স্বাস্থ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আদা চা কিংবা পানি ওজন কমাতে সহায়তা করার পাশাপাশি নানানভাবে উপকার করতে পারে। এছাড়া আদা মিশ্রিত পানির উপকারিতা জানলে অবাক হবেন আপনি!

পুষ্টিবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এই বিষয়ে জানানো হল বিস্তারিত। দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতেই হয়। চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনও প্রয়োজন পড়ে। আর এই ওজন কমানোর রুটিনে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে আদা মিশ্রিত পানি বা চা।

ঝাঁঝাঁলো স্বাদের কারণে ঠাণ্ডার সমস্যায় আদা-পানি বা চা পান করলে বেশ আরাম লাগে। আদায় রয়েছে প্রদাহরোধী উপাদান। আরও আছে ‘শোগাওলস’ এবং ‘জিঞ্জারলস’ নামক যৌগ। এই দুই উপাদান শারীরিক ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। আদার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‘ফ্রি রেডিকল’য়ের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং প্রদাহ দূর করে।

পড়তে পারেনভারত থেকে সাড়ে ৪৪ কোটি টাকার আদা আমদানি

হজমে উপকারিতা: স্বাস্থ্যকর হজম ক্রিয়া শরীরকে সার্বিকভাবে সুস্থ রাখে। সকালে উঠে খালি পেটে আদার জল খাওয়া হলে তা শরীরের বিপাক এবং হজম ক্রিয়া সক্রিয় রাখে।

ওজন কমাতে আদার জল: এক গ্লাস পানি গরম করে তাতে আধা চা-চামচ আদার কুচি মেশান। ১০ মিনিট পর ছেঁকে পান করুন। শুধু আদার পানি খেতে ভালো না লাগলে এতে লেবুর রস মেশানো যেতে পারে। স্বাদ বৃদ্ধির সঙ্গে পুষ্টিগুণও বাড়বে।

সারা বছরের রান্নায় আদা ব্যবহৃত হয়ে থাকে তবে বছরের এই সময় পাওয়া আদাতে খাবারের সাথে বেশ পরিবর্তন আসে। ভাজা, তরকারি বেইক না স্মুদি ইত্যাদি যেকোনোভাবেই রান্নায় আদার ব্যবহার খাবারকে বেশ স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু করে তোলে।

পড়তে পারেন: যেভাবে বানাবেন আদা রসুনের স্যুপ

দ্বিগুণ পুষ্টির জন্য আদা ও এর খোসা খাওয়ার পরামর্শ অনেক পুষ্টিবিদই দিয়েছেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে আদা থেকে দ্বিগুণ পুষ্টিগুণ ওউপকারিতা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানা যায়।

অসুস্থ অবস্থায় টোটকা হিসেবেও আদার ব্যবহার বেশ প্রচলিত। যেমন- পেটের সমস্যা, গলা ব্যথা, ঠাণ্ডা-কাশি ইত্যাদি রোগ দেখা দিলে আদা খাওয়া উপকারী। ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমকে প্রকাশত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ ট্রেসি লকউড বেকারম্যান বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে আদাতে থাকা জিঞ্জারল নামক যৌগ প্রদাহের ফোলা ভাব ও ব্যথা কমাতে কার্যকর।”

পড়তে পারেন: যে পদ্ধতিতে আদা চাষে শতভাগ সফলতা আসে

রন্ধনশিল্পী, স্বাস্থ্য প্রশিক্ষক এবং হার্ভার্ড থেকে প্রশিক্ষিত জীববিজ্ঞানী কাঞ্চন কোয়া, তার ইন্সটাগ্রামে এক ভিডিও বার্তায় জানান, আদার খোসা এর সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী অংশ। যদিও তা আমরা না জেনেই ফেলে দেই।

তিনি বলেন, “আদার খোসা খাবার যোগ্য। এতে রয়েছে দ্বিগুন পরিমাণ পলিফেনোল যা গুরুত্বপূর্ণ ও স্বতন্ত্র যৌগ।” ইতালি’র ‘ইউনিভার্সিটি অফ কালাব্রিয়া’র ফার্মেসি হেল্থ অ্যান্ড নিউট্রিশন’ বিভাগের করা গবেষণায় দেখা গেছে, আদার খোসা খাওয়া কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

পড়তে পারেন: চাল, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, কমেছে তেল, আদার

ড. কোয়া বলেন, “যদিও অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে আদার খোসা হজম করা কঠিন। তবে ভিন্ন উপায়ে তা খাওয়া যেতে পারে। যেমন- সুপে ব্যবহার করা, চা তৈরিতে ব্যবহার করা অথবা যে কোনো রান্নায় আদার খোসাসহ ব্যবহার করা যা পরবর্তিতে ছেঁকে নেওয়া যায়।”

এর ফলে খাবারে আদার খোসায় থাকা পুষ্টি উপাদান যোগ হয়। আর তা হজমে কোনো রকম সমস্যাও সৃষ্টি করে না। নিউ ইয়র্ক’য়ের এই পুষ্টিবিদ আদার খোসা ছাড়ানোর ক্ষেত্রে ছুরি ব্যবহারের পরিবর্তে চামচ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এতে আদার মাংসল অংশ কম অপচয় হয়।

পড়তে পারেন: যে পদ্ধতিতে আদা চাষে শতভাগ সফলতা আসে

এছাড়া সারারাত আদার খোসা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন রান্নায় সেই পানি ব্যবহার করলে এতে থাকা প্রদাহরোধী উপাদান রান্নার মাধ্যমে খাবারে যোগ করা যায়। তিনি মনে করেন, খাবারের মাংশল অংশ ও খোসার সর্বোচ্চ ব্যবহারে কেবল খাদ্যের অপচয় কমায় না বরং স্বাস্থ্য নিরাপত্তাতেও দ্বিগুন ভূমিকা রাখে।

মনে রাখতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টার’য়ের তথ্যানুসারে, প্রাপ্ত বয়স্কদের আদা খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। দৈনিক চার গ্রামের বেশি আদা খাওয়া যাবে না। এছাড়াও দুই বছর বয়সের নিচের শিশুদের আদা খাওয়া ঠিক নয়। আর গর্ভবতী নারীরা দৈনিক এক গ্রামের বেশি আদা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ