ঘূর্ণিঝড়ের কোন সতর্ক সংকেত

এগ্রিকেয়ার২৪.কম ডেস্ক: ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’। তারপর বাঁক খেয়ে ফের সাগরে নেমে এসে শক্তি হারাতে পারে। এমনটাই পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অফিস।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়টির মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে অন্ধ্রপ্রদেশ কর্তৃপক্ষ। নাগরিকদের উদ্ধারে ইতোমধ্যে উদ্ধারকারী মোতায়েন করা হয়েছে। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।

ভারতের আবহাওয়া অফিস (আইএমডি) জানিয়েছে, বুধবার (১১ মে) ভোরে অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়া ও বিশাখাপত্তনমে আঘাত হানতে পারে ‘অশনি’। এরপর সকালেই এটি দুর্বল হয়ে সাগরে নেমে আসতে পারে। এরপর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল ঘেঁষে উত্তর-পূর্বদিকে বাঁক নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার (১২ মে) সকাল নাগাদ গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি।

পড়তে পারেন: শূন্য থেকে কোটিপতি আরাফাত রুবেল

অন্যদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি (১৪) তে জানানো হয়, আজ সন্ধ্যা ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল, এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

আজ সন্ধ্যা ৬ টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার পূর্বাভাসে খো: বজলুর রশিদ জানান, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট ঢাকা,  বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রবল বিজলী চমকানোসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।এছাড়া দেশের কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে।

আইএমডি‘র পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়ার ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, বিশাখাপত্তনমের ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ও ওড়িশার ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছিল। ঝড়টি ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

পড়তে পারেন: মাছ চাষে কোটিপতি ফরহাদ, চলতি বছরে ৭০ লাখ!

‘অশনি’র প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং নদিয়া জেলায় বয়ে যায় ঝোড়ো হাওয়া। পর্যটন এলাকা দীঘা, মন্দারমণি, তাজপুর, শংকরপুরসহ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সুন্দরবন অঞ্চলে জারি করা হয়েছে সতর্কতা।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বলেছে, ঝড়টির যে গতিপ্রকৃতি তাতে এটা বাংলাদেশের দিকে আসার আশঙ্কা কম। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় অশনির প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় সর্বোচ্চ ২০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের ঘূর্ণিঝড়সংক্রান্ত বিশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, বঙ্গোপসাগরে থাকা ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১১২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় আবহাওয়া বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে থাকা সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে না যেতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বিক্ষুব্ধ সাগর। স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের উচ্চতা এখন ২ থেকে ৩ ফুট বেশি। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রিপোর্টারদের পাঠানো তথ্য ও ছবি নিয়ে রিপোর্ট।

ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে উত্তাল বঙ্গোপসাগর। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। বাতাসের গতিবেগও বাড়ছে। সমুদ্র বন্দরগুলোয় দেয়া হয়েছে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত। সমুদ্র সৈকতে সতর্কতা বাড়িয়েছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। অনেক পর্যটক এরইমধ্যে কক্সবাজার ছাড়তে শুরু করেছেন।

এদিকে ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে উপকূলীয় এলাকায়। নদীগুলোতে জোয়ারের পানি বেড়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের বেশ কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিকেল নাগাদ রাজধানী ঢাকা কালো মেঘে ছেয়ে যায়। সারা দেশেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থেকে হচ্ছে ভারি বৃষ্টিও।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে আবহাওয়া অফিস থেকে। চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলে অবস্থানরত সব লাইটার জাহাজকে সদরঘাট ও শাহ আমানত ব্রীজ এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বৈরি আবহাওয়ায় মোংলা বন্দরে পণ্য বোঝাই ও খালাস কার্যক্রম ব্যাহত। সুন্দরবন সংলগ্ন সাগর ও নদীতে মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা এরইমধ্যে তীরে ফিরে এসেছে। তবে প্রবল ঘূণিঝড় অশনি ক্রমশ দুর্বল হয়ে শুধু ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি প্রস্তুতি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ