ভারতের চণ্ডীগড়ের একটি পাইকারি বাজারে মজুদ করে রাখা চাল ছবি: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি অর্থবছরে বিশ্বজুড়ে চাল সরবরাহ সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ভারত। দেশটির রফতানিকারকরা বলছেন, ৪০ থেকে ৫০ লাখ টন কমতে পারে চাল রফতানি।

দ্য হিন্দু প্রকাশিত তথ্যে বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশটি সম্প্রতি ভাঙা চাল রফতানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি সেদ্ধ চাল বাদে সব ধরনের নন-বাসমতি চালের ওপর আরোপ করা হয়েছে ২০ শতাংশ রফতানি শুল্ক। দেশটিতে চাল উৎপাদন ব্যাপক কমে যাওয়ায় সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে দাম। এ পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেই রফতানি বন্ধ এবং রফতানি শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সরকারি তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (এপ্রিল-আগস্ট) ভারত ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল রফতানি করেছে। গত বছরের একই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ৮৩ লাখ ৬০ হাজার টন। অর্থাৎ বছরের এখন পর্যন্ত দেশটির রফতানি বেশ ভালো আকারের প্রবৃদ্ধি দেখেছে। কিন্তু নীতিগত পরিবর্তনের কারণে আগামী মাসগুলোয় চাল রফতানি ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হবে।

পড়তে পারেন: রফতানি বন্ধে শুল্ক আরোপ ভারতের, আটকে আছে চাল

আন্তর্জাতিক চাল বাণিজ্যে ৪০ শতাংশ বাজার হিস্যাই ভারতের। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটি সব মিলিয়ে ২ কোটি ১২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল রফতানি করে। এর আগের অর্থবছর রফতানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার টন। কভিড-১৯ মহামারী শুরুর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটি রফতানি করেছিল ৯৫ লাখ ১০ হাজার টন। অর্থাৎ গত অর্থবছর চাল রফতানি মহামারীপূর্ব পর্যায় ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ বছর পণ্যটি রফতানিতে মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশটি।

অল ইন্ডিয়া রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিজয় সেতিয়া বলেন, ভাঙা চাল রফতানি বন্ধ ও নতুন করে ২০ শতাংশ রফতানি শুল্ক আরোপ করায় চলতি অর্থবছর চাল রফতানি কমে ১ কোটি ৬০ লাখ থেকে ১ কোটি ৭০ লাখ টনে নামতে পারে।

পড়তে পারেন: সর্বোচ্চে উঠেছে ভারতীয় চালের দাম

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ভারত প্রতি টন নন-বাসমতি চাল ৩৮০-৪০০ ডলার মূল্যে রফতানি করছে। অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় কম দামেই এসব চাল রফতানি করা হচ্ছে। সরকার নীতিগত সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনায় অন্য রফতানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা আরো বাড়বে।

এদিকে সম্প্রতি ভারতের খাদ্য সচিব শুধাংশু পান্ডে ভাঙা চাল রফতানি বন্ধের কারণ করেছেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ভাঙা চাল রফতানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এছাড়া পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত ভাঙা চালের সরবরাহও নেই। ইথানল ব্লেন্ডিং প্রোগ্রামেও শস্যটির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মূলত এসব কারণেই রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি।

পড়তে পারেন: ১৫ টাকা কেজি মিলছে চাল

এদিকে চুক্তি করা দামের ওপর সরকার কর্তৃক আরোপিত নতুন রফতানি শুল্ক পরিশোধে অনাগ্রহ দেখা গিয়েছে ক্রেতাদের মাঝে। ফলে নতুন শুল্কহার নির্ধারণের পর দেশটির বন্দরগুলোয় চাল লোডিং বন্ধ হয়ে যায়। ওইদিন বিভিন্ন বন্দরে আটকা পড়ে প্রায় ১০ লাখ টন চাল।

ভারতের শীর্ষ রফতানিকারক সত্যম বালাজির নির্বাহী পরিচালক হিমাংশু আগারওয়াল বলেন, চাল বাণিজ্যে মার্জিন অত্যন্ত কম। ফলে রফতানিকারকরা ২০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে সক্ষম হবে না।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ