সমীরণ বিশ্বাস, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কাঁকরোল একটি জনপ্রিয় সবজি ৷ এটি পুষ্টিকরও বটে ৷ এতে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, ক্যারোটিন, আমিষ, ভিটামিন-বি, শ্বেতসার ও খনিজ পদার্থ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে৷ আজ কাঁকরোলের মহোঔধি গুন নিয়ে আলোচনা।

বাংলাদেশে কুমড়ো পরিবারের যতো সবজি আছে তার মধ্যে কাঁকরোলের বাজার দর ও চাহিদা অনেক । কাঁকরোল গাছ লতানো গাছ । স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল একই গাছে হয়না ।

যাদের হার্টের ব্লক রয়েছে তারা যদি নিয়মিতভাবে কাঁকরোল খান তাহলে হার্টের ব্লক খুলে যাবে ব্লাড প্রেসার একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে সেই সঙ্গে সঙ্গে দেহের খারাপ কোলেস্টেরল একদমই থাকবে না আপনি যতক্ষণ ধরে আগুনের আঁচে রান্না করছেন ততক্ষনে এর ভিতরে থাকার শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সবকিছুই একেবারে উধাও হয়ে যাবে,তাই কাকরোল সীমিত তাপে রান্না করুন।

পড়তে পারেন: তৈরি করুন কাঁকরোলের বড়া

কাকরোল এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে মিনারেল ফাইবার কার্বোহাইড্রেট যে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আয়রন ফসফরাস আমিষ ভিটামিন রয়েছে এমন কিছু জিনিস যাতে রয়েছে

100 গ্রাম কাকরোল এর মধ্যে প্রোটিন থাকে 3.1গ্রাম খনিজ থাকে ১.১ গ্রাম , সেখানে আমরা কেলষিয়াম 33 মিলিগ্রাম ফসফরাস ৪২ মিলিগ্রাম আয়রন 4.6 মিলিগ্রাম ক্যারোটিন থাকে ১৬২০ মাইক্রো গ্রাম।

আজ থেকে সারা জীবনের জন্য মুক্তি দেবে আপনার কাছে আর ফিরে আসবেনা এনিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা থাকে তাহলে তার এমন খাবার খাওয়া উচিত যাতে আয়রন এবং ভিটামিন-সি একই সঙ্গে রয়েছে সেইসঙ্গে ফলিক অ্যাসিড থাকতে হবে এসব উপাদান রয়েছে কাকরোল এর মধ্যে নিয়মিত খেলে এনিমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব দেহে প্রচুর পরিমাণে রক্ত তৈরি হবে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ হবে কারণ এর মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যে ক্যান্সার হওয়ার পরেও যদি নিয়মিত কাকরোল খায় তাহলে নতুন করে তার দেহে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি হবে না ।

পড়তে পারেন: শিখে নিন কাঁকরোলের নতুন রেসিপি

যার দৃষ্টিশক্তি দৃষ্টিস্বল্পতা রয়েছে তারা অবশ্যই উপকার পাবেন এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটাকেরোটিন রয়েছে দৃষ্টি উন্নতি ঘটাবে পাশাপাশি চোখের ছানি পড়া প্রতিরোধ করবে যাদের চোখের এই ধরনের সভ্যতারই রয়েছে তারা যদি নিয়মিতভাবে কাকরোল খান তাহলে হয়তো আপনার ছানি অপারেশন করা লাগবে না এটা এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে ।

কাঁকরোল বিষণ্নতা প্রতিহত করেন যারা বিষন্নতা অর্থাৎ ডিপ্রেশনে আক্রান্ত , রাতে ঘুমটা ভালো হয় না সারাদিন মন বিক্ষিপ্ত বিষন্ন থাকে তারা যদি কাঁকরোল খান তাহলে নিজের ভেতর থেকেই বিষন্নতায় বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি আপনি পেয়ে যাবেন ।

কাকরোলে সেলেনিয়াম মিনারেল এবং ভিটামিন থাকে যা নার্ভাস সিস্টেমের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবের কারণেই আপনার বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশনের সম্ভাবনা চলে যায় যাদের এই রকম সমস্যা রয়েছে তারা কোন কিছু না ভেবে আজ থেকে কাকরোল খাওয়া শুরু করতে পারেন ।

কাকরোল কোষের কার্যক্রমকে উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে এবং মিস্ট্রেস কে কমানোর মাধ্যমে বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে করে দেয় কাঁকরোল । শরীর পুনঃনির্মাণের মাধ্যমে বয়সের ছাপ যাতে না পড়ে তা করে দেয় কাকরোল। এছাড়া কাকরোল বিভিন্ন বীরপুরুষবেশি(পুরুষত্ব) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।

পড়তে পারেন: কাঁকরোলের আধুনিক চাষ পদ্ধতি

এছাড়া যারা কাকরোল খাবে তাদের কিন্তু কারদিওভাস্কুলার ডিসিজেস কখনোই হবে না। যাদের দেহে চর্বি জমে তারা কাকরোল খান, সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি রয়েছে কাঁকরোলে যা মেদ কমাতে সাহায্য করে ভিটামিন সি । নিয়মিত কাকরোল খেলে আপনার ওজন বেড়বে না, যাদের রক্তের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি আছে তাদেরকে ওজন বেড়বে না।

নিয়মিত কাকরোল খেলে পুরুষত্ব বজায় থাকবে এবং তাদের শক্তি-সামর্থ্য কোনদিন কম হবে না ।এছাড়া লাইকোপেন হার্টের জন্য খুবই ভালো কাজ করে। কাকরোলে বেশি বিটা ক্যারোটিন থাকে যা চুলের জন্য ভালো ।

অনেকে কাকরোলের বীজগুলো বের করে ফেলে দিচ্ছেন অনেক বেশি শক্ত বীজগুলো। অনেকে কাকরোল থেকে বীজগুলো বের করে ফেলে দেয় । কাকরোলের বীজগুলোর উপকারিতা ও ঔষধি গুণ শুনলে আপনিও চমকে উঠবেন।

কাকরোলের বীজগুলো কি ভাবে কাজ করে থাকে, কিভাবে সেবন করবেন, যদি কিডনির পাথরের জন্য সেবন করতে হয়, তাহলে আপনাকে বীজগুলো বের করে নিতে হবে। বীজগুলো শুকিয়ে নেবেন কড়া রোদে নয় তবে হালকা রোদ ছায়ার বীজগুলো ভালো করে শুকিয়ে এটাকে একদম গুরো করে রেখে দিন। গুরো একটি কাচের জারে রেখে দিন। আর তারপর টানা ২১ দিন এই গুরো সেবন করতে হবে।

হালকা গরম দুধে মিশিয়ে সেবন করুন প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে রাতের খাবার খাওয়ার অন্তত তিন ঘন্টা পরে ওষুধ সেবন করতে পারেন সম্পূর্ণ ঘরোয়া টোটকা হলেও এর আয়ুর্বেদিক সত্যতা রয়েছে এবং এটি যারা সেবন করেন তাদের মূত্রাশয় বা কিডনির পাথরের জন্য কোন ধরনের অপারেশন বা সার্জারির প্রয়োজন পড়বে না পাথর অপসারণ হয়ে যাবে।

দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা কাঁকরোল খেলে দেখবেন যে রক্তের সুগারের পরিমাণ আপনার অজান্তেই কমে গেছে আপনাকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য আর কিছু করতে হবে না।

যারা গর্ভবতী আছেন তারা যদি কাকরোল খান তাহলে আপনাদের উপকার হবে । এটি স্নায়ুর ত্রুটিগুলো হ্রাস করতে সাহায্য করে। তবে এই সময় তাদের খেয়াল রাখতে হবে কাকরোল যেন খুব ভালো হজম হয় । কারণ গর্ভাবস্থায় হজম না হওয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর। আর যেহেতু এতে ক্যালসিয়াম এবং আয়রন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে তাই গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি দেয়।

কাকরোল পাতায় প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন সি রয়েছে। আপনি কাফরুল গাছের দুটি পাতা এক গ্লাস পানিতে সেদ্ধ করুন, তারপরে যখন এটা হাফ গ্লাস হয়ে যাবে তখন হালকা গরম গরম অবস্থায় এক চামচ মধু দিয়ে এটা সেবন করুন । পুরাতন জ্বর আপনার কাছে ফিরে আসবে না , জ্বর, ঠান্ডা, কফ, কাশির সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে কাঁকরোল পাতা। কাকরোল দ্রুত ব্লাড সুগার, কোলেস্টরেল এবং প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণ করে। কাকরোল খাওয়ার সময় যাতে ভালো হজম হয় সেদিকে খেয়াল রেখে খাবেন।

হার্টের সমস্যা শহরের পুরাতন কিছু রোগ রয়েছে তারা ১০০ গ্রাম করে কাফরুল টানা ২১ দিন সেবন করবেন ৫ থেকে ৭ মিনিট আগুনের তাপে সেদ্ধ করে পানি দিয়ে খেয়াল রাখবেন, যাতে এমন পরিমাণ পানি দেওয়া হয় যে পানিটা কাকরোল সেদ্ধ এর সঙ্গে সঙ্গে পানি শেষ হয়ে যায় । অতিরিক্ত পানি ফেলে দিলে পুষ্টিগুণ থাকবে না । সিদ্ধ করার সময় এতে খুব সামান্য পরিমাণ সন্দক লবন যুক্ত করুন ।

সারা জীবনের মতো রোগগুলো থেকে আপনি দূরে থাকতে নিয়মিত কাকরোল খান এবং কৃষিতে থাকুন। সুস্থ থাকুন।

কাঁকরোলের মহোঔধি গুন লিখেছেন সমীরন বিশ্বাস, লিড-এগ্রিকালচারিস্ট, মদিনা টেক লিমিটেড, ঢাকা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ