স্বাধীনতা পুরস্কার পেলো বিনা

ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলো বিনা (বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট)।

সোমবার (২৫ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) বিনা মহাপরিচালক বিরেশ কুমার গোস্বামীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে সরকার।

‘কৃষি ক্ষেত্রে টেকসই উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করে আসছে বিনা। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের উন্নত গুণসম্পন্ন জাত উদ্ভাবন, কীট ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা এবং কৃষিতাত্ত্বিক, মৃত্তিকা উদ্ভিদ ও পানি সম্পর্কিত গবেষণা করে দেশের জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা মোকাবিলায় বিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।

এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ১৭টি ফসলের একশ চারটি জাত উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তিও বেশ জনপ্রিয়। নাইট্রোজেন সারের বিকল্প হিসেবে আটটি শিম জাতীয় ফসলের আটটি জীবাণু সার উদ্ভাবন করেছেন বিনার বিজ্ঞানীরা। বিনা উদ্ভাবিত জীবাণু সার ব্যবহারের ফলে ডাল ও তেলজাতীয় ফসলের ফলন বেড়েছে। এতে কেমিক্যাল কম লাগে, যে কারণে মাটির স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। একইসঙ্গে রক্ষা পায় মাটির উর্বরতা।

নতুন জাত বিনা-৭ ধান ১১০ দিনে কাটা যায় এবং এর ফসল ওঠে অক্টোবরেই। ফলে এই জাতটি ওই অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এতে ওই অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আমাদের এই জাতের ধান চাষের ফলে তারা কাজ পেল, ঘরে খাবার পেল এবং তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন তৈরি হলো। সেই সঙ্গে কেটে যায় মঙ্গার সেই প্রভাবও।

এদিকে, বিনা উদ্ভাবিত বেশকিছু ধানের জাত আউশ ও আমন— উভয় মৌসুমেই আবাদ করা যায়। ‘ইরাটম ২৪ সম্পর্কে বিনার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এটি মধ্যম স্বল্প জীবনকালের জাত। এর জীবনকাল বোরো মৌসুমে ১৪০ থেকে ১৫০ দিন।

আর আউশ মৌসুমে ১২৫ থেকে ১৩০ দিন। বোরোতে প্রতি হেক্টরে এর গড় ফলন ৬.৫ টন, আউশে ৩.৫ টন। এছাড়া বিনা ধান-১৪ উচ্চ তাপমাত্রা সহিষ্ণু বোরো ধানের জাত। হেক্টর প্রতি এর ফলন প্রায় ৭ টন। আবার বিনা ধান-১৯ খরা সহিষ্ণু নেরিকো-১০ জাত থেকে উদ্ভাবিত। এই জাতটিও আউশ ও আমন মৌসুমের চাষ উপযোগী। এর জীবনকাল মাত্র ৯০ থেকে ১০০ দিন।

এটি বপন ও রোপণ— দু’ভাবেই চাষ করা যায়। তবে রোপণেই এর ফলন ভালো হয়। জাতটি বৃষ্টি-নির্ভর হিসেবেও চাষযোগ্য। খুব বেশি খরা হলে এক থেকে দু’বার সেচ দিলেই চলে। আউশ মৌসুমে এর গড় ফলন ৩ থেকে ৫ টন। আর আমন মৌসুমে ৫ থেকে সাড়ে ৫ টন। এর চাল সরু এবং খেতে সুস্বাদু। নানা গুণসম্পন্ন ধানের এমন আরও বেশকিছু জাত রয়েছে বিনার।

গমের মধ্যে বিনা উদ্ভাবিত জাতটির নাম বিনা গম-১। এর জীবনকাল ১০৫ থেকে ১১০ দিন। লবণাক্ত মাটিতে হেক্টরে এর ফলন ২.২ টন থেকে ৩.৫ টন, অলবণাক্ত মাটিতে ৩.২ থেকে ৪.২ টন। ডাল ফসলের মধ্যে মসুরের জাত রয়েছে ছয়টি, ছোলার পাঁচটি ও মুগ চারটি। একইভাবে বিনার বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন তৈলবীজ, মসলা, সবজি ফসল ও ফলের নতুন নতুন জাত।

বিনা সরিষা-৯ জাতটি অল্টারনারিয়া ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী। আর এটিই সরিষার অন্যতম রোগ। এ জাতীয় সরিষার গড় ফলন ১.৫ থেকে ২ টন।

বিনা মরিচ-১-এর হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৩৫ টন। মরিচের দৈর্ঘ্য ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি। মরিচটি ক্যাপসিকাম হিসেবেও ব্যবহারযোগ্য। বিনা রসুন-৯-এর ফলন হেক্টরে ১২ থেকে ১৪ টন, যেখানে প্রচলিত অন্যান্য জাতের ফলন ৬ থেকে ৭ টন। অর্থাৎ বিনা উদ্ভাবিত এ রসুনে ফলন প্রায় দ্বিগুণ।

এছাড়া বিনা চীনা বাদাম-৪ বেশ জনপ্রিয়। শহরে ফেরিওয়ালারা যে বাদাম বিক্রি করেন, তার অধিকংশ এ জাতীয়। বিনা মুগ-৮ মাত্র ৬৪-৬৭ দিনে কেটে নেওয়া যায়। এই সময়ের মধ্যে ৮০ শতাংশ ডালই পোক্ত হয়ে যায়। হেক্টরে এর ফলন ২ টন। বিনা মুগ-৭ খেতেও অত্যন্ত সুস্বাদু বলে জানিয়েছেন তিনি।

এর বাইরেও বিনা লেবু-১ নামের একটি জাত থেকে সারাবছর লেবু পাওয়া যায়। প্রায় বীজশূন্য লেবুর জাত এটি। হেক্টরে এর গড় ফলন ২৪ থেকে ৩৫ টন। আর সবজি জাতীয় ফসলের মধ্যে রয়েছে টমেটোর একাধিক জাত, যার মধ্যে কোনো কোনোটি মাঠ পর্যায়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কৃষিতে এমন সব অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ স্বাধীনতা পুরস্কার পেলো বিনা।

আরও পড়ুন: গবেষণার মাধ্যমে মাটির মান চিহ্নিত করে ফসল উৎপাদনের তাগিদ