গবাদিপশুর গলাফুলে গেলে আদিম চিকিৎিসা পদ্ধতি অনুসরণ করেন অনেকে। একটা পুটুলিতে গরম লবন নিয়ে ফুলা জায়গাতে সেদ দেন। এতে খুব বেশি উপকার হয়না। কারন গলাফুলা একটা ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। এ রোগে মারা যায় পশু। গবাদিপশুর গলাফুলে গেলে করণীয় লিখেছেন আব্দুর রহমান।

গলাফুলা (hemorrhagic septicemia) এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ ইউরোপের কিছু দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি বেশি পরিলক্ষিত হয়। গলাফুলা একটি তীব্র প্রকৃতির রোগ যা গরু এবং মহিষকে আক্রান্ত করে। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা Pasteurella multocida দ্বারা সংঘটিত হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি।

পশুর শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় এ রোগের জীবাণু বিদ্যমান থাকে। কোনো কারণে যদি পশু ধকল যেমন ঠাণ্ডা, অধিক গরম, ভ্রমণজনিত দুর্বলতা ইত্যাদির সম্মুখীন হয় তখনই এ রোগ বেশি দেখা দেয়। গলাফুলা রোগের প্রচলিত নাম ব্যাংগা, ঘটু, গলগটু, গলবেরা ইত্যাদি।

রোগের লক্ষণ

এ রোগ অতি তীব্র ও তীব্র এ দুইভাবে হতে পারে।
অতি তীব্র প্রকৃতির রোগে হঠাৎ জ্বর হয়ে মুখ ও নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। পশু অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে ও খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু ঘটে। তীব্র প্রকৃতির রোগে আক্রান্ত পশু ২৪ ঘন্টার অধিক বেঁচে থাকে। এ সময় পশুর এডিমা দেখা দেয় যা প্রথমে গলার নিচে, পরে চোয়াল, তলপেট এবং নাক, মুখ, মাথা ও কানের অংশে বিস্তৃত হয়।

গলায় স্ফীতি থাকলে গলার ভেতর ঘড় ঘড় শব্দ হয়, যা অনেক সময় দূর থেকে শোনা যায়। প্রদাহযুক্ত ফোলা স্থানে ব্যথা থাকে এবং হাত দিলে গরম ও শক্ত অনুভূত হয়। মুচ দিয়ে ছিদ্র করলে উক্ত স্থান হতে হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ বের হয়ে আসে। অনেক সময় কাশি হয় এবং চোখে পিচুটি দেখা যায়। নাক দিয়ে ঘন সাদা শ্লেষ্মা পড়তে দেখা যায়। সাধারণত লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আক্রান্ত পশু মারা যায়।

আরোও পড়ুন: গবাদিপশুর কলিজা পচা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

গরুর শরীর খসখসে হওয়া এবং ক্ষত’র প্রতিকার

চিকিৎসা ও প্রতিকার

আক্রান্ত পশুর চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সুফল পাওয়া যাবে না। তাই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ রোগের চিকিৎসায় Ampicillin, Tetracycline, Erythromycin, Sulphonamide জাতীয় ইনজেকশন গভীর মাংসে দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।

এ রোগ উচ্ছেদ করা অসম্ভব কারণ এ রোগের জীবাণু স্বাভাবিক অবস্থায় পশুর দেহে থাকে। তবে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

১. রোগাক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে সুস্থ পশুকে টিকা দানের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. মড়কের সময় পশুর চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৩. হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পশুর পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

গবাদিপশুর গলাফুলে গেলে করণীয় লিখেছেন মো. আব্দুর রহমান শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।