মেহেদী হাসান, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনা পরিস্থিতিতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রাজশাহীর বিভিন্ন জেলা উপজেলা এলাকায় ডিমের দামে ধ্বস নেমে এসেছে। বর্তমানে লেয়ার লাল মুরগির এক হালি (চারটি) ডিম ২৪ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক অবস্থায় লাল ডিম ৩৬ টাকা হালি এবং সাদা ৩২ টাকা হালি বিক্রি হয়ে থাকে বলে জানান পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। ফলে আগের তুলনায় ডিমের এক হালিতেই নেই ১০ থেকে ১১ টাকা।

এহেন অবস্থায় মাথায় হাত খামারিদের। সেইসাথে ব্যবসা মন্দা হওয়া সত্বেও আশার কথা বলছেন রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ও পাইকারি ডিম ক্রেতা বিক্রেতারা। তারা বলছেন খুব শীঘ্রই ডিমের দাম বাড়বে। আজ বুধবার (১৩ মে ২০২০) রাজশাহীর সাহেব বাজার, লক্ষীপুর কাঁচা বাজার এলাকা ঘুরে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা ডিম বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

নগরীর সাহেব বাজার কলাপট্রির পাইকারি ডিম বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম মিঠু এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ‘ডিমের দাম একবারেই কম। লস দিয়ে খামারিরা ডিম বিক্রি করছেন। ইচ্ছে হলেই তো আর মুরগি বিক্রি কিংবা ব্যবসা বাদ দেওয়া যায় না। এখন লকডাউনের জন্য মানুষ বের হচ্ছে না। ডিম বিক্রি হচ্ছে কম। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ঈদের পর দাম বাড়বে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। আগের মতো ডিমের আমদানি নেই। অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। পাইকারি প্রতি ১০০ লাল ডিম ৪৯০ টাকা, সাদা ৪২০ টাকা করে কিনে লাল ৬০০ টাকা এবং সাদা ৫০০ টাকা বিক্রি করছি। ঈদের পর দাম বেড়ে হাহাকার হয়ে যাবে’।

হাঁস, মুরগির ডিম ব্যবসায়ী ও পাইকারি সরবরাহকারী আলহাজ¦ মো: আব্দুল জলিল মিয়া এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ‘ডিমের দাম বাড়াবেই। এভাবে চললে তো আর খামারিরা বাঁচবে না। প্রতি ডিমে ৬ টাকা করচ করে বিক্রি করছেন ৫ টাকা। ডিমের বাজার এখন রমজান মাসে এমনিতেই কম, তার ওপর করনোর লকডাউন আছে। বাইরের ডিম সরাসরি আনা নেওয়া শুরু হলে দাম আগের চাইতে ২-৪ টাকা বেশি হতে পারে। লাল ডিম ২৫ টাকা, সাদা ডিম ২০ টাকা, সোনালি মুরগির ডিম ২৬ টাকা হালি বিক্রি করছি’।

নগরীর চন্দ্রিমা থানা এলাকার লেয়ার মুরগির খামারি রুবেল হক বলেন, ডিমের দাম কমে যাওয়ায় লোকসান হচ্ছে। মুরগির খাবারের টাকাই জুটছে না। খাবারের সাথে অষুধ আছে। নানান খরচ করে ডিমের আবার দাম নেই। দাম না বাড়লে আমাদের বাঁচার উপায় নাই।

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ডিম কাঁচা মালের মধ্যে পড়ার কারনে সঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে, রাজশাহীর প্রায় ৪০ ভাগ থেকে ৫০ ভাগ মাংস উৎপাদন খামার বন্ধ হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। ডিমের বাজারে এখন দাম খুবই কম। ডিমের দাম বাড়ার জন্য প্রয়োজন মানুষ হাটে- বাজারে যেতে পারা। আতঙ্কের কারণে মানুষ বের হচ্ছে না। ঈদের পর সব ধরনের ডিমের দাম বাড়ার জোরালো সম্ভবনা আছ।

খামারিদের ভেঙ্গে না পড়তে আশ্বাস দেন রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অন্তিম কুমার সরকার। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, অবশ্যই ডিমের দাম বৃদ্ধি পাবে। করোনার কারণে মানুষ স্বাভবিক ভাবে বের হতে পারছে না। সবকিছু স্বাভাবিক হলে ডিমের দাম আগের মতো হয়ে যাবে।

তিনি আরোও বলেন, সামনে কুরবানির জন্য গরু মোটাতাজা করছেন অনেকেই। এতে গরু জবাই কম হচ্ছে। এ কারণে মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে। মুরগি খামারিদের মধ্যে ডিম উৎপাদনকারীরা একটু সমস্যায় আছেন। কিছুদিনের মধ্যে এটা স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে।