ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: শিম চাষে অনেকেই লাভবান হয়ে থাকেন আবার অনেকে লোকসান গুনেন। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে যেসব শিমে ফলন আসে সেসব জাতে লাভবান হওয়া সম্ভব। তেমনই একটি জাত ঝাড় শিম। যা ৪৫ দিনেই ফলন হয় আর অন্যান্য শিমের তুলনায় লাভ দ্বিগুন হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি ঝাড় শিম-১ নামে জাত অবমুক্ত করেছে।

যেমন মাটিতে ঝাড় শিম চাষ হবে
ঝাড় শিম শীতপ্রধান অঞ্চলের ফসল। তবে উষ্ণপ্রধান অঞ্চলেও জন্মে। ১৬ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মধ্যে গাছ ভালো জন্মে। বার্ষিক ৫০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ঝাড় শিম চাষের জন্য ভাল। গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বৃষ্টি বেশি হলে ফুল ঝরে যায় ও পাতায় দাগ পড়া রোগ হয়। হালকা ছায়াযুক্ত স্থানেও ঝাড় শিম চাষ করা যায়। প্রায় সকল ধরণের মাটিতে ঝাড় শিম গাছ ভাল হয়। তবে সুনিস্কাশিত দোআঁশ মাটিতে ঝাড় শিম গাছ ভাল জন্মে। প্রচুর জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটিতে এর ফলন বৃদ্ধি পায়।

ঝাড় শিমের জাত
বর্তমানে আমাদের দেশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ঝাড় শিমের তিনটি জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য দুটি জাত এবং বীজ হিসেবে খাওয়ার জন্য ১টি জাত। বারি ঝাড় শিম-১, বারি ঝাড় শিম-২, এবং বারি ঝাড় শিম-৩। এর মধ্যে প্রথম দুটি শিম খাওয়ার জন্য এবং তৃতীয়টি বীজ খাওয়ার জন্য। এছাড়াও বর্তমানে পাহাড়ী এলাকায় ঝাড় শিমের বেশ কিছু স্থানীয় জাত রয়েছে।

পড়তে পারেন: গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড শিমে ভরপুর রাজগঞ্জের মাঠ

ঝাড় শিমের চারা
ঝাড় শিমের বীজ বপনের আগে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুররোদগম তাড়াতাড়ি হয়। বীজ বোনার আগে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৩ গ্রাম ভিটাভ্যাক্স বা প্রোভ্যাক্স ২০০ ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। তাহলে পরে রোগাক্রমণের আশঙ্কা কমে যাবে। বীজ বপনের ১০ দিন পর প্রতি পিটে একটি সবল চারা রেখে বাকি দুর্বল চারা তুলে ফেলতে হবে। হেক্টর প্রতি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কেজি ঝাড় শিমের প্রয়োজন হয়।

ঝাড় শিম চাষের উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপন
অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বর মাসে ভালোভাবে চাষ দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে জমি তৈরি করতে হবে এবং চারা রোপন করতে হবে। আগাম ঝাড় শিম চাষ করলে চারা গাছের গোঁড়া পচে যেতে পারে। ডিসেম্বরের পরে বীজ বুনলে ফলন অনেক কমে যায়।

পড়তে পারেন: ভাদ্র মাসে লাউ শিমের ‍বিশেষ যত্ন, আগাম শীতকালীন সবজির প্রস্ততি

ঝাড় শিম চাষে সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনা
ঝাড় শিম চাষের জন্য জমিতে সঠিক পরিমাণে গোবর সার, ইউরিয়া সার, টিএসপি সার, এমওপি সার ইত্যাদি সার সঠিক পরিমাণে দিতে হবে। তবে মনে রাখবেন অন্যান্য শিম চাষ করার ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার না দিলেও চলে। কিন্তু ঝাড় শিম গাছ চাষ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ইউরিয়া সার দিতে হবে। কারণ ঝাড় শিমের বাতাস থেকে মাটিতে নাইট্রোজেন সঞ্চয়ের ক্ষমতা কম।

ঝাড় শিম চাষে সেচ ও পানি নিষ্কাশন
ঝাড় শিম চাষ করার ক্ষেত্রে জমির মাটিতে সঠিক নিয়মে পানি সেচ দিতে হবে। পাহাড়ী অঞ্চলে শিমের চাষ বৃষ্টি নির্ভর হওয়ায় সেচ দেয়ার সুযোগ কম। এজন্য অধিকাংশ চাষী ছড়া বা ঝর্নার কাছে শিমের চাষ করে। ঝাড় শিমের ক্ষেতে এমন ভাবে নালা রাখা দরকার যেন অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যেতে পারে। সেচের পানির সংকট থাকলে গাছের গোড়ার মাটির ওপর খড় বা শুকনো ঘাস বিছিয়ে মালচিং করে দেয়া যেতে পারে।

পড়তে পারেন: চাষ করুন উচ্চফলনশীল ভারতীয় কেরালা জাতের শিম

ঝাড় শিম চাষে আগাছা ও নিড়ানি
মাঝে মাঝে মাটি নিড়ানি দিয়ে মাদার মাটি আলগা করে দিতে হবে। এবং গাছের গোড়ায় যদি কোনপ্রকার আগাছা জন্ম নেয় কিংবা কোনো ধরণের লতানো গাছ দেখা যায় তবে তা সাথে সাথে নির্মূল করতে হবে।

ঝাড় শিম চাষে পোকামাকড় ও রোগদমন
ঝাড় শিমের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হলো ফল ছিদ্রকারী ও জাব পোকা। জাবপোকা শিমের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই পোকা দেখতে সবুজাভ কালচে রঙের। এরা দল ধরে পাতা, ডগা থেকে রস চুষে খায়। এরা ফুল ও ফল থেকেও রস খায়। আক্রান্ত ফল খাওয়ার উপযোগী থাকে না। বৃষ্টি হলে এর আক্রমণ কমে যায়।

শিমের ফল ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রনের জন্য আক্রান্ত ফল তুলে ধ্বংস করতে হবে, শিমগাছের ডগায় প্যাঁচ খুলে ছাড়িয়ে দিতে হবে ও এসব করার পর প্রোক্লেম কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম গুলে ক্ষেতে স্প্রে করতে হবে।

শিমের গোড়া পচা রোগও দেখা যায়। তাই যেগাছ গুলোর শিকড় ও গোড়া পচে যায় সেই গাছ গুলো তুলে ফেলতে হবে। এছাড়াও শিমের আরও দুইটি মারাত্মক রোগ হল মোজাইক রোগ ও অ্যানথ্রাকনোজ। আইপিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে এসব পোকামাকড় ও রোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঝাড় শিমের ফলন
বীজ লাগানোর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ফুল আসে ঝাড় শিম গাছে। ফুল ফোটার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যেম একর প্রতি ১২ থেকে ১৫ মেট্রিক টন ঝাড়শিমের ফলন পাওয়া যায়।

৪৫ দিনেই ফলন ঝাড় শিমের, লাভ দ্বিগুন লেখাটি নেওয়া হয়েছে কৃষি প্রযুক্তি হাত বই, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) উদ্ভাবিত কৃষি প্রযুক্তি বিবরণী, অষ্টম সংস্করণ, মাঘ ১৪২৫, জানুয়ারী ২০১৯।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ