আসাদুজ্জামান সাজু, হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টায় লালমনিরহাটে এবার কিছুটা আগেই ইরি-বোরো চাষাবাদে নেমে পড়েন কৃষকরা। প্রথম দিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখতে থাকে ইরি-বোরো চাষীরা।

কিন্তু হঠাৎ করে কৃষককের সেই স্বপ্নে শিলা বৃষ্টির আঘাতের পর এবার পোকার আক্রমন ও ব্লাস্টসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে। আবহাওয়ার এমন বৈরী আচারণে জেলায় ইরি-বেরো ক্ষেতে পোকাসহ নানা রোগের আক্রমনে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তর ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের বন্যায় জেলার ৫ উপজেলার আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একাধিক ধান ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টায় চলতি ইরি-বোরো চাষাবাদে কৃষকরা নেমে পড়ে।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছরে ইরি-বোরো চাষাবাদের জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ৪৯ হাজার ৫ শত ৫৫ হেক্টর জমি নির্ধারন করা হলেও বাস্তবে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। প্রথম দিকে আবহওয়া অনুকুলে, সময় মত সার-সেচ ও পরিচর্যা করায় বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকে হাজারো কৃষক।

কিন্তু কৃষকের বুক ভরা স্বপ্নে প্রথমত আঘাত হানে শিলা বৃষ্টি। গত ৩ এপ্রিল শিলা বৃষ্টি জেলার অধিকাংশ ইরি-বোরো ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। শিলা বৃষ্টির পর শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। ফলে আবহাওয়ার এ বৈরী আচারণে ইরি-বোরো ক্ষেতে পোকার আক্রমনসহ ব্লাস্ট ও নানা রোগ দেখা দেয়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ইরি-বোরো ক্ষেতে হঠাৎ করে ব্লাস্ট নামক একটি ছত্রাকজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। পোকা আক্রমনের পাশাপাশি এ রোগ দেখা দেয়ায় শতভাগ ফলন কমে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। চারা রোপন থেকে ধান কাটা পর্যন্ত তিনটি স্থলে এ রোগ দেখা দেয়। ধানের পাতা, গিট ও শীষে এ রোগের আক্রমন হয়।

ফলে পাতা ব্লাস্ট, গিট ব্লাস্ট ও শীষ ব্লাস্ট রোগ নামে এ রোগ পরিচিত পেয়েছে। তবে এবার পাতা ব্লাস্ট রোগ দেখা না দিলেও বর্তমানে গিট ব্লাস্ট ও শীষ ব্লাস্ট রোগ দুইটি দেখা দিয়েছে। এছাড়া ধান গাছে বিভিন্ন পোকার আক্রমন করেছে।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দিনের বেলায় গরম (২৫-২৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড) ও রাতে ঠান্ডা (২০-২২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড), শিশিরে ভেজা দীর্ঘ সকাল, অধিক আর্দ্রতা (৮৫% বা তার অধিক), মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ঝড়ো আবহওয়া এবং গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণেই এ রোগ দেখা দিয়েছে। এ রোগ বাতাসের মাধ্যমে এক ক্ষেত থেকে অন্য ক্ষেতে দ্রুত ছড়াছে।

যেখানেই অনুকুল পরিবেশ পাচ্ছে সেখানেই এ রোগ আক্রমন করছে। এ রোগ প্রথমত সহজে সনাক্ত করা যাচ্ছে না। যখন সনাক্ত করা সম্ভব হয় তার আগেই ফসলের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তবে অনুমোদিত মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করলে এ রোগ দমন করা কিছুটা সম্ভব।

হাতীবান্ধা উপজেলার দ: গড্ডিমারী গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, হঠাৎ করে ইরি-বোরো ক্ষেতে শীষ পচনের রোগ দেখা দিয়েছে। ঔষধ প্রয়োগ করলেও এ রোগ দমন করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি পোকার আক্রমনও বেড়ে গেছে। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।

একই এলাকার কৃষক কাবদালী, আকতার হোসেনসহ অনেক কৃষক জানান, তাদের ধান ক্ষেতে পচন রোগ দেখা দিয়েছে।  বিভিন্ন ঔষধ প্রযোগ করলেও কোনো সফলতা পাচ্ছে না।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিধু ভূষণ রায় এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, বৈরী আবহওয়ার কারণেই ব্লাস্ট রোগ দেখা দিতে পারে। তাই যেসব জমিতে ব্লাস্ট রোগ আক্রান্ত হয়নি কিন্তু ওই এলাকার আবহওয়া অনুকুলে নয় সেখানকার ধান ক্ষেতে রোগ আক্রান্ত হোক বা না হোক, শীষ বের হওয়ার আগ মুহুর্তে প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে ৮ গ্রাম ট্রুপার ৭৫ ডব্লিউপি বা দিফা ডব্লিউপি বা ৬ গ্রাম ন্যাটিভো ৭৫ ডব্লিউপি বা ট্রাইসাইক্লাজ/স্ট্রবিন গ্রুপের অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ঔষধ অনুমোদিত মাত্রায় শেষ বিকালে ৫-৭ দিন পর পর দু বার প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছি।

কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা কৃষকের কাছে গিয়ে ক্ষেত দেখার পর বিভিন্ন পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি লিফলেট বিতরণ করছে।