সফলভাবে গাভীর কৃত্রিম প্রজননের

প্রাণি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সফলভাবে গাভীর কৃত্রিম প্রজননের সময়ে যেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. অসীত কুমার পাল।

বাংলাদেশে বর্তমানে গরুর খামারীদের কাছে কৃত্রিম প্রজনন অত্যন্ত জনপ্রিয় কৌশল জাত উন্নয়নের জন্য। তাই সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বহুজাতিক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম প্রজনন টেক্নিশিয়ান প্রশিক্ষন দেওয়ার কাজ করছে।

এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশিক্ষন দেওয়ার সাথে সাথে ষাঁড়ের সিমেনও প্রক্রিয়াজাত করে থাকে। কিন্তু কৃত্রিম প্রজননের সফল্য অনেকাংশই নির্ভর করে সিমেন স্ট্র থোয়িং করা ও কৃত্রিম প্রজনন পাইপে সঠিকভাবে লোডিং করার উপর।



তাই সফলভাবে কৃত্রিম প্রজনন করার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোর উপর আরোকপাত করা যেতে পারে।

থোয়িং পাত্র: সিমেন স্ট্র থোয়িং করার সময় মূলত গরম পানি নেওয়া জন্য কিডনি ট্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  কিন্তু এই ধরনের ট্রে ব্যবহার করার ফলে কিছু শুক্রানু অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারনে দূর্বল বা মারা যেতে পারে।

কারন সিমেন স্ট্র থোয়িং করার সময় যে পানি ব্যবহার করা হয় তা মূলত থোয়িং তাপমাত্রার (৩৭.৫-৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) চেয়ে বেশি থাকে যা ঠান্ডা পানি যুক্ত করে থোয়িং তাপমাত্রায় আনা হয়।

কিন্তু একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, কিডনি ট্রে টি কিন্তু প্রাথমিকভাবে নেওয়া গরম পানির তাপমাত্রা শোষন করে এবং তা পরবর্তীতে ঠান্ডা পানি যুক্ত করার পরেও থোয়িং তাপমাত্রার চেয়ে বেশি থাকে।

ফলে যখন সিমেন স্ট্রটি ঐ পাত্রে রাখা হয় তখন তা ঐ পাত্রের তলায় ডুবে যায় এর তলা স্পর্শ করে থাকে, তার কারনে সিমেন স্ট্রটি ঐ পাত্রের বেশি তাপমাত্রা শোষন করে যা সিমেন স্ট্রয়ের মধ্যে থাকা শুক্রানোগুলোকে আক্রান্ত করে এবং যার ফলে কিছু শুক্রানো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তাই যদি আমরা কিডনি ট্রে বা এই রকম প্রশস্ত সমতল কোন পাত্র ব্যবহার না করে যদি ৮-১০ ইঞ্চি লম্বা প্লাস্টিক পাত্র (প্লাস্টিক মগ, গবলেট অথবা মিনারেল পানির বোতলের মাথার সরু অংশ কেটে ব্যবহার করতে পারি) ব্যবহার করি তাহলে সিমেন স্ট্র এর শুধুমাত্র ল্যাবোরেটরি ও ম্যানুফেক্সারিং প্রান্ত পাত্রের সাথে স্পর্শ করে থাকবে আর এই দুইপ্রান্তে কোন শুক্রনো নেই।

এটি ব্যবহার করার ফলে থোয়িং তাপমাত্রার পানি সমানভাবে সিমেন স্ট্র এর চারপাশে থাকবে ও স্ট্রর মধ্যের শুক্রানোগুলো ভালভাবে উদ্বিপ্ত করবে।

সিমেন স্ট্রয়ের প্রান্ত কাটা: সিমেন স্ট্র থোয়িং এর পরে ধাপ হচ্ছে তা কৃত্রিম প্রজনন পাইপে লোডিং করা ও তার ল্যাবোরেটরি প্রান্ত কাটা। ল্যাবোরেটরি প্রান্ত কাটার জন্য সিজোর বা কাঁচি ব্যবহার করা হয়।

কিন্তু যখন কাঁচি দিয়ে কোন সরু প্লাস্টিকের পাইপ কাটা হয় তখন পাইপের সরু নলটির মুখ জোড়া লেগে যায়। যার ফলে যখন সিমেন স্ট্রটি কাঁচি দিয়ে কাটা হবে তখন স্ট্রটির সরু পাইপের মুখও জোড়া লেগে যাবে এবং পুস করার সময় সিমেন কৃত্রিম প্রজনন সিঁথের সাথে লেঁপটে লেগে যাবে।

তাই কাঁচি দিয়ে কাটার পর সিমেন স্ট্রটির মুখ হাত দিয়ে সোজা করে দিলে সিমেন এ আই সিঁথের নলের সাথে লেঁপটে লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে এবং সব সিমেন জরাযুতে চলে যাবে।

গ্লোভসে গোবর ব্যবহার: কৃত্রিম প্রজনন করার সময় পায়ূপথে হাত দিতে হয়। এই সময় এ আই গ্লোভস্ আমরা লুব্রিকেশন করার জন্য সাধারনত লুব্রিকেশন জেল এর পরিবর্তে সাবান ব্যবহার করে থাকি।

কারন লুব্রিকেশন জেল এর দাম বেশি এবং তা সব জায়গায় পাওয়াও যায় না। কিন্তু সাবান ব্যবহার করার ফলে গাভীর পায়ূপথ ও মলাশয় বা রেকটামে জালাতন করে এবং তার ফলে হাত বের করার পর গাভী অনবরত কুতোনি বা স্ট্রেনিং করতে থাকে ও অস্বস্তি অনুভব করে।

কোন কোন ক্ষেত্রে পায়ূপথ দিয়ে রক্তও আসতে দেখা যায়। বকনার ক্ষেত্রে তা বেশি লক্ষ্য করা যায়। খামারিও তা দেখে আতঙ্কিত হয়।

তাই সাবান বা জেল ব্যবহার না করে যদি আমরা গ্লোভস্ গরুর গোবর ব্যবহার করি তাহলে এই সমস্যাগুলো থেকে আমরা সহজেই উত্তোরণ পাব।

কারন এটি ব্যবহার করার ফলে গ্লোভস্ কিছুটা পিচ্ছিল হবে ও কোনরুপ জালাতনও করে না। তবে এই ক্ষেত্রে গ্লোভস্ গবর লাগানোর পূর্বে পানিতে ডুবিয়ে নিলে গবর ভরিয়ে নিতে সহজ হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, যদি আমরা উপরিক্ত বিষয়গুলো আমাদের কৌশলের মধ্যে আন্তিকরন করি তাহলে কৃত্রিম প্রজনন করার ক্ষেত্রে আরো সফলকাম হব।

সফলভাবে গাভীর কৃত্রিম প্রজননের সময়ে যেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত লেখাটির লেখক; পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন, সার্জারি এন্ড অবস্টেট্রিক্স বিভাগ, এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ এর সহযোগী অধ্যাপক ড. অসীত কুমার পাল।

আরও পড়ুন: প্রাণীর প্রজননে একাধিক সেবা মিলবে পবিপ্রবি শিক্ষকের নতুন উদ্ভাবিত ডিভাইসে