নওগাঁ থেকে ফিরে মেহেদী হাসান, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: এলাকাবাসীর মতে জীবনে এমন কোন ব্যবসা নাই যে সেটা আব্দুল খালেক করেন নি। পাওয়ার টিলার চালিয়েছেন, কৃষিকাজ করেছেন, কষিযন্ত্রপাতির ব্যবসা ছাড়াও করেছেন কয়েক ধরনের কাজ।

শুরু করেন হাঁসের খামার। এরপর ব্রয়লার। একটির পর একটির লাভের টাকায় বাড়াতে থাকেন ব্যবসা। কয়েক বছরের পোল্ট্রি ব্যবসা করে সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা; হয়েছেন লাখপতি। শেষ এক চালানে সোনালীতে সোয়া লাখ টাকা লাভ করেছেন খালেক।

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চকরঘুনাথ এলাকার হাঁসের খামারি মো: আব্দুল খালেক। বয়স তার ৫০ বছর। বছর তিনেক আগে বড় ছেলের সাথে একত্রে হাঁসের খামার করে মুক্তি পেয়েছেন আর্থিক দৈন্যতা থেকে।

আব্দুল খালেক বছর চারেক আগে ফসলি জমি বিক্রি করেছিলেন। হাতে টাকার সংকটে নিয়েছিলেন ব্যাংকঋণ। সেই টাকা দিয়ে শুরু করেন হাঁসের খামার। প্রথমেই অভিজ্ঞ এক হাঁসের খামারির সাথে যোগাযোগ করে নওগাঁর সান্তাহার থেকে ১ হাজার খাঁকি ক্যাম্বেল হাঁসের বাচ্চা নিয়ে আসেন। ৪ মাস লালন- পালন করার পর বিক্রি করে দেন।এতে লাভ হয় দেড় লাখ টাকা। এই টাকায় শুরু করেন ব্রয়লার পালন। কয়েক চালান ব্রয়লার পালনে লাভ আসে বেশ কিছু টাকা। সেই টাকা দিয়ে খামার সম্প্রসারণ করেন।

পড়তে পারেন: এইচএসসি পড়ুয়া সজীবের মুরগির খামার, মাসিক আয় ৪০ হাজার

চলতি বছরের শুরুতেই আড়াই হাজার সোনালী মুরগি তোলেন খামারে। বিধাতা আবারও মুখ তুলে তাকান! প্রতিকেজি মুরগি বিক্রি করেন ২৬০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা। লাভ আসে সোয়া লাখ টাকা।

জানা যায়, কয়েক বছর আগে খালেকের পরিবারে অভাব অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। সংসারের টানাপোড়ন যেন কামড়ে ধরে থাকে। এমন সময় এলাকার লেয়ার মুুরগির খামারি গুলবর হাঁসের খামার করার কথা বলেন।এরপর হাঁসের খামার করার জন্য ব্যাংক থেকে ৩ লাখ টাকার মতো ঋণ গ্রহণ করেন। বাড়ির পাশের ফাঁকা জমিতে করেন খামার। এখন সেই খামারের পাশেই গড়ে উঠেছে সোনালী মুরগির শেড।

আজ ২০ জুন ২০২০১ তারিখে খালেকের সঙ্গে কথা হলে তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, আশেপাশের কয়েকটি খামারে ব্রয়লার মুরগির চাষ করে। আমি শুরু করি হাঁসের খামার। ডিম পাবার আশায় খামার করেছিলাম। হাঁসে লাভ এক-দেড় লাখ হলেই বিক্রি করে দিয়ে নতুন হাঁসের বাচ্চা নিই। খাঁকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস এখনও খামারে আছে আড়াইশটি। ডিমের জন্য রেখে দিয়েছি। এদিকে সোনালী মুরগিতে এক চালানে সোয়া লাখ টাকা লাভ করেছি। খামার ঘরের পাশেই একটা ধান ভাঙ্গা মিল ফেলব। ব্যবসা বাড়ানোর চিন্তা আছে।

পড়তে পারেন: করোনায় চাকরি হারিয়ে হাঁস পালনে স্বাবলম্বী উজ্জল

তিনি জানান, হাঁসের খামার করে সফলতা পেয়েছি; সেখান থেকেই শুরু। ব্রয়লার মুরগির খামার করেছি, সেখানেও লাভ হয়েছে। পাশাপাশি পুকুওে মাছ চাষ করছি। এখন সোনালী করছি। যারা নতুন খামার করতে চান তাদের বলব সোনালী যদি ২০০ টাকা কেজির উপর বিক্রি করা যায় তাহলে লাভজনক ব্যবসা হবে।

খামার নিয়মিত দেখাশোনা করা প্রাণিসম্পদ চিকিৎসক আতাউর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, মুরগির গামবোরা, রাণীক্ষেত, কলেরা, কৃমিসহ কয়েকটি রোগ হয়ে থাকে। প্রয়োজনে চিকিৎসা দিয়ে থাকি।

এলাকার ষাটোর্ধ আনছার আলী জানান, “খালেকের অনেক শখ। একসময় ঘোড়ার ব্যবসা করেছে। তারপর ধান ভাঙ্গা কল, পাওয়ার টিলার চালানো, কৃষিকাজ, যন্ত্রপাতির ব্যবসা প্রায় সব ধরনের কাজ করেছে।এখন হাঁসের খামার করার পাশাপাশি সোনালী মুরগির খামার করেছে। শুনি ভালোই লাভ হয়।”

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের পরামর্শ সহযোগিতা পান কি না জানতে চাইলে খালেক এগ্রিকেয়ার২.কম কে বলেন, কিছুদিন আগে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এসেছিলেন। তারা ফোন নাম্বার, ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে গেছেন। প্রণোদনার টাকা পাওয়া যাবে এরকম বলেছে। দেখি কি হয়!

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অভিমাণ্য চন্দ্র এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে হাঁস, মুরগি খামারি ও বাড়িতে পালনকারীদের নিয়মিত পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে। যেকোন প্রয়োজনে তারা ফোন করলে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আবার সরাসরি খামারে গিয়েও নিয়মিত সহযোগিতা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, মান্দা উপজেলার কালিকাপুর, পরানপুর, প্রসাদপুর এসব ইউনিয়নে গরু, ব্রয়লার মুরগি, সোনালি, লেয়ার মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। অনেকেই লাভবান হয়েছেন । উপজেলায় গরুর খামার রয়েছে ১৩’শ ৮৫ টি, মুরগির খামার ৮৭ টি। ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে ২১০ টি, লেয়ার মুরগি খামার রয়েছে ৩১ টি।