পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বার্তা ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কর্মব্যস্ত জীবনে প্রতিদিন বাজারে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সেই কষ্টকে লাঘব হয়েছে এখন। রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজে রেখে কাঁচা সবজি বা মাছ মাংস খেতে পারবেন। আসলে ডিপ ফ্রিজে মাছ, মাংস কতদিন রাখা উচিত এ বিষয়ে জানা প্রয়োজন।

আবার ফ্রিজে রাখার পর অনেক সময় কেটে গেছে। ভাবলেন, এতো দিনের মাংস খাওয়া ঠিক হবে? এমন প্রশ্নের উত্তর জেনে রাখা ভালো।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর মতে ডিপ ফ্রিজে অনেক দিন মাংস রেখে খাওয়া যায়। কাঁচা মাছ, মাংস ডিপ ফ্রিজে থাকলে নষ্ট হয় না এটা ঠিক, কিন্তু স্বাদ আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেশি দিন ফ্রিজে না রেখে খাওয়া ভালো।

ডিপ ফ্রিজে মাছ, মাংস কতদিন রাখা উচিত

মাংস

১. কাঁচা মুরগি, কবুতর অথবা টার্কির মাংস ডিপ ফ্রিজে সাধারণত এক বছর থেকে নয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে স্বাদে ভিন্নতা আসতে পারে। কারণ সময়ের সাথে সাথে স্বাদ কমে যায়।

২. গরু, খাসির মাংস ডিপ ফ্রিজে ১২মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।

৩. অনেকে গরু, খাসি বা মুরগির কিমা ডিপে রাখেন। সেক্ষেত্রে তিন থেকে চার মাস ভালো থাকবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

বাঁশের বানা দিয়ে দীর্ঘদিন পেঁয়াজ সংরক্ষণের উপায়

যেভাবে বানাবেন আলুর রকমারি খাবার

বাড়িতে বালু দিয়ে দীর্ঘদিন আলু সংরক্ষণের কৌশল

মাছ

ডিপ ফ্রিজে মাছ সংরক্ষণ সাধারণত মাছের ধরনের ওপর নির্ভর করে।

১. চর্বিযুক্ত মাছ যেমন স্যামন, টুনা ডিপ ফ্রিজে দুই থেকে তিন মাস ভালো থাকবে।

২. অন্যান্য মাছ ছয় থেকে আট মাস ভালো থাকে।

৩. সামুদ্রিক মাছও চার থেকে আট মাস ভালো থাকে।

৪. চিংড়ি মাছ ছয় থেকে আঠারো মাস ভালো থাকে।

মাছ বা মাংস খুব দ্রুত ফ্রিজে ঢুকাতে হয়। বাজার থেকে কিনে এনে দ্রুত ফ্রিজে ঢুকাতে হবে। একবারে সব এক প্যাকেটে ঢুকিয়ে রাখবেন না। ছোট ছোট করে প্যাকেট করে রাখুন। এতে তাড়াতাড়ি মাছ মাংস বরফ হবে। ভালো থাকবে।

ডিপ ফ্রিজে মাছ, মাংস কতদিন রাখা উচিত সংবাদের তথ্য প্রকাশ করেছে প্যারাডে।

ফ্রিজ ছাড়াই গরুর মাংস দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায়

রেসিপি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আর মাত্র দিন কয়েক পরেই কোরবানির ঈদ। ঈদে গরুর মাংস ফ্রিজে রাখেন অনেকে। তবে, যাদের বাড়িতে ফ্রিজ নাই তারা কি করবেন? আসুন ফ্রিজ ছাড়াই গরুর মাংস দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায় জেনে নিই।

গরুর মাংস সংরক্ষণ করার প্রাচীন উপায় শুটকি তৈরি করা। সাধারণত আমরা শুটকি বলতে শুকনা মাছকে বুঝলেও একসময় মাংসকেও শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হতো। বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাংস শুকিয়ে কয়েক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। মাংসের শুটকি তৈরির প্রক্রিয়া—

মাংসের শুটকি

প্রথমে মাংস টুকরো করে কেটে ধুয়ে হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করুন। খুব ভালো করে সেদ্ধ করতে হবে; যেন ভেতরে কাঁচা না থাকে। মনে রাখবেন, কাঁচা মাংসের শুটকি হয় না। কারণ মাংস কাঁচা থাকলে পচে গন্ধ ছড়ায়।

সেদ্ধ হয়ে গেলে বড় চালুনিতে ঢেলে পানি ঝরিয়ে ঠান্ডা করুন। এবার মাংসের টুকরোগুলো গেঁথে কড়া রোদে শুকিয়ে নিন। রোদে শুকালে মাংস বেশি দিন ভালো থাকে। কোনো কারণে যদি রোদ না পাওয়া যায় তবে চুলার আঁচে শুকাতে পারেন। মাংস ভালো করে শুকিয়ে গেলে তার থেকে খুলে এয়ার টাইট টিনে বন্ধ করে রাখুন।

পড়তে পারেন: চলুন জেনে নিই মাংস বিরিয়ানি রেসিপি

মাংসের শুটকি রান্নার পদ্ধতিও বেশ সোজা। গরম পানি করে তাতে টুকরোগুলো ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর থেঁতো করে মাংসের ঝুরি রান্না করা হয়। চাইলে ভুনাও করতে পারেন।

ঘরোয়া পদ্ধতি: আদা গুঁড়া, মিট এনহ্যান্সার, সয়া প্রোটিন পাউডার, সিরকা, কিউরিং সল্ট, ভেজিটেবল প্রোটিন, পাপরিকা পাউডার, সেলারি পাউডার এবং আলু দিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করা সম্ভব।

ড্রাইং পদ্ধতি: এটি মাংস সংরক্ষণের একটি পুরোনো পদ্ধতি। মূলত অতীতে যখন রেফ্রিজারেটর ছিল না, তখন এ পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করা হতো। এ পদ্ধতি অনুযায়ী, মাংস রোদে বা চুলায় জ্বাল দিয়ে ৭০ থেকে ৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সম্পূর্ণ পানি শুকিয়ে নিতে হয়। এটি অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ সাশ্রয়ী। এই পদ্ধতিতে মাংসের চর্বি ফেলে দিয়ে পাতলা করে কেটে ভ্যাকিউম-সিল্ড করে ফ্রিজে ১ বছর পর্যন্ত রাখা যায়।

পড়তে পারেন: কোরবানির ঈদে রান্না করুন গরুর মাংসের শাহী রেজালা

স্মোকিং পদ্ধতি: মাংস সংরক্ষণে এটিও একটি পুরোনো পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে দুটি উপায়ে মাংস মাংস সংরক্ষণ করা হয়। একটি হলো হট স্মোকিং আর অন্যটি হলো কোল্ড স্মোকিং। হট স্মোকিং এর ক্ষেত্রে ৩০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় মাংস পোড়ানো হয়। আর কোল্ড স্মোকিং পদ্ধতিতে ১২-২৪ ঘণ্টা স্মোকিং আগুনে ৮৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় মাংস পোড়াতে হয়। ফলে তাপের ধোঁয়ায় মাংসের জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়। সাধারণত মাংস ব্যবসায়ীরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন।

সল্টিং পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে লবণ, কিউরিং লবণ, মসলা এবং ব্রাউন চিনি অথবা খাবার লবণ, সোডিয়াম নাইট্রেট ও সোডিয়াম ল্যাকটেট দিয়ে মাংস মেখে ২৪ ঘণ্টা রেখে ফ্রিজে ১ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতির বিশেষত্ব মাংসের অক্সিডেটিভ ও মাইক্রোবিয়াল পচন প্রতিরোধ। টিএফডিএ অনুমোদিত এই সল্টিং বা লবণ পদ্ধতিতে মাংস সবচেয়ে বেশি টাটকা এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন হয়ে থাকে।

পড়তে পারেন: বাড়িতেই তৈরি করুন কিমা-আলুর চপ

ক্যানিং পদ্ধতি: এই পদ্ধতিটি থার্মাল স্টেরিলাইজেশন নামেও পরিচিত। এই পদ্ধতিতে প্রথমে প্রায় ২৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় মাংস ড্রাই করে ঠান্ডা করা হয়। কাচের জার বা বয়ামের মুখ আটকে তাতে এই মাংস প্রায় এক বছর রাখা যায়। এই পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করতে গেলে মাংস কাটা, রান্নার আগে সিমিং, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ঠান্ডা করা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়।

কোল্ড স্টেরিলাইজেশন পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে মাংসের সঙ্গে আয়োনাইজড রেডিয়েশন, অর্থাৎ কোবাল্ট‌, গামা রেডিয়েশন, আল্ট্রা ভায়োলেট রেডিয়েশন ইত্যাদির মতো রেডিয়েন্ট এনার্জি ব্যবহার করা হয়। মাংস সংরক্ষণের নতুন এই পদ্ধতিতে অধিকাংশ মাইক্রো অর্গানিজম মেরে ফেলা হয়। ফলে মাংস পুষ্টিগুণাগুণ অটুট থাকে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ