বিকাশ রায় বাবুল, নীলফামারী: বহুকাল পূর্ব থেকে হালচাষের ক্ষেত্রে মহিষের ব্যবহার ছিল লক্ষ্যণীয়। প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে কৃষকের লাঙ্গল-জোয়াল আর মহিষ নিয়ে মাঠে যাওয়া, এরপর হালচাষ ও পরে মই টেনে জমিকে ঠিকঠাক করা সব কিছুই ছিল নিত্যদিনের চিত্র।

কিন্তু বর্তমানে কৃষি কাজের আধুনিকায়নের ফলে গ্রাম বাংলায় সহজে আর দেখা মেলে না এমন চিত্র। কৃষির আধুনিকায়নে বিলুপ্তপ্রায়্ এই মহিষের হাল।

গরু মহিষের হাল মূলত লাঙ্গল দিয়ে মাটি চিরে ফেলা। এখন বাঙালির চিরচেনা ঐতিহ্য কাঠের লাঙল আধুনিক প্রযুক্তির আবির্ভাবে বিলুপ্তির পথে। একসময় লাঙল ছাড়া গ্রাম-বাংলায় চাষাবাদের কথা চিন্তাই করা যেত না। দেখা যেত খুব ভোর বেলায় প্রান্তিক কৃষক তার ঘাড়ে লাঙল জোয়াল আর মই রেখে এক হাতে গরু শাসনের পাচুনি লাঠি আর অন্য হাতে চাষাবাদের উপযুক্ত দুই বলদের দড়ি ধরে রেখেছে।

পড়তে পারেন: হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সেচযন্ত্র “দোন”

চাষাবাদ শেষ করে কর্দমাক্ত শরীরে ক্ষেতের আইলে বউঠুনির নিয়ে আসা সকালের পান্তা আর কাঁচা মরিচ পিঁঁয়াজ দিয়ে ভাত খেয়ে নিয়েছেন কৃষক। বিশ্রাম শেষে আবারও কৃষকের ঠাই ঠাই শব্দ শোনা যেত। গ্রাম মানেই ছিল ক্ষেতে খামারে কৃষকের লাঙল ও মই দিয়ে চাষাবাদের দৃশ্য। এ দৃশ্য আর অহরহ দেখা যায় না।

বিশ শতকে ১৯৮০’র দশক থেকে কলের লাঙল সেই স্থান দখল করায় দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের লাঙল। কলের লাঙলে কায়িক শ্রম লাগে না।

বর্তমানে কিছু কিছু স্থানে দেখা মেলে লাঙ্গল-জোয়ালের। এমনি এক চিত্রের দেখা মিলল নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়নের মান্দুর দোলায়। দেখা যায় কৃষক হাফিজুল ইসলাম তার কেনা দুটি মহিষ দিয়ে হালচাষ করে মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন।

পড়তে পারেন: হারিয়ে গেছে তেলবিহীন যান “গরুর গাড়ি”

তিনি বলেন, আমি এখনো ছোট ছোট জমিতে যেখানে বড় হাল(ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার) ঢুকতে অসুবিধা হয় বা আসতে চায় না সেসব জমিতে মহিষ দিয়ে হালচাষ করি। একটা সময় প্রতিনিয়ত মহিষ দিয়ে হালচাষ করে আবাদ করছিলাম কিন্তু বর্তমানে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার থাকার কারনে আর মহিষ দিয়ে বেশি হালচাষ করি না।

ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের কৃষক নীলকান্ত রায় বলেন, মহিষ পোষা অনেক কষ্টকর, অনেক খাদ্যও লাগে এবং দেখাশুনা করার জন্য সবসময় একটা লোকের দরকার হয়। তাছাড়া এখন ট্রাক্টর,পাওয়ার টিলারের কারণে হালচাষ করা অনেক সহজ হয়েছে এজন্য মহিষ দিয়ে হালচাষের দরকার হয় না।

মহিষের হালে খরচ বিষয়ে তিনি বলেন, ১৫ বছর আগেও গরু-মহিষের হাল সচরাচর ছিল এখন আর নেই। বিগত এক যুগে কৃষির আধুনিকায়নে আদিম পদ্ধতি উঠে যাচ্ছে। অনেক আগে ৫০ টাকায় ১ বিঘা হাল পাওয়া যেতো। তারপর ১৫০ টাকা হয়, তারপর ৪০০ টাকা। এরপর আর পাওয়া যায়না।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ