বিশেষ প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে শিডিউল অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ে যাচ্ছে দেশ। এতে ব্রয়লার, সোনালী, লেয়ার মুরগির খামারিদের কী পরিস্থিতি তৈরি হবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। ঘোষণা অনুযায়ী ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত এবং মসজিদে এসি ব্যবহার বন্ধসহ আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আজ সোমবার আয়োজিত এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সাথে সাথে পোল্ট্রি সেক্টরে বড় ধরণের ধ্বস নেমে আসতে পারে বলে শঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানেন না প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কেউ।

বাংলাদেশ প্রান্তিক পোল্ট্রি শিল্প সংগঠনের সভাপতি মো: ইসমাইল মল্লিক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, সরকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে দ্বিমত করার কিছু নাই। কিন্তু পোল্ট্রি খামারিদের দিকে নজর দেওয়া দরকার। কোন পূর্বাভাস ছাড়াই রাতারাতি লোডশেডিংয়ের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত কিভাবে নিলো মাথায় আসে না।

পড়তে পারেন: বৃদ্ধ বয়সে মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী নওগাঁর ছেফাতুল্যা

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ব্রয়লার মুরগির খামারিরা বেশিরভাগই প্রান্তিক। তারা জেনারেটর কোথায় পাবে? আর ২ ঘন্টার মধ্যে গরমে স্ট্রোক করে হাজার হাজার মুরগি মারা পড়বে। এ দ্বায় সরকার নিবে কি? ধ্বংস হয়ে যাবে প্রান্তিক খামারিরা। অন্যদিকে বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানিরা রেডি মুরগি তৈরি করবে। নিজস্ব বিদুৎ আর জেনারেটর দিয়ে ঠিকই বেঁচে যাবে। লালে লাল হয়ে যাবে তারা। মারা পড়ব আমরা।

কথা হয় দেশের বৃহৎ পোল্ট্রি সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা পরিষদের (বিপিকেআরজেপি) সাধারণ সম্পাদক মো: মোহসিন আলী খন্দকারের সাথে।

লোডশেডিংয়ে পোল্ট্রি খাতে কি কি প্রভাব পড়তে পারে জানতে চাইলে তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, করোনাকাল থেকে একটার পর একটা আঘাত পোল্ট্রি সেক্টরের উপর আসছে। খাদ্যের দাম বেড়েছে বস্তায় ১২’শ থেকে ১৪’শ টাকা পর্যন্ত। বিদুৎ বিল, শ্রমিক, ভ্যাকসিন, ডাক্তারসহ খরচের সীমা নেই। বর্তমানে সরকার হটাৎ আরেকটা মরার উপর খাঁড়ার ঘা বসিয়ে দিল। বিদুৎ বন্ধ থাকবে!

পড়তে পারেন: রাজশাহীতে ৭০ শতাংশ পোল্ট্রি খামার বন্ধ

“দুই ঘন্টার ব্যবধানে লাখ লাখ মুরগি মারা পড়তে পারে। এবার তাপমাত্রা প্রায় ৩৭ ডিগ্রির উপরে। এমনিতেই স্ট্রোকে মুরগি মারা যাচ্ছে। একটা সিদ্ধান্ত নিলে দোষ নেই কিন্তু রাতারাতি কেন? প্রান্তিক গরীব খামারিরা হটাৎ জেনারেটর পাবে কোথায়? তাদের সামর্থ্য আছে কিনা দেখতে হবে।” যোগ করে এই পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ।

তিনি আরো বলেন, যদি প্রান্তিক খামারি উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তাহলে লাভবান হবে কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা। যেসব কোম্পানির নিজস্ব বাচ্চা, নিজস্ব খাদ্য, বিদুৎ তারা বাজার নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিবে। ফলে দাম বেড়ে যাবে পোল্ট্রি পণ্যের। ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভোক্তা। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে আমি জানাব অন্তত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আমাদের একটু সময় দেওয়া হোক।

হটাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে বিপাকে পড়বেন খামারিরা। প্রাণিসম্পদ দপ্তর বিদুৎ ও জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের খামার শাখার উপপরিচালক জিনাত সুলতানা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “ আমি এ বিষয়ে বলতে পারব না। আপনি মহাপরিচালক স্যারের সাথে কথা বলুন।”

পড়তে পারেন: রাজশাহী ডেইরি খামারিদের লোকসান ১০০ কোটি টাকা

মহপরিচালকের দপ্তরে ফোন করলে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “স্যার এখন অফিসে নেই। আপনি খামার শাখা নিয়ে, উৎপাদন নিয়ে দেখাশোনা করেন ডা. রেজউল হক স্যার। উনার সাথে কথা বলুন। হয়ত এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন।”

ফোন দেওয়া হয় পোল্ট্রি উৎপাদন বিভাগের পরিচালক ডা. রেজাউল হকের কাছে। একাধিকবার ফোন করে ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

ব্রয়লার মুরগির খামারি তোফাজ্জল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ব্রয়লার মুরগি পালন করা কষ্টকর হয়ে যাবে। ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা এমনিতেই উঠেছে। বেশিরভাগ পোল্ট্রি শেড টিনের চালের। ফ্যান দিয়ে রাখতে হয় মুরগি। এখন কারেন্ট বন্ধ হলে আমাদের গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

পড়তে পারেন: ডিমের দামে লাইফ সাপোর্টে লেয়ার মুরগির খামারিরা

পোল্ট্রি খামারি সুমাইয়া শাকিলা বলেন, “আমার বাবার বয়লার মুরগীর খামার। কারেন্ট না থাকলে, গরমে মুরগী মারা যাবে। এতে আমাদের লস হবে মুরগী মারা গেলে।”

উল্লেখ্য, আগামীকাল থেকে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের জন্য শিডিউলভিত্তিক লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি আরও যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত থাকবে; রাত ৮টার পর শপিংমল বন্ধ থাকবে; মসজিদে এসি ব্যবহার বন্ধ থাকবে; সপ্তাহে এক দিন বন্ধ থাকবে পেট্রোল পাম্প; সরকারি অফিসের সভা হবে ভার্চুয়ালি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ