রনি (বরগুনা) প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বেতাগীর দক্ষিন হোসনাবাদ গ্রামের সুকেজ চন্দ্রের মাল্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সুকেজ ভারতে কলকাতায় গিয়ে মাল্টা বাগান দেখে নিজে মাল্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্যে ৫০ শতাংশ জমিতে ২০০ মালটা চারা রোপন করেছেন। তাতেই আশা করছেন লাভবান হওয়ার।

সুকেজ চন্দ্র বলেন, আমি ভারত থেকে মাল্টা চাষ দেখে এসে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি চারা রোপন করি । দুটি গাছে মাল্টা ভালো হয়েছে । এক একটি গাছে ১০০ থেকে ১২০টি মাল্টা হয়েছে। তার পরে আমি স্বরূপকাঠির সন্ধ্যা নদীর তীর থেকে মাল্টা চারা সংগ্রহ করে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৫০ শতাংশ জমিতে ২০০ মালটা যারা রোপন করি।

মাল্টা প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মে। তবে ছায়া পড়ে না এমন সুনিষ্কাশিত উর্বর, মধ্যম থেকে হালকা দো-আঁশ মাটি চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। মাটির অম্লত্ব ৫.৫ থেকে ৬.৫ হওয়া উত্তম। মাল্টাগাছ লবণ এবং উচ্চ তাপমাত্রা সংবেদনশীল। জলাবদ্ধতার সহ্যক্ষমতা নেই।

পড়তে পারেন: মাল্টা চাষে সফল সৌদি ফেরত হাবিবুর

দেশি বিদেশি বিভিন্ন জাত রয়েছে। তবে এদেশে চাষ উপযোগী জাতের মধ্যে বারি মাল্টা-১ অন্যতম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এ জাতটি উচ্চফলনশীল। গাছের ডালপালা ছড়ানো এবং ঝোপানো থাকে। মধ্য ফাল্গুন (মার্চ) থেকে মধ্য চৈত্রে (এপ্রিল) ফুল আসে। ফল পাকে কার্তিক মাসে। ফল দেখতে সবুজ। তবে পরিপক্ব অবস্থায় কিছুদিন রেখে দিলে কমলা রঙ ধারণ করে।

ফলের নিচে ছোট গোলাকার চিহ্ন থাকে। প্রতিটির ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম। ফলের শাসের রঙ হালকা হলুদ। গাছপ্রতি ফল ধরে ৩০০ থেকে ৪০০। সে হিসেবে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন প্রায় ২০ টন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। নাম এফটিআইপি বাউ মাল্টা-১। প্রতিটি ফলের ওজন ১৭০ হতে ২০০ গ্রাম। মিষ্টতা ১৭-২১ টি.এস.এস.। গাছ বামনাকৃতি। বিচি কম হয়। ফল রসালো ও মিষ্টি। মার্চএপ্রিল মাসে ফুল আসে। সেপ্টেম্বরÑঅক্টোবরে ফল পাকে।

পড়তে পারেন: গাছে গাছে ঝুলছে ১০ কোটি টাকার মাল্টা

বীজ ও অঙ্গজ উভয় পদ্ধতিতে মাল্টার বংশবিস্তার হয়। তবে মাতৃগুণ বজায় রাখা, দ্রুত ফল ধরা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং অধিক ফলন পেতে অঙ্গজ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। জোড় কলম (গ্রাফটিং) ও চোখ কলমের (বাডিং) মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা যায়। জোড় কলমের জন্য রুটস্টক (আদি জোড়) নির্বাচন করতে হয়। এক্ষেত্রে বাতাবি লেবুর চারা ব্যবহার উত্তম।

এ বছর সামান্য কিছু মালটা পেয়েছি আগামী বছর সকল গাছে মাল্টা ধরলে ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করে নিজে স্বাবলম্বী হতে পারব।

সুকেজ চন্দ্র আরো বলেন, আমার বাগানে বারী মাল্টা -১ রয়েছে আমি যখন ভারতে ছিলাম তখন দেখেছি এই মাল্টাকে হিন্দিতে ‘সান্তারা’ এবং অসমীয়া ভাষায় একে ‘সুমথিৰা টেঙা’ বলে।

বেতাগী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ ইছা বলেন, এ দেশের আবহাওয়ায় বারী -১ জাতের মাল্টা খুবই উপযোগী, খেতেও খুব সুস্বাদু। এ জাতের কমলা ও মাল্টা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ