ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আধুনিক পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি চাষ করে অল্প পুঁজিতেই অধিক লাভবান হওয়া যায়। বাংলাদেশে অক্টোবর থেকে নভেম্বর দুই মাস স্ট্রবেরির চারা লাগানোর জন্য উপযুক্ত।

আসুন স্ট্রবেরি চাষের আধুনিক পদ্ধতি জেনে নিই:

মাটি: স্ট্রবেরি মূলত মৃদু শীত প্রধান অঞ্চলের ফসল। কিন্তু কিছু কিছু জাত তুলনামূলক তাপ সহিষ্ণু এদের গ্রীষ্মায়িত জাত বলা যায়। এসব জাতের জন্য দিন ও রাতে যথাক্রমে ২০-২৬ ডিগ্রি ও ১২-১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন।

চারা তৈরি:  স্ট্রবেরি রানারের (কচুর লতির মতো লতা) মাধ্যমে বংশবিস্তার করে থাকে। তাই পূর্ববর্তী বছরের গাছ নষ্ট না করে জমি থেকে তুলে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে রোপণ করতে হবে। ওই গাছ থেকে উৎপন্ন রানারের শিকড় বের হলে তা কেটে ৫০ ভাগ গোবর ও ৫০ ভাগ পলিমাটিযুক্ত পলিথিন ব্যাগে লাগাতে হবে। এরপর পলিথিন ব্যাগসহ চারাটি হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।

আরও পড়ুন: যেভাবে মৌ চাষে অধিক লাভবান হবেন
অতিরিক্ত বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার জন্য চারার উপর পলিথিনের ছাউনি দিতে হবে। রানারের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা হলে স্ট্রবেরির ফলন ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই জাতের ফলন ক্ষমতা অক্ষুন্ন রাথার জন্য টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা ব্যবহার করা ভালো।

জমি তৈরি: জমি ভালভাবে চাষ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে অন-ত ৩০ সেন্টিমিটার গভীর করে জমি চাষ দিতে হবে। যেহেতু স্ট্রবেরি গাছের শিকড় মাটির উপর দিকে থাকে সেজন্য মাটি ঝুরঝুরা করে নির্ধারিত মাত্রায় সার মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দেিত হবে।

চারা রোপণ: স্ট্রবেরির চারা মধ্যঅক্টোবর থেকে মধ্যডিসেম্বর পর্যন- রোপণ করা যায়। তবে নভেম্বর মাস স্ট্রবেরি চারা রোপণের জন্য সবচে ভাল। জমি তৈরির পর লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ৫০ সেন্টিমিটার ও প্রতি সারিতে ৩০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে স্ট্রবেরির চারা লাগাতে হয়। বৃষ্টি হলে ক্ষেত থেকে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে দিতে হবে না হলে গাছ পঁচে যাবে।

সার প্রয়োগ ও সেচ: স্ট্রবেরির জন্য দরকার প্রচুর জৈব সার। এজন্য প্রতি একরে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া সার, ৭০ কেজি টিএসপি সার এবং ৮০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এসব সারকে সমান দুভাগে ভাগ করে একভাগ দিতে হয় ফুল আসার একমাস আগে এবং অন্য ভাগ দিতে হবে ফুল ফোটার সময়। ফল ধরা শুরু হলে ২-৩ দিন পর পরই সেচ দিতে হবে।

পরিচর্যা: স্ট্রবেরি গাছে ফুল ধরাতে চাইলে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। গাছ লাগানোর পর তার গোড়া থেকে প্রচুর রানার বা কচুর লতির মতো লতা বের হতে থাকে। এগুলো জমি ঢেকে ফেলে। এতে ফলন ভাল হয় না। এসব লতা যাতে কম বের হয় সেজন্য গাছের গোড়ায় খড় বা পলিথিন বিছিয়ে দিতে হয়। পলিথিন সিট ৩০ সেন্টিমিটার পর গোলাকার ছিদ্র করে স্ট্রবেরি গাছের ঝোপকে মুঠো করে ঢুকিয়ে দিতে হয়। বেশি ফলন ও তাড়াতাড়ি ফল পেতে হরমোন গাছ পাতায় সেপ্র করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন: যেভাবে ঢেঁড়শ চাষে অধিক লাভবান হবেন

ফল সংগ্রহ: কাঁচা ফল যখন হলদে বা লালচে রঙের হতে শুরু করে তখন বুঝা যাবে ফল পাকা শুরু হয়েছে। ফল পুরো পাকলে লাল হয়ে যায়। তবে বিক্রির জন্য ফল পুরো লাল হওয়ার দরকার নেই। সেক্ষেত্রে ফলগুলো শক্ত থাকা অবস্থায় তুলতে হবে। আর ফল তুলতে হবে বোটা সমেত। পরে কাগজের প্যাকেটে করে বাজারজাত করতে হবে।

আধুনিক পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি চাষ শিরোনামে লেখাটি লিখেছেন ড. মো. মসিউর রহমান, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর।  লেখাটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার / এমবি