পোল্ট্রি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: খামারে শীতকালে হাঁস-মুরগিকে রোগ বালাই হতে সুরক্ষিত রাখার জন্য কি কি করনীয় রয়েছে তা জানতে চেয়েছেন খামারিরা। শীতকালে শেডের তাপমাত্রা কীরুপ হবে তা জানা একান্ত জরুরি। শীতে পোল্ট্রি খামারিদের করণীয় (পর্ব ১)

মূলত, শীতকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে ডিম পাড়া মুরগীর ডিম উৎপাদনের হার কমে যায়। সেইসাথে কতগুলো রোগের কারণে বাচ্চা মুরগিও মারা যেতে পারে। এ ছাড়া শীতের সময় ডিম দেয়া মুরগীর শরীরে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য সরবরাহকৃত খাদ্য হতে প্রাপ্ত এনার্জি বেশি ব্যয় করে থাকে।

এছাড়া, শীতের সময় ঠাণ্ডার কারণে বিভিন্ন বয়সের মুরগির পীড়ন বেশি হয়। খামারে হাঁস-মুরগির অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য শীতকালে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে হবে এবং অবস্থাভেদে বিভিন্ন শেডের তাপমাত্রা ৬০০-৭০০ ফারেনহাইট বজায় রাখতে হয়।

শীতে পোল্ট্রি খামারিদের জন্য করণীয় কিছু বিষয় আলোচনা করা হলো:

১. শীতের প্রারম্ভেই পোলট্রি শেডের যাবতীয় মেরামত কাজ করতে হবে। যেমন ঘরের জানলায় চটের পর্দা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে মুরগিকে রক্ষা করা যায়।

২. হাঁস-মুরগি পালনের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পোলট্রি শেডের/ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য লিটার ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। যদি পুরা ৩ লিটার থাকে তাহলে পরিবর্তন করে দেয়া ভালো। লিটারের উচ্চতা বাড়িয়ে ৭-৮ ইঞ্চি পুর করে দিতে হবে।

শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকার কারণে পোলট্রি শেডে ধুলোবালি বেশি পরিমাণে জমা হয়। লিটারের আর্দ্রতা শতকরা ২৫% ভাগের চেয়ে নিচে নেমে গেলে লিটার থেকে ধুলা উড়তে থাকে; এতে শেডের পাখির ধকল বেড়ে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সর্বোপরি শেডে সার্বিক তাপমাত্রা রক্ষা করা।

আরোও পড়ুন: শীতকালে লেয়ার বাচ্চার ব্রুডিংয়ে সমস্যা, সতর্কতা ও করণীয়- পর্ব ২

শীতকালে লেয়ার গ্রোয়ার পালনে সতর্কতা ও নিয়মাবলী; পর্ব ১

৩. শীতকালে দিনের সময় কাল কম থাকায় সূর্যের স্বাভাবিক আলো প্রাপ্তির সময় কম হয়। বিশেষ করে ডিম পাড়া মুরগীর ক্ষেত্রে দিনের আলো হিসাব করে রাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. পোলট্রি শেডের আশপাশে ডালপালাযুক্ত গাছ থাকলে শীতকালে তা কেটে/ছেঁটে ফেলাই ভালো।

৫. পোলট্রি ব্যবস্থাপনায় লেয়ার/ব্রয়লার পালনের ক্ষেত্রে খাবার নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক মান অনুযায়ী সুষম খাদ্যের ফর্মুলা তৈরি করে সরবরাহ করতে হবে। অথবা কোনো উন্নত খাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানির খাদ্য খাওয়ানো যেতে পারে। শীতকালে মুরগির দেহে অধিক শক্তি যোগানোর জন্য উপাদানে পরিবর্তন আনতে হবে। খাদ্যে এনার্জির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে এবং রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে। লিটার পুরাতন হলে গুণগত মান ঠিক আছে কিনা সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

৬. খামারের বিভিন্ন বয়সের ও ভিন্ন ভিন্ন জাতের মুরগিকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে ভালো কৌশল হলো “অল ইন আউট” বা “একত্র প্রবেশ একত্রে বাহির” পদ্ধতি অনুসরণ করা।

৭. খামারের প্রতিটি মুরগির জন্য পরিমাণমতো জায়গা রাখতে হবে এবং কম জায়গায় যেন বেশি মুরগি না থাকে সেদিকে খামারীদের লক্ষ রাখতে হবে।

৮. মুরগির ঘরে শীতের মুক্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে চারটি বিষয় বিশেষভাবে বিবেচনায় আনতে হবে।

শীতে পোল্ট্রি খামারিদের জন্য করণীয় বিষয়ে লিখেছেন বিমল চন্দ্র সরকার সাবেক সহকারী তথ্য অফিসার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর, আঞ্চলিক অফিস, বরিশাল।আলোচনা সুবিধার্থে শীতে পোল্ট্রি খামারিদের করণীয় (পর্ব ১) আজ তুলে ধরা হলো। আগামী পর্বে থাকছে শীতে পোল্ট্রি খামারিদের করণীয় (পর্ব ২)। লেখাটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ