ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মার্কিন কৃষি বিভাগের  (ইউএসডিএ) প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি বছরে চাল উৎপাদন কমতে পারে সাড়ে ৫ লাখ টন। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানাবিধ কারণে চলতি অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন কমতে পারে বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

চলতি অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৯৫ লাখ টন। অন্যদিকে ইউএসডিএর প্রক্ষেপণ বলছে, এবার দেশে কৃষিপণ্যটির (মিলড রাইস) উৎপাদন কমে দাঁড়াতে পারে ৩ কোটি ৫৩ লাখ টনে। গত অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টন। সে হিসেবে এবার দেশে পণ্যটির উৎপাদন কমতে যাচ্ছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন।

ইউএসডিএর প্রক্ষেপণে বলা হয়, সরকারের আউশ ধান উৎপাদনসংক্রান্ত নানাবিধ প্রণোদনা কার্যক্রম ও পদক্ষেপের কারণে আসন্ন আউশ মৌসুমে চালের উৎপাদন বাড়তে পারে। গত অর্থবছরে দেশে আউশ চালের উৎপাদন হয়েছিল সাড়ে ২৪ লাখ টন, যা চলতি অর্থবছরে আড়াই লাখ টন বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২৭ লাখ টনে। তবে আউশের উৎপাদন বাড়লেও তা সার্বিকভাবে আমন ও বোরো মৌসুমের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।

ইউএসডিএর হালনাগাদ গ্লোবাল এগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের (গেইন) প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মূলত আমন ধানের উৎপাদনে বড় বিপর্যয়ের কারণেই চলতি অর্থবছরে চালের উৎপাদনে ভাটা পড়তে যাচ্ছে। গত অর্থবছরে দেশে আমন মৌসুমের চাল উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে তা নেমে আসতে পারে ১ কোটি ৩৩ লাখ টনে। সে হিসেবে এবারের আমন মৌসুমে চালের উৎপাদন কমতে যাচ্ছে প্রায় সাত লাখ টন।

এছাড়া আগামী বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন (১ কোটি ৯৩ লাখ টন) গত বোরো মৌসুমের উৎপাদনের (১ কোটি ৯৪ লাখ টন) তুলনায় কমতে পারে এক লাখ টন। তবে আউশের মৌসুমে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এ উৎপাদন হ্রাসের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে গিয়ে দাঁড়াতে পারে সাড়ে পাঁচ লাখ টনে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মোট চাল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৮৭ লাখ ২৪ হাজার টন (মাঠপর্যায়ে ধান থেকে চালে রূপান্তরিত)। চলতি অর্থবছরে তা ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৭৪ হাজার টনে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের। তবে ইউএসডিএর আশঙ্কা বলছে, এবার মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য অনুযায়ী উৎপাদনের সম্ভাবনা কম।

এদিকে দেশে চালের সরকারি মজুদ অব্যাহত গতিতে হ্রাস পাচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত বুধবার পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য বলছে, ওইদিন পর্যন্ত দেশে খাদ্যশস্যের মোট মজুদের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৪১ হাজার টন। এর মধ্যে চালের মজুদ রয়েছে ৬ লাখ ৭০ হাজার টন। অন্যদিকে এর ঠিক চার সপ্তাহ আগে গত ১৪ অক্টোবর দেশে খাদ্যশস্যের মোট মজুদের পরিমাণ ছিল প্রায় ১১ লাখ ৯৬ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ছিল প্রায় ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৮৬০ টন।

এ অবস্থায় মজুদ পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকভাবে তিন লাখ টন চাল আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কয়েক মাস ধরেই দেশে চালের বাজার বেশ ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন বাজারে এখন প্রতি কেজি স্বর্ণা, মোটা চাল ও পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৮ টাকায়। ভালো মানের ব্রি ধান-২৮ প্রতি কেজি ৫০-৫২ এবং মিনিকেট ও নাজিরশাইল ৫৪-৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া উন্নত মানের প্রতি কেজি মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়।

চলতি বছরে চাল উৎপাদন কমতে পারে সাড়ে ৫ লাখ টন শিরোনামে সংবাদের তথ্য বণিক বার্তা থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ