মাহমুদুন্নবী, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: আধুনিকতার ছোয়ায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা। একটা সময় ছিলো প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে ধান রাখার জন্য থাকতো ধানের গোলা। এখন যেন স্মৃতি হয়ে রয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই ধানের গোলা। মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত থাকলেও অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতে নেই ধান মজুত করে রাখার বাঁশ- বেত, কাঁদা দিয়ে তৈরী গোলাঘর।

এক সময় ছিলো মেয়েকে বিয়ে দিতে গেলে ছেলে পক্ষের বাড়ি থেকে ধানের গোলার খবর নেওয়া হতো। যা এখন শুধুই রুপকথা। গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির তৈরী করা ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুস্থানে। গোলাঘরের মাথায় থাকতো টিনের তৈরী পিরামিড আকৃতির টাওয়ারের মতো, যা দেখা যেতো অনেক দূর থেকে।

পড়তে পারেন: হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সেচযন্ত্র “দোন”

এই গোলাঘর তৈরীর জন্য প্রয়োজন হতো দক্ষ কারিগরের। গ্রামঞ্চলে বাড়িতে বাঁশ, বাঁশ ফাঁটিয়ে কাবারি ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে প্রথমে গোলাঘরের আকৃতির কাঠামো তৈরী করা হতো। এরপর ভিতরে ও বাহিরে খর মিশানো কাঁদা মাটির আস্তরণ লাগানো হতো। গোলাঘরের প্রবেশ পথ করা হতো বেশ উপরে যেন চোর- ডাকাতেরা চুরি না করতে পারে। তবে ধান বের করার জন্য আবার অনেকে নিতে বিশেষ দরজা রাখতো।

পত্নীতলার প্রবীনব্যক্তিরা জানান, এখন তো আর ধান সংরক্ষণ করার জন্য বাঁশ- মাটির তৈরী ধানের গোলার প্রয়োজন হয়না। বলা যায় মাঠ থেকেই ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয় করে নিয়ে যায়। আমরা দেখেছি আমাদের বাপ- দাদারা মাঠ থেকে ধান কেটে, সেই ধান কাঠের তৈরী তকতা উপরে মাড়াই করে রোদে শুকিয়ে গোলা ঘরে সংরক্ষণ করতো। বড় বড় গোলাগুলোতে ৪০-৫০ মন আর ছোট গোলাতে ৩০-৩৫ মন করে ধান ধরতো।

পড়তে পারেন: হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী খয়ের শিল্প

কৃষক হামিদ মোল্লা বলেন, আমার দাদার আমলে ধানের গোলা ছিল। এখন ধান রাখার জন্য মাটির তৈরি কুঠি বা ধানের গোলা দরকার হয় না। গুদাম ঘরে বস্তায় ধান রেখে দেওয়া হয়। এখন কৃষকের ধান চলে যাচ্ছে একশ্রেণির ফড়িয়া ও আড়ত ব্যবসায়ীর দখলে।

তিনি বলেন, ইটবালু সিমেন্ট দিয়ে পাকা ইমারতের গুদাম ঘরে মজুত করে রাখা হচ্ছে হাজার হাজার টন ধান চাল। অনেক ক্ষুদ্র কৃষক বস্তা ও ব্যারেল ভর্তি করে রাখছে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধানচাল। আগামী প্রজন্মের কাছে গোলাঘর একটি স্মৃতিতে পরিণত হচ্ছে। আধুনিক গুদামঘর ধানচাল রাখার জায়গা দখল করছে। ফলে গোলাঘরের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ