মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: অস্বাভাবিকভাবে গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রাজশাহীর খামারিরা। খাদ্যের দামের প্রভাব পড়েছে দুধ ও মাংস উৎপাদনে। তারা বলছেন, প্রতিদিন পশুখাদ্যের খরচের তুলনায় লাভের পরিমাণ হারিয়ে যাচ্ছে। দুধ উৎপাদনের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না হওয়ায় গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছে ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সামনে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীতে বিপুল সংখ্যক গরু, ছাগল, মহিষ ভেড়া মোটাতাজা করার কাজে নেমেছেন খামারিরা। গমের ভুষি, খৈল, খড়, কাঁচা ঘাসসহ অন্যান্য খাবার খাওয়ানো হচ্ছে গরুকে। কিন্তু করোনাকালের শুরু থেকে ক্রমাগত গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন অনেকে। সঠিকভাবে গরুর খাবার দিতে পারছেন না। যে তুলনায় পশুর দৈহিক বৃদ্ধি হওয়ার কথা তা হচ্ছে না।

পড়তে পারেন: রাজশাহীতে লকডাউনে দুধে ক্ষতি ১২ কোটি টাকা

রাজশাহী ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ফিড বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা গেছে , গমের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ থেকে ২০০০ টাকা বস্তা, ভুট্টার গুঁড়া ১৭০০ টাকা বস্তা, যব ৫০ টাকা কেজি, ধানের কুঁড়া ৭৫০ টাকা বস্তা, খৈল ৪৫০০ টাকা থেকে ৫০০০টাকা বস্তা, খেসারির ভুসি ১৬০০ টাকা (৩০ কেজি) বস্তা এবং ঘাস প্রতি আঁটি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কাউফিড প্রতি বস্তা ১৫০০ টাকা। অ্যাঙ্কর ডালের ভুসি ১২০০ টাকা বস্তা দরে কিনতে হচ্ছে। ধানের খড় কিনতে হচ্ছে প্রতি আঁটি ৫/৬ টাকা দরে।

প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতবারে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ২৪ লাখ ৮৮ হাজার ১৬০টি। ২৫ হাজার ২৬১ মহিষ, ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩২ ছাগল এবং ১৪ লাখ ৪০ ভেড়া। তবে, এবারে কোরবানিযোগ্য পশুর হিসাব পাওয়া যায়নি।

পড়তে পারেন: নওগাঁয় গো-খাদ্য সংকট, কচুরিপানায় ভরসা!

রাজশাহীর পবা উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মোছাঃ সাথী আক্তার (৩২)। তার খামারে রয়েছে ১৮টি গাভী। খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে পড়েছেন বিপাকে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে খাবারের দাম বাড়ছেই। আগে যে ভুসির বস্তা ১৪০০ টাকায় কিনেছি সেটা এখন ১৬৫০ থেকে ২ হাজার টাকা। অ্যাংকর ডালের ভুসি ২৫ কেজির বস্তা কিনতে হচ্ছে ১২৫০ টাকায়। সেই তুলনায় দুধের দাম নাই। আগেও দুধ বিক্রি করেছি ৫০ টাকা এখনও ৫০ টাকা। লাভের ভাগ উধাও।

নগরীর কাটাখালী শ্যামনগর এলাকার খামারি রবিউল করিম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, লকডাউনের শুরু থেকে তাঁর লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। বাঁকিতে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হয়ে পরে পাননি টাকা। করোনার পর সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। খাদ্যের দামের সাথে পাল্লা দিয়ে টেকা দায়।

নগরীর বনগ্রাম এলাকার মকবুল, বারোরাস্তার মোড় এলাকার ফরিদ, টিকাপাড়া এলাকার মিনসহ অন্তুত ১০ জন খামারি জানান, খাদ্যের দামে নাজেহাল তারা সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সঠিক পরিকল্পনায় কিভাবে ডেইরি শিল্পকে বাঁচানো যায় তার নকশা আঁকতে বলছেন খামারিরা। বারবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে তারা ধরনা দিয়েছেন খাদ্যের দাম কমানো হোক। কিন্তু কোন কাজে আসছে না বলে দাবি তাদের।

পড়তে পারেন: ব্রয়লার, সোনালী ও লেয়ার মুরগির ফিডের বর্তমান বাজারদর

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মোঃ আখতার হোসেন জেলায় পশু-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে বলেন, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি হয়েছে। অনেক খামারি আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু খাদ্যের দাম কমানোর বিষয়ে আমাদের কোন করণীয় নেই। তারপরও খামারিদের সমস্যার কথা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যা থাকায় আমরা দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারিনি।

তিনি বলেন, রাজশাহীতে মাথাপিছু ২২০ গ্রাম করে মোট ৬ দশমিক ২ লাখ মেট্রিকটন দুধ খেতে পারছেন। কিন্তু আমাদের চাহিদা ৭ লাখ মেট্রিকটন। তবে, যা সমস্যা আছে তা কাটিয়ে উঠে আগামী বছরের মধ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাব। সারাদেশে মাছ, মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হয়েছে। অনেক শিক্ষিত মানুষ এখন প্রাণিসম্পদ খাতে বিনিয়োগ করছে। তারা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে যতটুকু সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে খামারিরা ততটুকু পাবেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ