মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাজশাহীর সিটি হাটে কদর দেখা গেছে বলদ গরুর। গতকাল বুধবার সাপ্তাহিক পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, আমদানির তুলনায় বিক্রি বেশ ভালো। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতারা কিনেছেন বলদ ও দেশীয় গরু। সেইসাথে চড়া দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে মাঝারি দেশাল ও সাদা বলদ গরু।

প্রতিবছর কোরবানিতে দেশে বিপুল পরিমাণ পশু আমদানি করা হতো। আমাদের দেশে ভারতীয় বলদ গরুর চাহিদা বেশ ভালো থাকায় আমদানির প্রতি একটা ঝোঁক থেকেই যেতো। কিন্তু বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ভারতীয় গরু আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাই হাটে ভারতীয় সাদা বলদ গরু দেখা যায়নি। খামারের উৎপাদিত গরু হাট জমিয়েছে। কোরবানির প্রয়োজন মিটিয়েছে। সবমিলিয়ে আমদানি করা গরুর জায়গা দখল করতে পেরেছে দেশীয় বলদ। দামের তুলনায়ও বেশ ভালো।

পড়তে পারেন: ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে দেশী গরু, চাহিদার শীর্ষে মাঝারি

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি। এরমধ্যে ২০ হাজার ২৫২টি বলদ গরু রয়েছে। এছাড়া ১৬ হাজার ৬৭৩ মহিষ, ষাঁড় গরু ১৬ লক্ষ ৪ হাজার ৬১৯, ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ছাগল এবং ২২ লাখ ৬ ভেড়া ৫৪৯। এসব পশুর ২০ শতাংশ অনলাইনে আর বাঁকি ৮০ শতাংশ গরু প্রচলিত হাটে বিক্রি হবে।

গতকাল সকাল থেকেই হাটে আসতে শুরু করে আশেপাশের বিভিন্ন জেলার গরু। রাজশাহী ছাড়াও নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পশু আমদানি করা হয়। দেশের চট্টগ্রাম, সিলেট, পটুয়াখালী, নোয়াখালী অঞ্চল থেকে বড় বড় পাইকাররা আসেন এই হাটে। একেকজন পাইকার কেনেন ৪০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত গরু-মহিষ।

সরেজমিনে হাটে গিয়ে দেখা যায়, লটের পর লট (কয়েকটি গরু একসাথে বাধার স্থান) সাদা বলদ গরু। আনাগোনা চলছে ক্রেতা-বিক্রেতার। মাঝেমাঝে উভয়ের মধ্যে চলছে বচসা। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১০ মণ ওজনের একটা গরু বিক্রি হচ্ছে ৩ লাখ ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত।

পড়তে পারেন: ভারতীয় গরু-মহিষে সয়লাব রাজশাহীর সিটি হাট

ঢাকার ব্যবসায়ী আব্দুল আজিম এসেছেন হাটে। গরুর দাম কেমন দেখছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, হাটে প্রতিমণ সাদা বলদ গরু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা মণ। গরুর ওজনের সাথে সামান্য কমবেশি করে কিনছেন তারা। ২০টি গরু কিনেছেন তিনি। ২৯ থেকে ৩১ হাজার টাকা মণ কিনেছেন এই ব্যবসায়ী।

অপরদিকে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকার হামিদ মিঞার সাথে। তিনি জানান, হাটে পাইকাররা ওজনে কমবেশির মাধ্যমে দামের কমবেশি করছেন। ব্যবসায়ীরা বেশি দক্ষ ও চৌকস হন। তারা যে গরু ১০ মণ ওজন তাঁক করে সেই গরু দাম করেন ৮ মণ হিসেবে। ফলে দুই মণ গরুর দাম ৬০ হাজার টাকা হাতে রেখে দামাদামি করেন। ফলে গ্রামের গেরস্ত মানুষরা তা টের পায় না। এতে দামে বিক্রেতা ধরা খেলেও লাভ হয় ক্রেতার।

আরেক বিক্রেতা সানি হোসেন এসেছেন শিবগঞ্জ থেকে। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, যে পরিমাণ গরু হাটে এসেছে সে তুলনায় ক্রেতা কম। ক্রেতা যদি না ভিড়ে তাহলে গরুর দাম তোলা সম্ভব হয় না। আমরা গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি সকাল থেকে। গরু বিক্রি হবে সন্ধ্যার কিছু আগে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন পাইকার ওজন হিসেবে দাম তুলে একটা আইডিয়া দিয়ে দেন। এতে আমাদের লাভ লস বুঝতে পারি।

পড়তে পারেন: ক্রেতাশূন্য রাজশাহীর মহিষের হাট

রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট সিটিহাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, ঈদের আগে সাপ্তাহিক শেষ হাট হিসেবে বলদ গরুর আমদানি চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এবার বলদ গরুর চাহিদা আছে। বন্যার কারণে সিলেট – চট্টগ্রাম থেকে ব্যাপারীরা তেমন না আসলেও ঢাকার পাইকাররা এসেছেন। স্থানীয় পর্যায়ের কিছু ক্রেতা দেখেশুনে ছোট গরু কিনছেন। হাট বেশ ভালো হয়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন জানান, পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থেকেছে। সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ভারত থেকে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধ রাখার কারণে দাম ভালো পেয়েছেন। ভারত থেকে কোন পশু আমদানি করা হয়নি। কৃষক ও খামারিরা যাতে কোরবানির পশুর ন্যায্য দাম পান সে জন্য রাজশাহী- চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজর রেখেছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ