মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: আর মাত্র দু’দিন পর পবিত্র ঈদুল আযহা। মুসলিম বিশে^র বৃহৎ এই ঈদকে ঘিরে বাংলাদেশেও চলছে উৎসবের আমেজে পশু কেনাবেচা। সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। এবারে জেলার বিভিন্ন পশুর হাটে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারীরা কোরবানির পশু নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। হাটে বড় গরুর দিকে নজর বাঁকা হলেও শেষ সময়ে কাটতি বেড়েছে মাঝারি আকারের গরুর।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার প্রতিটি উপজেলায় বসেছে কোরবানির পশুর হাট। এসব উপজেলায় কৃষক পর্যায়ের গরু বেশিরভাগই বিক্রি হয়েছে। এছাড়া খামারি পর্যায়ে গরু বিক্রি করে শেষ করেছেন খামারিরা। কোরবানির আগেই চাহিদা বাড়তে থাকে মাঝারি আকারের গরুর। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে গরু বেচাকেনা শুরু হলেও মাঝখানে কেনাকাটা কমে গিয়েছিল। তারপর শেষ সময়ে বেড়েছে বিক্রি।

পড়তে পারেন: ফ্রিজ ছাড়াই গরুর মাংস দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায়

গত ২৫ দিনের রাজশাহীর বিভিন্ন হাটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হাটে গরুর আমদানি গত বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তবে স্থানীয় বিক্রেতা ও ক্রেতারা বেশ ভালো দামেই গরু কেনা-বেচা করতে পেরেছেন। শেষ ১০ দিনে গরুর চাহিদা ও আমদানি দুটোই বেড়েছে। বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে মাঝারি আকারের গরু। সাড়ে তিন মণ থেকে সাড়ে ৪ মণের গরু হাটে চাহিদার শীর্ষে দেখা গেছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলায় সিটি গরু ছাগলের হাট বসে রবিবার ও বুধবার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গরুর আমদানির সাথে ক্রেতার সামঞ্জস্য নেই। তুলনামূলক দেশের বিভিন্ন স্থানের ক্রেতার সমারোহ ঘটেনি। প্রতিমণ গরু বিক্রি হয়েছে ২৬ থেকে ২৮ হাজার টাকা মণ হিসেবে।

সোমবার ও বৃহস্পতিবার হাট বসে নওহাটা গরু ছাগলের হাট। এই হাটের অবস্থাও প্রায় একই। আমদানির তুলনায় ক্রেতা কম। চাহিদা বেশি মাঝারি আকারের গরুর। গাভীর চাহিদা বেশি এই হাটে। স্থানীয় ক্রেতারা ভিড় করেছেন গরু কিনতে। কোরবানির জন্য কয়েকজনে একটা গরু কিনতেই এসব গরু পছন্দ তাদের।

পড়তে পারেন: ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে দেশী গরু, চাহিদার শীর্ষে মাঝারি

সপ্তাহে শুক্রবার ও সোমবার হাট বসে কাটাখালী গরু ছাগলের হাট। এই হাটে সপ্তাহের শুরুর দিকে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। হাটে গরুর আমদানির সাথে দামের একটা পার্থক্য দেখা গেছে। হাটে আনুমানিক ওজন হিসেবে গরুর দাম প্রতিমণ ২২ হাজার থেকে ২৭ হাজারের মধ্যে ছিল। আগামীকাল শুক্রবার বসবে এই হাট। সর্বশেষ হাট হিসেবে দাম বাড়বে বলেও জানিয়েছেন সেখানকার হাট ইজারদার।

হাটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের চেয়ে দাম বেশ চড়া। এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষই রয়েছে বিপাকে। সংশয় ও হতাশা কাজ করছে তাদের মধ্যে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরু খাবারের দাম বৃদ্ধি ও লালন-পালনের খরচ বেড়ে যাওয়ায়, দামও বেড়েছে। আর ক্রেতারা এবার সংশয়ে রয়েছেন– এতো চড়া দামে কোরবানির পশু কেনার সক্ষমতা নিয়ে।

এখন প্রতিটি হাটেই কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে। হাটগুলোতে বড়-ছোট, মাঝারি ও ছোট সাইজের প্রচুর গরু উঠলেও দাম বেশ চড়া। গরু কিনতে গিয়ে দর-দাম নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ থেকে ১৫ ভাগ। তবে দেশী গরু এবার বাজারে বেশি দেখা যাচ্ছে। গরুর খাবারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি লালন-পালন খরচ বেড়ে যাওয়ায় গরুর দাম গত বছরের তুলনায় এবার বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

পড়তে পারেন: কোরবানির ঈদে রান্না করুন গরুর মাংসের শাহী রেজালা

আর সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, হাটে গরুর দাম বেশি হওয়ায় ঈদে কোরবানি নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, ঈদ যতো ঘনিয়ে আসছে, দাম আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে গরু কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেকেই। এছাড়া অনেকে গরু কিনে বাড়িতে নিয়ে শঙ্কামুক্তও হয়েছে।

রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট সিটিহাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, ঈদের আগে সাপ্তাহিক শেষ হাট হিসেবে গরুর আমদানি চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এবার গরুর চাহিদা আছে। বন্যার কারণে সিলেট – চট্টগ্রাম থেকে ব্যাপারীরা তেমন না আসলেও ঢাকার পাইকাররা এসেছেন। স্থানীয় পর্যায়ের কিছু ক্রেতা দেখেশুনে ছোট গরু কিনছেন। হাট বেশ ভালো হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি। এরমধ্যে ২০ হাজার ২৫২টি বলদ গরু রয়েছে। এছাড়া ১৬ হাজার ৬৭৩ মহিষ, ষাঁড় গরু ১৬ লক্ষ ৪ হাজার ৬১৯, ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ছাগল এবং ২২ লাখ ৬ ভেড়া ৫৪৯। এসব পশুর ২০ শতাংশ অনলাইনে আর বাঁকি ৮০ শতাংশ গরু প্রচলিত হাটে বিক্রি হবে।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন জানান, এবার রাজশাহী জেলায় ১০ হাজার ৭৩৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। জেলায় চাহিদা ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি পশু। এরমধ্যে ৭৩ হাজার ৮৬৩টি ষাঁড় ও ২৪ হাজার ৪৬টি গাভী রয়েছে। অন্যান্য ছাগল ভেড়া ও বলদ। পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থেকেছে।

সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ভারত থেকে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধ রাখার কারণে দাম ভালো পেয়েছেন। ভারত থেকে কোন পশু আমদানি করা হয়নি। কৃষক ও খামারিরা যাতে কোরবানির পশুর ন্যায্য দাম পান সে জন্য রাজশাহী- চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজর রেখেছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ