নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: টাঙ্গাইল পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়াডোমা এলাকার মৃত আশরাফ আলী ও হাওয়া বেগমের ছেলে আবদুল আলীম। জীবনে অনেক কাজ করেছেন স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য কিন্তু ভাগ্য সাঁয় দেয়নি। কিন্তু এবার ৭৫ শতাংশ জমিতে ৫ লাখ টাকার টমেটো বিক্রির আশা আলীমের।

আশার আলো নিয়ে পৈতৃক জমিতে শুরু করেন টমেটো চাষ। এই সবজিই তাঁকে সফলতা এনে দেয়। অবশেষে এই সবজির টাকায় তাঁর অভাব দূর হয়, তিনি হয়ে উঠেন স্বাবলম্বী। পরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তিনি শুরু করেন চাষাবাদ।

আলীম এবার ৭৫ শতাংশ জমিতে পাঁচ হাজার টমেটোর চারা লাগিয়েছেন। এতে তাঁর ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যে পরিমাণ টমেটোর ফলন হয়েছে, তাতে তিনি পাঁচ লক্ষাধিক টাকা আয়ের আশা করছেন।

পড়তে পারেন: ইতালিয়ান টমেটো চাষে তাক লাগিয়েছেন মাসুদ

আলীমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে এসএসসি পাসের পর কলেজে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু লেখাপড়া আর এগোয়নি তাঁর। পরে নিজ এলাকায় আসবাবের ব্যবসা শুরু করেন। দুই বছরের মধ্যেই লোকসানের মুখে পড়ে বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা। পরে পারিবারিকভাবে তাঁকে টাঙ্গাইল শহরে একটি জুতার দোকান করে দেওয়া হয়। কয়েক বছর সেই ব্যবসা চালান।

কিন্তু ২০১২ সালে তাঁর বাবা অসুস্থ হন। বাবার চিকিৎসার জন্য তাঁকে প্রায় দেড় বছর ভারতে থাকতে হয়। দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে জুতার ব্যবসায়ও লোকসান হয়। একপর্যায়ে ঋণে পড়ে তিনি এই ব্যবসা বাদ দেন। কিছুদিন বাড়িতে বসে থাকেন। আত্মীয়স্বজনের পরামর্শে কয়েকটি গরু কিনে খামার করেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত লাভ না হওয়ায় গরুগুলো বিক্রি করে দেন। এতে অনেকটা হতাশা পেয়ে বসে তাঁকে।

পড়তে পারেন: ৩ বিঘায় ৩ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি

একপর্যায়ে ২০১৯ সালে বাড়ির পাশের ১০ শতাংশ জমিতে টমেটো ও বেগুনগাছ লাগান তিনি। গরুর খামার করার সময় বাড়ির পাশে অনেক গোবর জমা ছিল। সেই গোবর থেকে জৈব সার তৈরি করে তিনি চাষ করায় ভালো ফলনও পান। এতে তাঁর বেশ লাভ হয়। পরের বছর তিনি ২০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেন। পরিকল্পনা নেন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের। এ মৌসুমে ৭৫ শতাংশ জমিতে পাঁচ হাজার টমেটোর চারা রোপণ করেন তিনি। এখন গাছে গাছে ভরে আছে টমেটোতে।

বসতবাড়ির পাশেই জমিতে লাগানো সারি সারি টমেটোগাছ। প্রতিটি গাছই বিভিন্ন আকারের টমেটোতে ভরা। কিছু গাছে টমেটো পাকতে শুরু করেছে। টমেটোর ভারে গাছ যাতে হেলে না পড়ে, সে জন্য প্রতিটি গাছকে কাঠির সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

পড়তে পারেন: রাতের অন্ধকারে ফলন্ত ৫০০ টমেটো গাছ কাটলো দুর্বৃত্তরা

আলীম বলেন, টমেটো এখন ৩০ টাকা কেজি ধরে পাইকারি বিক্রি করছেন। ইতিমধ্যেই পুরো বাগানের টমেটো তিন লাখ টাকায় কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন পাইকারেরা। কিন্তু তিনি রাজি হননি। নিজে বিক্রি করলে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি জানান, বীজ কিনে নিজে চারা করেছেন। আশপাশের খামার থেকে গোবর এনে সার বানিয়ে ব্যবহার করেছেন। এতে ফলন ভালো হচ্ছে। এ ছাড়া তিনি নিজেই শ্রম দিচ্ছেন।

আলীম আরও বলেন, ‘ব্যবসা করে সফল হতে পারিনি। কিন্তু সবজি চাষ করে আমি আজ সফল। আগে এই জমিতে ধান চাষ করে যা লাভ হতো, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি লাভ হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে চাষ করলে ব্যবসার চেয়ে কৃষিকাজ করে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায়।’

পড়তে পারেন: রাজশাহীতে বিষাক্ত ইথিফন দিয়ে পাকানো হচ্ছে টমেটো

স্থানীয় কৃষিবিদ এম কবির জানান, আলীম কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। তাই তিনি সফল হয়েছেন। তাঁকে দেখে অনেকেই সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ