ডা. ভবতোষ কান্তি সরকার, যশোর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা, এগ্রিকেয়ার২৪.ডেস্ক: আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে  ফিল্ড মিল্ক আমদানীর লক্ষ্যে আমদানী শুল্ক  ২৫% থেকে কমিয়ে ১০% নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে অনেক বড় ক্ষতির মুখোমুখি হবেন দেশের ডেইরি শিল্পের খামারিরা।

সব পর্যায়ের খামারিরা বেকায়দায় পরার শঙ্কায় দিন যাপন করছেন। পাঠক আসুন জেনে নেয়া যাক খামারিদের অবস্থা ও তাদের কথা। খামার পরিদর্শন করে খামারিদের সাথে কথা বলে লিখেছেন ডা. ভবতোষ কান্তি সরকার, যশোর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা।

অদ্য ২১ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা বাজার সংলগ্ন মোঃ মুসা বিশ্বাসের ‘বিশ্বাস ডেইরি ফার্ম’ পরিদর্শন করি।

খামারটিতে এখন দশটি গাভী ও পাঁচটি বাছুর রয়েছে। যার আটটি গাভীই এখন গর্ভবতী, চারটি গাভী এখন দুধ দিচ্ছে, তবে পরিমাণ কম। দৈনিক গড়ে এখন পঁচিশ (২৫) কেজি। মুসা বিশ্বাসের চোখে-মুখে বেশ খুশির ছাপ। ”স্যার একসংগে অনেক বাছুর পাব, অনেক দুধ হবে।”-মুসা সাহেব জানান।

চোখের পলকে বদল হয় মুখচ্ছবি। জিজ্ঞেস করি, “মুসা সাহেব, কোনো সমস্যা?” বিলম্বে জবাব আসে, “স্যার, আমাদের নিয়ে কেউ ভাবে না। গরুর খাঁটি দুধের মূল্য নাই। দুধের চেয়ে বেশি দামে পানি বিক্রি হয় ।

দেশের টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে বস্তাবন্দি পচা দুধ আনার এত শখ কেন? গরুর খাবারের দাম আরো বাড়বে। ভুট্টা-গম এসব গরু ছাগল হাঁস মুরগীর খাদ্য তো? তাই অল্প কয়জন চাষী বেশি বেশি লাভ করে ভালো করে বাচুক। আর দেশের গরু-ছাগল হাঁস মুরগী সব মরুক।

খামারির দরকার নাই। সব ভুট্টা তখন মানুষে খাবে। আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী দুধ- মাংস- ডিম সব বিদেশ থেকে আমদানির ব্যবস্থা করবেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগ তখন বিলুপ্ত করা হবে।

এ কোন্ দেশ? ধানের চেয়ে খড়ের দাম বেশি, চালের চেয়ে কুড়ার দাম, গমের চেয়ে ভূষির দাম এবং তেলের চেয়ে খইলের দাম বেশি। সব ভদ্রলোকেরা দুধ খান, দুধ না খান দই পনির ঘি বাটার মিষ্টি সুজি সেমাই পায়েস খান।

দই মিষ্টি মাংস ডিম না হলে আপনার সন্তানের পাতে ভাত ওঠে না, মেহমানদারি হয় না, সামাজিক সম্মান প্রতিপত্তি বাড়ে না। পর্যাপ্ত ফাস্টফুডে বর্তমান প্রজন্ম অভ্যস্ত হচ্ছে, যার প্রায় সবটাই মাংস বা ডিমের তৈরি। আর এভাবেই আমাদের ছেলে-মেয়েরা ছয়-সাত ফুট লম্বা হচ্ছে, মেধাবী হচ্ছে, মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে।

কিভাবে এসব সম্ভব হয়েছে–মন্ত্রী-মিনিস্টার বড় বড় শিক্ষিত লোকেরা কখনও তলিয়ে দেখেছেন? পর্যাপ্ত ডিম দুধ মাংস খেয়েই হয়েছে। আমাদের মত গরীব মাঝারি কৃষকদের অমানুষিক পরিশ্রমে, ঘাম-রক্তের বিনিময়ে আর আপনাদের নিরন্তর সহযোগিতায় যেগুলো উৎপাদন হয়। অথচ মন্ত্রী-মিনিস্টাররা স্যার আমাদের ভাগ্য নিয়ে খেলা করে।”

মুসা সাহেবের একেবারে যথার্থ ও সম্পূর্ণ যৌক্তিক এই বক্তব্যে বাধাগ্রস্ত করার কোন সুযোগই আমি পাইনি। হয়তো মাননীয় অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তার ক্ষোভের বহিপ্রর্কাশ ঘটিয়েছেন তিনি।

কিন্তু এদেশের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের সাথে মিলে-মিশে একাকার হয়ে আছে যে গবাদি পশুপাখি লালন-পালনের পেশাটি, যে মহান পেশাটি পুষ্টিসমৃদ্ধ মেধাবী জাতি বিনির্মাণ, দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান, জৈব সার ও জ্বালানি সংস্থান এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া, যে সাধারণ মানুষগুলোর ভাগ্য এর সাথে জড়িত তাদের উৎসাহিত-অনুপ্রাণিত করাই হবে সময়ের যথার্থ দাবি।

জয়তু মুসা সাহেব! জয়তু শহিদুল, জয়নাল, রওশন আরা!! জয়তু এদেশের সকল দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারি ভাই ও বোনেরা!!!