংশে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

চারঘাট উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীম আহমেদ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে মৌসুমের শুরু থেকে এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম। যার কারণে তাপমাত্রাও অনেক বেশি হয়েছে। এতে করে আম-লিচুসহ বিভিন্ন ফসলের কিছুটা ক্ষয়ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। বাগান গুলোতে রোগ-বালাই কমাতে সঠিক মাত্রায় ¯েপ্র করলে পচন ও পোকা-মাকড় থেকে অনেক অংশে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ