জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: জাটকা রক্ষার ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এবছরও ১৬ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০১৯ পালন শুরু হয়েছে।

জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ শুরু আজ শনিবার (১৬ মার্চ) থেকে আগামী ২২ মার্চ পর্যন্ত চলবে। শুক্রবার জাতীয় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু সংবাদসম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ সফলভাবে পালনে সবার সহায়তা কামনা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালে জেলেদের ভিজিএফ খাদ্যসহায়তার পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লক্ষ ৪৮ হাজার ৬৭৪টি জেলে পরিবারের জন্য ৪০ কেজি হারে মোট ৩৯ হাজার ৭৮৮ মে.টন চাল বরাদ্দ প্রদান করেছে।

চলতি বছরে উপকূলীয় জেলা ছাড়াও জাটকার সম্প্রসারিত নদী তীরবতী ১৩টি জেলার ৫১ উপজেলায় মোট ৪৭,৪৮০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

গত তিনবছর যাবৎ মা-ইলিশসংরক্ষণে জেলেদের ভিজিএফ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে এবং চলতি মৌসুমে ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার ৭০৯টি জেলে পরিবারকে ২০ কেজি হারে মোট ৭৯১৪ মে.টন চাল দেয়া হয়েছে।

২০০৮-০৯ হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ১১ বছরে মোট ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৫২ মে.টন খাদ্যসহায়তা দেয়া হলেও ২০০৪-০৫ হতে ২০০৭-০৮ অর্থবছর পর্যন্ত এ সহায়তার পরিমাণ ছিল মোট ৬ হাজার ৯০৬ মে.টন।

ইলিশকে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই পণ্য) উল্লেখ করে বলেন, ইলিশ আহরণে উপকূলীয় মৎস্যজীবীদের সরাসরি প্রায় ৫ লাখ এবং পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ২৫ লাখ লোক জড়িত রয়েছে। নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত একটানা ৬ মাস ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি সাইজের জাটকাধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পৃথিবীর আরো ১৩টি দেশে ইলিশ পাওয়া গেলেও আমাদের সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে ইলিশের রয়েছে বিরাট অবদান। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশ এবং দেশের মোট মৎস্যউৎপাদনের ১২ শতাংশ। তাই ইলিশ আমাদের আমিষের চাহিদাপূরণের পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও দারিদ্র বিমোচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাপালন করে আসছে।

ইলিশসম্পদরক্ষা এবং এর ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গৃহীত কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকাধরা নিষিদ্ধকালে মৎস্য সংরক্ষণ আইনের আওতায় নদী, মাছঘাট, মৎস্যআড়ত ও বাজারে অভিযানসহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এ সময়ে জেলেরা যাতে ক্ষুধায় কষ্ট না পায়, সেজন্য ভিজিএফ খাদ্যসহায়তা প্রদান, জাটকাআহরণে বিরত অতিদরিদ্র জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানসৃষ্টি, পদ্মা, মেঘনা, আন্ধারমানিক ও তেঁতুলিয়াসহ অন্যান্য উপকূলীয় নদীতে জাটকার বিচরণক্ষেত্রে ইলিশের অভয়াশ্রমস্থাপন,মা-ইলিশরক্ষায় প্রধান প্রজননমৌসুমে মোট ২২দিন (আশ্বিন মাসের প্রথম উদিত চাদেঁর পূর্ণিমার ৪দিন আগে, ১৭দিন পরে ও পূর্ণিমার দিনসহ মোট ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়) প্রজননএলাকাসহ দেশব্যাপী ইলিশআহরণ, বিপণন, পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে জনসচেতনতাসৃষ্টি, মোবাইলকোর্ট ও অভিযান পরিচালনা এবং জেলেদের ভিজিএফ খাদ্যসহায়তা প্রদান, উপকূলীয় এলাকায় জাটকাসহ অন্যান্য মৎস্যসম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জালনির্মূলে ‘সম্মিলিত বিশেষ অভিযান’ পরিচালনাছাড়াও প্রতিবছর জাটকাসংরক্ষণ সপ্তাহ পালন করা হয়ে থাকে।

তিনি জানান বিগত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২.৯৯ লক্ষ মে.টন সেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫.১৭ লক্ষ মে.টনে উন্নীত হয়েছে। এমনকি মা-ইলিশ রক্ষা পাচ্ছে এবং নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারছে বলেই নিম্ন মেঘনা হতে ‘জাটকা’ আজ পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমায় বিস্তৃতিলাভ করেছে।

পদ্মানদীর দুইপাড়ের জেলাসমূহ যেমন-ফরিদপুর, রাজবাড়ী, পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং যমুনা নদীর তীরবর্তী জেলা সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। জাটকা ও মা-ইলিশ রক্ষায় চলমান কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়ন করা গেলে সারাবছর ইলিশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কৃষির সকল সংবাদ এর জন্য আমাদের সংগে থাকুন।