মেহেদী হাসান, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ডিমের দামে সর্বস্বান্ত লেয়ার মুরগির খামারিরা। বর্তমান বাজারদরে উঠছেনা ডিমের উৎপাদন খরচ। কেউ খামার বিক্রি করে দিচ্ছেন আবার কেউ লাখ লাখ টাকা লোকসানে খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন।

ডিমের অস্বাভাবিক দরপতনে হতাশ লেয়ার মুরগির খামারিরা। একদিকে খাদ্য ও মেডিসিনের দাম বাড়তে থাকায় মুরগি হয়ে উঠেছে গলার কাঁটা। নতুনভাবে ডিম উৎপাদনে আসা খামারিরা একেবারে ভেঙে পড়েছেন। রাজশাহীতে ইতোমধ্যে ৬০ ভাগ ডিম উৎপাদনকারী খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কয়েকশ কোটি টাকার বিনিয়োগ হারিয়েছেন খামারিরা। এছাড়া ৫০ শতাংশ মুরগি মারা গেছে বলে জানিয়েছেন পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক।

তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, সিন্ডিকেটের কবলে পোল্ট্রি খাত ধ্বংশের পথে। একদিকে করোনা অন্যদিকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে খামারিরা সর্বস্বান্ত। প্রতিপিস ডিমে এখন খামারিদের লোকসান গুণতে হচ্ছে এক থেকে দেড় টাকা। সাড়ে ৬ টাকা উৎপাদন খরচ হলেও তা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫ টাকায়। সাদা ডিমের দাম আরোও কম।

আরোও পড়ুন: সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে খাদ্যের দামে বিপাকে পোল্ট্রি খামারিরা

চার মাস আগেও রাজশাহীতে মুরগির ডিম উৎপাদনকারী লেয়ার মুরগির খামার ছিল দুই হাজার। এসব খামারে মুরগির সংখ্যা ছিল প্রায় ২০ লাখ। গত ডিসেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে মুরগির ডিমের দামে ধস নেমেছে। ডিমপ্রতি এক থেকে দেড় টাকা দাম কমেছে। তার ওপর নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে মুরগি। ফলে ইতোমধ্যে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান এই সংগঠক।

রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের লেয়ার খামারি আলম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “ভাই পোল্ট্রি ব্যবসা সিন্ডিকেটের ব্যবসা। আমরা খামারিরা কারো কাছে নালিশ দিতে পারিনা। যাব কার কাছে। লকডউনের দু-মাসেই ৬০ হাজার টাকা নাই হয়ে গেছে। আমার ২ হাজার লেয়ার খামারে যা ঔষুধ লাগে, খাদ্য লাগে তাতে লাভ তো দুরের কথা বাড়ি ভিটে বেঁচে দিয়ে চলে যেতে হবে। ইজ্জত নিয়ে টিকে থাকা যাবে ভাই। মিডিয়ার কোন তৎপরতা নাই। আমারদের কষ্টের কথা তুলে ধরে না।’

আরোও পড়ুন: ব্রয়লারের কেজি ১৪০, ডিমের দামে হতাশ খামারিরা

একই এলাকার লেয়ার খামারি সুজাত এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ডিমের মুরগিতে কোন ব্যবসা করতে পারলাম না। ডিমের দাম নেই আর অন্যদিকে তিন দফায় বাড়লো খাদ্যের দাম। ৪ টাকা থেকে ৫ টাকার মধ্যে ডিমের দাম উঠনামা করছে। এ দামে তো আর টিকে থাকা যায় না। সাদা ডিম সর্বনিম্নে সাড়ে ৬ টাকা আর লাল ডিম ৭ টাকা হলে কোনমতে লোকসান না দিয়ে চলবে।

জেলার পবা উপজেলার হরিয়ান ইউপির মল্লিকপুর গ্রামের লেয়ার মুরগির বড় খামারি রেজাউল করিম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, গত দুই মাসে রানীখেত এবং সালমোনেলাতে আক্রান্ত হয়ে চার হাজার মুরগি মরে গেছে। আমার মুরগি ছিল ১৩ হাজার মুরগি ছিল। কিছু মুরগি বিক্রি করেছি। এখন খামারে মাত্র দেড় হাজার মুরগি রয়েছে। এসব রোগ হলে মুরগির খাওয়া কমে যায়, পাতলা পায়খানা হয় এবং ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে ওজন কমে মুরগি মারা যায়।

তিনি বলেন, খামার তৈরি খরচ বাদ দিয়ে বাচ্চা থেকে ডিমপাড়া পর্যন্ত এক হাজার মুরগির জন্য ব্যয় হয় ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু খাবারই লাগে চার লাখ টাকা। এছাড়া রয়েছে ওষুধ, শ্রমিক এবং বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ। বর্তমানে সাদা ডিম আমরা আড়তদারদের কাছে সাড়ে চার থেকে চার টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি করছি। আর লাল ডিমের দাম সাড়ে পাঁচ থেকে পাঁচ টাকা ৬০ পয়সা। প্রতিটি সাদা ডিমে সাড়ে পাঁচ টাকা এবং লাল ডিমে সাড়ে ছয় টাকা উৎপাদন ব্যয় হয়। ফলে প্রতিটি সাদা এবং লাল ডিমে আমাদের এক টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমার প্রায় ২০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে অচিরেই খামার বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছি।

আরোও পড়ুন: ডিমের দামে লাইফ সাপোর্টে লেয়ার মুরগির খামারিরা

মহানগরীর মাস্টারপাড়া এলাকার বড় ডিম ব্যবসায়ী রেজাউল করিম মিঠু জানান, একশ লাল ডিম সাড়ে ছয়শ এবং সাদা ডিম পাঁচশ টাকা করে বিক্রি করছেন। এক মাস আগেও একশ লাল এবং সাদা ডিমের দাম একশ থেকে ১৩০ টাকা বেশি ছিল। তবে দোকানে খুচরা ব্যবসায়ীরা হালি প্রতি লাল ডিম ২৮ টাকা এবং সাদা ডিম ২৫ টাকা দামে বিক্রি করছেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. ইসমাইল হক বলেন, লকডাউন এবং রমজানের কারণে ডিমের দাম কম। তাছাড়া যে আবহাওয়া তা মুরগির জন্য খারাপ। অনেকদিন বৃষ্টি হয়না। হিট স্ট্রোকে মুরগি মারা গেছে বেশ কিছু মুরগি।তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে মুরগি মারা যাচ্ছে। তবে আমরা খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ