করোনায় রাজশাহীর হ্যাচারি মালিকদের
মেহেদী হাসান, জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনায় রাজশাহীর হ্যাচারি মালিকদের ক্ষতি অর্ধ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন হ্যাচারি মালিকরা। ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী লকডাউনে তাদের এ ক্ষতি হয়েছে।
আলাপকালে এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর কাছে হ্যাচারি মালিকরা জানান, লকডাউনে জেলার ভেতরের মাছ চাষি এবং বাইরের মাছ চাষিরা পোনা কিনতে আসতে পারেনি। সেইসাথে পোনা উৎপাদনে প্রয়োজনীয় অষুধ ভারত থেকে আমদানি করতে না পারায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে হ্যাচারিগুলো। তবে, প্রথমদিকে উৎপাদন বন্ধ করলেও সীমিত আকারে আবার চালু করেছে হ্যাচারিগুলো। আর এরই মধ্যে অর্ধকোটি টাকার লোকসান গুণতে হয়েছে তাদের।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় মোট রেণু পোনা উৎপাদন হ্যাচারি রয়েছে ১২ টি। পবা উপজেলায় ৩টি, মোহনপুরে ৫টি, বাগমারায় ২টি, পুঠিয়ায় ২টি হ্যাচারি রয়েছে। হ্যাচারিগুলোতে রুই, কাতলা, বাটাসহ কার্প জাতীয় মাছের রেণু পোনা উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত পোনা জেলার চাহিদা মিটিয়ে নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়ে থাকে।

আরো জানায়, চলতি বছরে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৭ হাজার মেট্রিকটন এবং রেণু পোনা উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল সাড়ে ৯ হাজার কেজি। জেলায় সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৮৪ হাজার মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়েছে। অপরদিকে বাৎসরিক চাহিদা ৫২ হাজার মেট্রিকটন । জেলার ১৬ হাজার মানুষ মাছ চাষের সাথে জাড়িত বলেও জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।

পুকুরে বাড়ন্ত মাছ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মাছচাষি ও হ্যাচারি মালিকরা। একইসাথে পোনা উৎপাদন,মাছচাষ করায় দ্বিমুখী ক্ষতির মুখে পড়েন তারা।
রাজশাহীর মোহনপুরের মাছ চাষি ও সোনালি হ্যাচারির মালিক সাবের হোসাইন এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, করোনায় তিন মাসে প্রায় ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মাছ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি। ছোট বড় মিলিয়ে ২৪টা পুকুরে মাছ চাষ করি। মাছ বিক্রি করতে পারছি না। পুকুরে মাছের পরিমান বেশি হয়ে যাওয়ায় বাড়ছে না। লকডাউনে ব্যাংক বন্ধ থাকায় লেনদেন করতে পারছি না। সমস্যার কথা জানালে বলে অন্য কোথাও থেকে ব্যবস্থা করতে। রুই, কাতল, বাটা, সিলভার কার্প মাছের রেণু পোনার কেজি ২ হাজার টাকা বলেও জানান এই হ্যাচরি মালিক।
জেলার হড়গ্রাম এলাকার মাছচাষি ও হ্যাচারি মালিক মামুন এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান,মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য ভারত থেকে অষুধ আনতে হয়। লকডাউনে অষুধ আনতে পারিনি। যেসব হ্যাচারি আছে তাদেও লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত তিন মাসে আমার ৬ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। মাছ বিক্রি করতে না পারায় আরো বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছি।
তিনি আরো জানান, বিশেষ করে রাতে মাছের পোনা পরিবহণে ঝামেলা হয়। পুলিশ প্রশাসন যদি আমাদের দিকে একটু দেখতেন তাহলে উপকার হতো’
অপরদিকে নগরীর বউবাজার এলাকায় মাছের খুচরা ব্যবসা করেন সামছুদ্দিন। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ‘করোনার কারণে ঘরে আটকা পড়ে আছি। আমি বাগমারার দামনাশ হাটে থেকে মাছ কিনে এখানে বিক্রি করি। এখন লকডাউন খুললেও মনে হচ্ছে আবার লকডাউন দিবে। তাই আর শুরু করিনি। দেখি কবে পরিস্থিতি ভালো হয়।’

রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, করোনার কারণে জেলায় মাছ উৎপাদন কমে গেছে। হ্যাচারিগুলো আর আগের মতো রেণু পোনা উৎপাদন করছে না। সবমমিলিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

করোনায় রাজশাহীর হ্যাচারি মালিকদের ক্ষতি অর্ধ কোটি টাকা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের সহযোগিতার দাবি জনিয়েছেন হ্যাচারি মালিকেরা। নইলে বড় ধরণের ক্ষতি পরবেন মৎস্য শিল্পের এসব উদ্যোক্তারা।