মেহেদী হাসান, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দীর্ঘ ৪ মাস মুরগি পালনের পর ডিম দিতে শুরু করে ডিমপাড়া লেয়ার মুরগি। বর্তমানে ডিমের বাজারদরে উঠছে না ডিমের উৎপাদন খরচ। দিনে দিনে লোকসান গুণছেন এই প্রান্তিক খামারিরা। মূলধন হারিয়ে দেউলিয়া হয়েছেন অনেকে। যেন কোনমতে লাইফ সাপোর্টে বেঁচে আছেন। আবার অনেকে মুরগি চাষ বাদ দিয়ে ঝুঁকছেন অন্যদিকে।

অন্যান্য পণ্যের তুলনায় ডিমের দাম না বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন খামারিরা। চলতি বছরের শুরু থেকেই উঠানামা করছে ডিমের দাম। একদিকে খাদ্য, ভ্যাকসিন, মুরগির ঔষুধের দামে নাজেহাল খামারিরা। দফায় দফায় খাদ্যের দাম ও বাচ্চার দাম বাড়তে থাকায় হাত গুটিয়ে খামারে মুরগির বাচ্চা তোলেননি অধিকাংশ খামারি।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ (বি.পি.কে.আর.জে.পি) এবং পোল্ট্রি প্রফেশনাল’স বাংলাদেশ (পিপিবি)র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ডিম মুরগির দামে দেখা যায়, প্রতিপিস লেয়ার মুরগির ডিমের দাম গড়ে ৫ টাকা ৯০ পয়সা। অথচ প্রতিপিস ডিম উৎপাদন খরচ সাড়ে ৬ টাকা। লোকসানে লোকসানে হতাশ লেয়ার খামারিরা। চাতকের মতো তাকিয়ে আছেন কবে বাড়বে ডিমের দাম!

খামারিরা বলছেন, প্রান্তিক পর্যায় ও বড় খামারিরা ডিম উৎপাদন করেও দাম পাচ্ছেন না। মুরগি পালনে ব্যায় বেড়েছে বহুগুণ। ডিম ও মাংসের দাম কমলেও বাড়ছে বাচ্চা ও ওষুধের দাম। ডিমপাড়া মুরগির এক দিনের বাচ্চার দাম বাড়িয়েছেন হ্যাচারি মালিকরা। তাঁরা সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট করে বাচ্চার দাম বাড়িয়েছেন।

  • প্রিয় পাঠক আপনারা মুরগি পালনের পাশাপাশি মাছ চাষ করে থাকেন। পোল্ট্রি, ডেইরি, মৎস্যসহ কৃষির যেকোন সমস্যা সমাধান পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি। উপকৃত হবেন এই প্রত্যাশা 

ক্ষোভ প্রকাশ করে খামারিরা বলছেন, বাংলাদেশে কোন ব্যবসা নিরাপদ নয়। কখন কোন পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হয় আবার কোনটা রাস্তায় ফেলে দিতে হয় তার ঠিক নাই। বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। আর তা না পারলে খামারির এই লোকসান ঠেকানো সম্ভব নয়। বাচ্চার দাম হাতের নাগালে থাকলে উৎপাদন খরচ কমে যায় এবং লাভবান হওয়া যায়। বাচ্চার দাম ২০-৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকার এর বেশি হয়ে যায় তখন আর লাভের মুখ দেখতে পান না খামারিরা।

ডিম উৎপাদনকারী লেয়ার মুরগির খামারিরা বলছেন, হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে আমিষের চাহিদা পূরণ করছেন তারা। বিনিময়ে পরিবারের ভরন পোষণের খরচ মিলছে না। বরং জমি বিক্রি করে শোধ করতে হচ্ছে মহাজনের ঋণ। এই সম্ভাবনাময় খাত বর্তমানে নানা সংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে। বর্তমানে ডিমের উৎপাদন খরচ তুলতে খাচ্ছেন হিমসিম। এসব মুরগি ১২০ দিন থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে কিন্তু তার আগে মুরগি পালনের যে খরচ পড়ছে তা অত্যাধিক। এরপর ডিম উৎপাদনের পর পর্যাপ্ত দাম মিলছে না। প্রতিপিস ডিম উৎপাদনে খরচ ৬.৫০ টাকা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ৫.৫০ টাকায়। ফলে লোকসান গুণছেন খামারিরা।

গতকালের বাজার দর: সোমবার (৮ মার্চ) পোল্ট্রির ডিম, মুরগি ও বাচ্চার পাইকারি দাম

মুরগির খাবারের দাম বেড়েই চলে লাগামহীন, বাড়ছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত খরচ, রোগ-বালাইয়ে মুরগি মরে সয়লাব হলেও মিলছে না কোন সরকারি ঋণ। করোনাকালীন ৪ শতাংশ হারে ঋণের ঘোষণা দিলে সরকারি এ ঋণ অধিকাংশ খামারি পান নি। সবমিলিয়ে নতুন করে কেউ আর এই ব্যবসায় পা বাড়াচ্ছেন না বরং বড় মূলধনের ব্যবসায়ীরা মুরগি চাষ বাদ দিয়ে অন্যদিকে ঝুঁকছেন।

এদিকে আধুনিক প্রযুক্তি ও পুষ্টি সচেতনতা এবং চাহিদার কথা চিন্তায় বাড়তে থাকে ডিমের উৎপাদন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী একজন মানুষের বছরে ডিমের চাহিদা ১০৪টি।

ডিমের দাম ক্রমাগত কমার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মুহাম্মদ মুহসিন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বাংলাদেশের খামারিরা যখন ডিম, মুরগির দাম বেশি পান তখন উৎপাদন বাড়াতে থাকেন। উৎপাদন বাড়লে দাম কমে যায়। বর্তমানে চাহিদার চাইতে উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কম। আবার চালের দাম বাড়ার কারণে অনেকে বাজারতালিকা থেকে ডিম বাদ রাখছেন।

ডিমের দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ খুললে ডিমের দাম বাড়ার সম্ভাবন আছে। সোনালী ও ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বিয়ে সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুরগির মাংসের ব্যবহার বৃদ্ধিকেই দায়ী হিসেবে জানান এই সংগঠক।

ডিমের দাম কমার কারন জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (খামার) ড. এ বি এম খালেদুজ্জামান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বর্তমানে আবারও দাম কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ ডিম উৎপাদন অনেকটাই বেড়েছে। করোনাকালীন সময়ে অধিদপ্তরের প্রচার প্রচার-প্রচারণার কারনে ডিমের দাম খুব একটা কমেনি। মাঝখানে দাম কমে আবার বেড়েছিল। তখন ৮ টাকা সাড়ে ৮ টাকা পিস ডিম বিক্রি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বাজারে আমদানির উপর এবং ভোক্তার চাহিদার উপর দাম কমা-বাড়া হয়। খামারিদের শঙ্কার কারণ নেই। ডিমের দাম আবারও বাড়বে বলে আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ