Egg

আবু খালিদ, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নানা চড়াই উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে চলা পোল্ট্রি শিল্পে নতুন এক উজ্বল সম্ভাবনা যু্ক্ত হতে চলেছে। শিল্পটিতে রপ্তানীর বাজারে প্রবেশের হাতছানি উঁকি দিচ্ছে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে তারা ডিম রপ্তানীর পথে হাঁটবেন। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকেও রয়েছে সবুজ সংকেত।

দেশের পোল্ট্রি শিল্প খাতের উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রাণিসম্পদ-২) কাজী ওয়াছি উদ্দিন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে ডিমের উৎপাদনে আমরা অনেক বেশি সফলতা অর্জন করেছি।’

‘এবং এর ধারাবাহিকতাও রয়েছে। উদ্যোক্তারা যদি চান তাহলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। উদ্যোক্তারা আমাদের কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসলে আমরা সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিবো।’

রপ্তানীতে সব ধরনের নীতির পাশাপাশি আনুসঙ্গিক সব সহায়তা দেয়া হবে উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন এ কর্মকর্তা বলেন, তবে অবশ্যই দেশের মানুষের চাহিদা আগে পূরুণ করতে হবে।

আলাপকালে উদ্যোক্তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে ডিম রপ্তানী করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে অনেকগুলো ধাপ পার করতে হবে। সেইসব ধাপ বা কার্যক্রম শুরু করার এখনই মোক্ষম সময়। এখন থেকে পদক্ষেপ নেয়া শুরু হলে হয়তো ২০২১ সালে রপ্তানীর বাজারে প্রবেশ করতে পারবে শিল্পটি।

দেশের অন্যতম বৃহৎ ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড চিকস লিমিটেড এর জিএম মো. আসাদুজ্জামান মেজবাহ (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ডিম রপ্তানীর সুযোগ পেলে খুবই ভালো হবে।

তিনি বলেন, বায়োসিকিউরিটিসহ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে দেশের যে কয়েকটি ডিম ‍উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা রপ্তানীর বাজারে যেতে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে দরকার সরকারের সরাসরি সহযোগিতা। তবে রপ্তানীর প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানীতে গেলে যেমন কৃষি অর্থনীতি চাঙ্গা হবে অপরদিকে দেশের ডিমের বাজারেও খামারিরা ভালো দাম পাবেন।

জন প্রতি ডিম খাওয়ার আন্তর্জাতিক মানদন্ডেও বাংলাদেশ বেশ এগিয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফ.এ.ও) মতে, সুস্থ থাকার জন্য প্রত্যেক মানুষের বছরে নূন্যতম ১০৪টি ডিম খাওয়া দরকার।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ডিমের মাথাপিছু কনজাম্পশন ছিল ১০৩টি। এ বছর (২০১৯) সে লক্ষ্য অবধারিতভাবেই (১০৪টি) পূর্ণ হতে চলেছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দাবি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার পরিমান ১০৫টিতে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান প্রভৃতি দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।

ডিমের দাম না পাওয়ার কারণে অনেক সময়ই ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার বিষয়েও পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। তৃণমূল পর্যায়ের খামারি ঝরে পড়া রোধে পোল্ট্রি বীমা চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা, বিবি) সূত্র জানায়, গত ৫ বছরে ডিমের উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ১০৯৯.৫২ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১১৯১.২৪ কোটি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৪৯৩.১৬ কোটি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৫৫১.৬৬ কোটি, এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৭১০.৯৭ কোটি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ১৭৮১ কোটি ডিম উৎপাদিত হবে বলে তারা মনে করছেন।

ডিমের মোট বাজার সম্পর্কে ওয়াপসা-বিবি, সভাপতি ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায়  ৮,৩৩৮.৬৮ কোটি টাকার ডিম কেন্দ্রিক বাণিজ্য হয়েছে।

তিনি বলেন, পরবর্তী অর্থ বছরগুলোতে এ পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১০,৪৫২ কোটি, ১০,৮৬১ কোটি এবং ১১,৯৭৬ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ নাগাদ প্রায় ১২ হাজার ৪৬৭ কোটি অথবা তারও অধিক টাকার অর্থিক লেনদেন হবে ডিমকে কেন্দ্র করে।

সার্বিক বিষয়ে ওয়াপসা বিবি, এর সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আলী ইমাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, যেহেতু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে ডিম রপ্তানী করতে হবে সেহেতু এখনই পদক্ষেপ নেয়া শুরু করা উচিত। কেননা ডিম রপ্তানীর সুযোগ ও সক্ষমতা দুই-ই রয়েছে আমাদের।

তিনি বলেন, ডিম রপ্তানীর মাধ্যমে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হবে পোল্ট্রি শিল্পে। উদ্যোক্তা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগেই এমন নতুন ইতিহাসের পথে হাঁটবে দেশের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাময় পোল্ট্রি শিল্প।