নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পান চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন লক্ষীপুরের চাষিরা। খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের চাষিদের।বছরে প্রায় শত কোটি টাকার পান উৎপাদন হয় বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

অনুকূল আবহাওয়া, বৃষ্টি আর সুষম সার ব্যবহারের ফলে এবার পান উৎপাদন হয়েছে ভালো। এখানকার উৎপাদিত পান জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষিভিত্তিক প্রয়োজনীয় ঋণ সুবিধা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লক্ষ্মীপুরে পান চাষে বিপ্লব ঘটবে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের পান বিদেশে রফতানি করে জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে।

পড়তে পারেন: পানের পাতা পচা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, বছরজুড়ে পানের আবাদ ও ফলন হলেও আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে পানের বেশি ফলন হয়। লক্ষ্মীপুরে এবার ৫০০ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। হয়েছে আড়ােই হাজার পান বরজ। এর মধ্যে ‘পানপল্লি হিসেবে’ খ্যাত রায়পুর উপজেলার ক্যাম্পেরহাট ও হায়দরগঞ্জ এলাকায় পানের আবাদ হয়েছে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে।

চাষিরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে একবার আবাদকৃত একেকটি বরজ (বাগান) থেকে ৯-১০ বছর পর্যন্ত পান তোলা যায়। চলতি বছর অনুকূল আবহাওয়া থাকায় পানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এবার প্রতি হেক্টরে প্রায় ১৪ হাজার বিড়া পান উৎপাদন হয়েছে।

পড়তে পারেন: তীব্র শীতে রবি ফসলের যত্নে করণীয়

চাষিরা জানান, পান চাষ একটি লাভজনক ফসল। পান চাষাবাদে খরচের তুলনায় লাভ বেশি। এখানকার উৎপাদিত পান সুস্বাদু হওয়ায় তা জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। পানের বাজারদরও ভালো আছে। এখানে প্রতি বিড়া (৮০ পিস) পান এখন প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১৭০ টাকায়।

পানের সবচেয়ে বড় পাইকারি হাট বসে রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজারে। সপ্তাহে দুদিন এ হাটে লাখ লাখ টাকার পান বিকিকিনি হয়। এছাড়াও পানের পাইকারি বাজার রয়েছে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, রায়পুরের নতুন বাজার, উদমারা সর্দার স্টেশন ও ক্যাম্পেরহাট বাজার।

লক্ষ্মীপুর সদরের চররুহিতা গ্রামের পানচাষি বাবুল মজুমদার জানান, তিনি ২০ শতক জমিতে পানের আবাদ করেছেন। উৎপাদন ভালো হওয়ায় বেশ লাভবান হচ্ছেন। ভবিষ্যতে পানের বরজ আরও বাড়ানোর কথা জানান তিনি।

রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ এলাকার পানচাষি জয়নাল হোসেন জানান, তার এক একর জমিতে পানবরজ রয়েছে। তিন বছরে এ বরজ তৈরি ও আবাদ করতে তার সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। তিনি এ পর্যন্ত ১০ লাখ টাকার বেশি পান বিক্রি করেছেন। এ পান চাষাবাদের মাধ্যমেই তিনি আর্থিক সচ্ছলতা পেয়েছেন। পুঁজির তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় পান চাষ করছেন বলেও জানান তিনি।

রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ এলাকার পানচাষি বিপ্লব দাশ জানান, এ বছর পানে পোকামাকড় ও রোগবালাই তেমন হয়নি। পাঁচ গণ্ডা জমিতে তার পানবরজ রয়েছে। এবার বরজে তেমন কোনো রোগ না হওয়ায় উৎপাদন ভালো হয়েছে।

রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ ও ক্যাম্পেরহাট এলাকার মতিলাল, নারায়ণ ও শম্ভুসহ কয়েকজন পানচাষি জানান, বরজে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে সঠিক সময়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতা পান না তারা। এছাড়া সহজ শর্তে সরকারি ঋণ ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় কীটনাশকের সহায়তা পেলে পান চাষাবাদে আরও বেশি লাভবান হতে পারতেন বলে জানান তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক বেলাল হোসেন খান জানান, এবার উৎপাদিত পান থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় হবে। পান চাষে কৃষককে কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে পানচাষিদের সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় আনা গেলে কৃষক পান চাষে আরও ভালো করতেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ