নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর বাজারগুলোতে ডিম-মুরগির কেজিতে কমেছে ১০ টাকা। গতকাল শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালিয়েছে রাজশাহী বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। ডিম মুরগির দোকানিকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের দামে ডিম কেনা থাকলেও তা বর্তমানে কম দামে লোকসান দিয়ে বিক্রি করছেন। ডিম-মুরগির দাম আরো কমতে পারে বলেও জানান তারা। সাহেববাজারের ডিম ব্যবসায়ী শামীম হোসেন কে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। আজ কম দামে বিক্রি করছেন বেশি দামে কেনা ডিম।

বাজারে ডিম-মুরগির মুরগির আমদানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে কমতে শুরু করেছে দাম। অন্যদিকে সোনালি, কক মুরগির বাচ্চা আবারো খামারে তুলতে শুরু করেছে খামারিরা। বাজারে যোগানের বাড়তি হওয়ায় বাজার স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিমের আমদানি ও ক্রেতার চাহিদার উপরে নির্ভর করে কমেছে ডিমের দাম এমনই জানিয়েছে রাজশাহী পোল্ট্রি এসোসিয়েশন।

পড়তে পারেন: রাজশাহীর নয় টাকার ডিম ঢাকায় ১৫

আজ শনিবার ( ২০ আগস্ট ২০২২) রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার খুচরা ও পাইকারী দোকান ঘুরে দেখা গেছে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতিকেজিতে কয়েকদিনের ব্যবধানে কমেছে ৩০ টাকা। খামারি পর্যায়ে ৪০ টাকা কমে কিনছেন পাইকাররা।

মুরগি দোকানদার মিঠু হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, পোল্ট্রি মুরগি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছি কাল; রাতে ১০ টাকা করে কমেছে। ব্রয়লারের আমদানী আছে। আমরা দালালের কাছে থেকে মুরগি কিনি তারা বলেছে বেশি দাম নিলে সমস্যা হবে। খামারে মুরগির দাম কমেছে।

দাম বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫ দিনের ব্যবধানে ৩০ টাকা কমেছে। আগে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও এখন ১৭০ টাকা। দালাল আরো ২০ টাকা লাভ করেই বিক্রি করে। খামারে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় কিনছে তারা। আমরা কিনছি ১৬০টাকা। সোনালি মুরগির দাম কমেছে ১০ টাকা। বাজারে সোনালি মুরগির চাহিদা আছে। সোনালি ২৭০ টাকা, কক মুরগি বাজারে নাই। লেয়ার লাল ২৭০ টাকা আর সাদা বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা। হাঁস ৪০০ টাকা, রাজহাঁস ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।

একই বাজারের ফাহিম ডিম ভান্ডারের মালিক মাসুদরানা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ডিমের দামে খামারিরা কিছুটা লাভবান হয়েছেন কিছুদিন আবার কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়বেন। খাবারের দাম বেশি। লাভ খুব কম হয়। লাল ডিম পাইকারিতে হালি কয়েকদিন আগে বিক্রি করলাম ৪৮-৪৯ টাকা আর সাদা ডিম ৪৪-৪৫ টাকা। কালকের মধ্যে ১০ টাকা কমেছে ডিমের হালিতে। আজ সাদা ডিম ৩৬ আর লাল ডিম ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ডিমের হালিতে ১০ টাকা কমেছে বলা চলে।

পড়তে পারেন: ডিম, মুরগির দাম কমানো বাড়ানোর নেপথ্যে যাদের কারসাজি

দাম কমার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীতে করোনায় ৭০ ভাগ খামার বন্ধ ছিল। কিছু খামার আবার উৎপাদনে এসেছে ফলে বাজারে মুরগির যে সাময়িক ক্রাইসিস ছিল তা আর নেই তাই দাম কম। দেড়-দু বছরের মধ্যে উৎপাদন খরচ আরো বেড়ে গেলো, কারণ ভুট্টা, সয়াবিন মিল, প্রোটিনের দাম বেড়েছে। রেডি মুরগির দাম কমায় খামারিরা আরো বিপাকে পড়তে পারে। ফের লাভ কমে গেলো খামারিদের।

রাজশাহীর পবা উপজেলার পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তা মুজিবুর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মূলত প্রান্তিক এক হাজার-দু-হাজার মুরগির খামারিরা ধ্বংশ হয়ে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে যেসব মুরগি ও ডিমের উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারে আসছে। মুরগিতে খামার পর্যায়ে ৩০ টাকা বেশি পেয়েছেন খামারিরা। সেটা এখন নাই হয়ে আগের দামে ১৪০ টাকায় নেমে গেছে। এমন উঠানামার মধ্যেই আছি। এক চালান দাম পেলে পরের চালানেই শেষ! ১৩০-১৪০ টাকা কেজি মুরগি বিক্রি করে কোন লাভ নাই।

খাদ্যের দামে উৎপাদিত মুরগির ডিমের দাম তুলনামূলক ঠিক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা ডিম উৎপাদন করতে লাগে ৮ টাকা। আর বাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা। ৪০ পয়সা লাভ হয় কারণ অন্যান্য খরচ হয় ৬০ পয়সা। আমাদের দেশের সিন্ডিকেট সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ৪-৫ দফায় পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়ে এখন আকাশচুম্বী। ১৮’শ টাকার খাদ্যের বস্তা এখন ২৮’শ টাকা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ