নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, হাওরের ধান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, কোন কোন বছর আগাম বন্যার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। এ ঝুঁকি কমাতে আমরা কাজ করছি। হাওরে ঝুঁকি কমাতে আগাম জাতের ধান বীজ দেবে সরকার।

এছাড়াও ১৫- ২০ দিন আগে পাকে এমন জাতের ধান চাষে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, শ্রমিক সংকটের কথা চিন্তা করে দ্রুততার সাথে ধান কাটার জন্য হাওরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার দেয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।

আজ রবিবার (২৫ এপ্রিল ২০২১) কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার সাদরের হাওরে ‘বোরো ধান কর্তন উৎসব’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। মিঠামইন উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। পরে কৃষিমন্ত্রী ধান কাটার উদ্বোধন করেন ও ধান কাটার যন্ত্র ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার’ কৃষকের মাঝে বিতরণ করেন।

কৃষকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, হাওরের বিস্তীর্ণ জমিতে বছরে মাত্র একটি ফসল বোরো ধান হয়। এ ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে উচ্চফলনশীল জাতের ধান যেমন ব্রিধান ৮৯, ৯২ উদ্ভাবন করেছে। আমরা আপনাদেরকে এসব উন্নত জাতের হাইব্রিড ধানের বীজ দিব। আপনার এগুলো চাষে এগিয়ে আসবেন।

তিনি আরও বলেন, হাওরে চাষযোগ্য জাতের ধানের জাত উদ্ভাবনের জন্য হাওরে ‘ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের’ আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলমান আছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষি ও কৃষকবান্ধব। আজকে দিগন্তবিস্তৃত হাওরে সোনার ধানের যে অপরূপ হাসি দেখা যাচ্ছে, দেশের কৃষকের মুখেও সে রকম অমলিন হাসি ধরে রাখতে চায় সরকার। সেজন্য, সরকার কৃষিকে লাভবান ও কৃষকের জীবনমান উন্নত করতে অত্যন্ত উদারভাবে কৃষকদেরকে সার,বীজ,সেচসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ কমানো ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত করতে ৭০% ভর্তুকিতে কম্বাইন হারভেস্টার, রিপারসহ বিভিন্ন যন্ত্র কৃষকদেরকে দিচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম, বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ, ব্রির মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর, বারির মহাপরিচালক ড. নাজিরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক মো: ছাইফুল আলম, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সুইট প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, এ বছর কিশোরগঞ্জ জেলায় বোরো আবাদ হয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরে এক লাখ দুই হাজার ৫০০ হেক্টর ও নন- হাওরে ৬৪ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত (২৪ এপ্রিল) হাওরের ৫৩% ও নন-হাওরের ৩৯% জমির ধান কর্তন হয়েছে। এবছর জেলায় সাত লাখ ১১ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

হাওরে ঝুঁকি কমাতে আগাম জাতের ধান বীজ দেবে সরকার শিরোনামে সংবাদের তথ্য এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো: কামরুল ইসলাম ভূইয়া।

ঈদের আগেই ১ লাখ কৃষক ৫ হাজার টাকা করে পাবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ঈদের আগেই ১ লাখ কৃষক ৫ হাজার টাকা করে পাবেন। সম্প্রতি ঝড় ও গরম বাতাসে ক্ষতির শিকার ১ লাখ কৃষককে এ নগদ সহায়তা দিতে যাচ্ছে সরকার।

ডাক বিভাগের মোবাইল সার্ভিস ‘নগদ’ এর মাধ্যমে এ সহায়তা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন সূত্র। খবর ঢাকা পোস্ট।

গত বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) অর্থ মন্ত্রণালয়ে সূত্র জানায়, ঈদুল-উল-ফিতরের আগে ৩৬ লাখ দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারকে সরবরাহ সহায়তা দিতে এরইমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ৯৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দরিদ্রদের নগদ সহায়তার জন্য অর্থ বিভাগের প্রস্তাবকে সম্মতি দিয়েছেন।

এ ৩৬ লাখ দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের মধ্যে এক লাখ কৃষকের পরিবারকেও রাখা হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল তীব্র ঝড় ও গরম বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের চিহ্নিত করে এ সহায়তা দেয়া হবে।

এর আগে গত বুধবার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গরিবদের গরিব থেকে বের করে নিয়ে আসা। সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পরিবারগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মোবাইল আর্থিক পরিষেবাদির মাধ্যমে প্রত্যেকে নগদ সহায়তা পাবেন।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঝড়ের সঙ্গে গরম বাতাসে মোট আক্রান্ত জমির পরিমাণ ৬৯ হাজার ৬২৬ হেক্টর। এর মধ্যে ১০ হাজার ৩০১ হেক্টর জমির ফসল গরম বাতাসে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এছাড়া আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৫৯ হাজার ৩২৬ হেক্টর জমির ফসলের। আংশিক ক্ষতির পরিমাণ সম্পূর্ণ ক্ষতিতে রূপান্তর করলে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ হাজার ২৮৯ হেক্টরে।

সব মিলিয়ে মোট ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ২১ হাজার ২৯২ হেক্টর। এসব জমিতে মোট ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ৯৯ হাজার ৯৬৮ মেট্রিক টন। যা টাকার অঙ্কে দাঁড়ায় ৩৩৪ কোটি ৪৪ দশমিক ৭৬৯ লাখ টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩ লাখ ১০ হাজার কৃষক।

কোভিড-১৯–এর ফলে কর্মহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষককে পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার সুপারিশ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ বাবদ ৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা (নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মুঠোফোন নম্বর) করছে। তালিকাটি চূড়ান্ত হলে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে।

আরও পড়ুন: জমিতে শোভা পাচ্ছে বেগুনি ধান

ঈদের আগেই ১ লাখ কৃষক ৫ হাজার টাকা করে পাবেন এমন সিদ্ধান্তে কৃষকেরা অনেকেই উপকৃত হবেন। প্রাকৃতিক যে কোন ক্ষতির শিকার হলে কৃষকের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ