অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এ্রগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশের প্রতিবেশি রাষ্ট ভারত চলতি বছর ২২ কোটি থেকে ২২ কোটি ৫০ লাখ কেজি পর্যন্ত চা রফতানি করার প্রত্যাশা করছে। দেশটির ইন্ডিয়ান টি এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইটিইএ) বরাতে এমনই খবর প্রকাশ করেছে দ্য প্রিন্ট।

রফতানি বাড়ার সম্ভাবনা মূলত পার্শ্ববর্তী দেশ শ্রীলংকায় চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় তৈরি হওয়া সরবরাহ শূন্যতা পূরণে ভারত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

গত বছর সর্বমোট ১৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা রফতানি করে ভারত। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫ হাজার ৩১১ কোটি ১৫ লাখ রুপি। ইন্ডিয়ান টি এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইটিইএ) চেয়ারম্যান আনশুমান কানোরিয়া বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক বাজারে ভারতীয় চায়ের রফতানি চাহিদা বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে শ্রীলংকার বর্তমান পরিস্থিতিতে এ চাহিদা বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

পড়তে পারেন: তুরস্কে বাড়ছে চা রফতানি

তিনি বলেন, চলতি বছরে ২২ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা রফতানি করার মাইলফলক অর্জন করতে পারব বলে আশা করছি আমরা। রফতানীকৃত এসব চায়ের বেশির ভাগই অর্থডক্স জাতের চা (সাধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করে যেসব চা উৎপাদন করা হয়)। এ জাতের চায়ের দাম গুণগত মানের ওপর নির্ভর করে প্রতি বছরই ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। এ সময় ভারতীয় চায়ের রফতানি চাহিদার কথা উল্লেখ করে কানোরিয়া জানান, দু-তিন বছরের মধ্যে ভারতীয় চা খাতের রফতানি মূল্য ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার প্রত্যাশা করছে খাতসংশ্লিষ্টরা।

ভারতের শীর্ষ পাঁচ চা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম এশিয়ান টি কোম্পানির পরিচালক মোহিত আগারওয়াল জানান, মার্চে শুরু হওয়া চলতি মৌসুমের প্রথম দিকের মাসগুলোয় কোম্পানির চা রফতানির পরিমাণ ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রফতানির উদ্দেশ্যে জাহাজীকরণে কনটেইনার পাওয়া অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। তবে একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের অর্থডক্স জাতের চায়ের চাহিদাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে চাহিদার বিপরীতে রফতানির ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে দেশটির চা রফতানিকারকদের।

পড়তে পারেন: গম রফতানিতে ইইউ’র চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠছে রাশিয়া

তিনি আরো জানান, আগামী বছরের মধ্যে ভারতীয় চা রফতানির পরিমাণ প্রাক-মহামারী স্তরে পৌঁছাবে। এ সময় ২৫ কোটি কেজি পর্যন্ত চা রফতানি প্রত্যাশা করছে ভারতের চা রফতানিকারকরা। আইটিইএর এ সদস্য জানান, বহির্বিশ্বে ভারতীয় চায়ের চাহিদা রফতানিকারকদের বেশ প্রলুব্ধ করছে। চলতি বছর এ চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে ২২ কোটি কেজি চা রফতানি করার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের। অভ্যন্তরীণ বাজারে কীটনাশক ব্যবহারসংক্রান্ত কিছু ইস্যু রয়েছে, তবে তা রফতানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা ভারতীয় চায়ের চালানগুলো পরীক্ষা করে কোনো প্রকার অভিযোগ করেনি।

আইটিইএ চেয়ারম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে প্রতিটি কীটনাশকের ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। তার সঙ্গে ল্যাবরেটরিতে করা পরীক্ষাগুলোর বেশ তফাৎ লক্ষ্য করা যায়। ফলাফলে প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ভুল দেখা যায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ল্যাবে পরীক্ষার ভুল ফলগুলোয় খাদ্যনিরাপত্তা ইস্যুর চেয়েও আইনি প্রত্যাখ্যানের প্রভাব বেশি দেখা যায়।

তিনি বলেন, রফতানিকারক দেশগুলো তাদের রফতানীকৃত চায়ের সব পরীক্ষা বেশ কঠোরভাবে সম্পন্ন করে। আমদানীকৃত দেশের নিয়মের সঙ্গে এসব খাদ্যপণ্যের নিরাপত্তা ও গুণগত মান সংগতিপূর্ণ কিনা তা যাচাই করতেই এসব পরীক্ষা করতে হয়। উৎপাদকরা ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এফএসএসএআই) নীতিমালা অনুসরণ করে চা উৎপাদনে বাধ্য। বহির্বিশ্বে ভারতীয় চায়ের বেশ সুনাম আছে, শুধু দশমিক ১ শতাংশ জাহাজীকরণ ইস্যু বাদে আর কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় না।

এগ্রিকেয়ার/এমইচ