মেহেদী হাসান, এগ্রিকেয়ার২.কম: হটাৎ খাদ্যের দাম বাড়ায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ পোল্ট্রি খামারিদের অবস্থা যেন ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’। ৫০ কেজি ওজনের প্রতিবস্তা খাদ্যে দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে খাদ্যের দামে বিপাকে পোল্ট্রি খামারিরা।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের হাতে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নারিশ ফিড, সিপি বাংলাদেশ, প্যারাগন ফিড, আমান ফিড, নিউ হোপ, এজি এগ্রো, নাহার, এলিয়া ফিড, কেএনবি, ফ্রিডম এগ্রো, সানরাইজ পোল্ট্রি ফিড, বুস্টার ফিডসহ অন্যান্য পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্টানগুলোর প্রতিকেজি খাদ্যে বেড়েছে ২ টাকা।যা হিসেব করলে বস্তাপ্রতি বেড়েছে ১০০ টাকা।

খাদ্যের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পোল্ট্রি খামারিরা। সেইসাথে পোল্ট্রি খাত হুমকির মুখে পড়বে বলেও মনে করছেন তরুণ উদ্যোক্তারা। বন্ধ হয়ে যেতে পারে হাজার হাজার পোল্ট্রি খামার, অস্বাভাবিক বাড়তে পারে পোল্ট্রি পণ্যের দাম। বাড়তি দামে খাদ্য, ভ্যাকসিন, খামারের কর্মচারীর বেতন, সেই অনুযায়ী ডিম ও মাংসের দাম না থাকায় সবমিলিয়ে নাজেহাল খামারিরা।

আরোও পড়ুন:শীতকালে মুরগির ঠাণ্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধে করণীয়

ডিম-মাংসের দামে হতাশ হাজার হাজার পোল্ট্রি খামারি

এদিকে খাদ্যের দাম বাড়ানো বিষয়ে প্রতিষ্টানগুলো বলছে, খাদ্য তৈরির কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মূলত বেড়েছে খাদ্যের দাম। আমদানি করা সয়াবিন তেল, ভুট্টা, রাইস পলিসের দাম বেড়েছে গড়ে ৬ টাকা। খাদ্য উ’পাদনে বাড়তি খরচ হলে খাদ্যের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করছেন তারা।

কোম্পানিগুলো আরো বলছে, একটা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে পোল্ট্রি খাত ধ্বংসের মুখে পৌঁছে গেছে। সরকারি ভাবে কোন সিন্ডিকেট রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।

পোল্ট্রি সেক্টরের সাথে জড়িতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে একটি ডিমের উৎপাদন ও তা’ পাইকারী পর্যায়ে বিক্রি পর্যন্ত খামারীদের খরচ পড়ে ৬ টাকার বেশি। সেইসাথে আশানুরুপ দাম না পাওয়ায় লোকসান না হলেও এভাবে চলতে থাকলে খামারে কর্মরত শ্রমিক, মুরগির ভ্যাকসিন, খাদ্যেও দাম বৃদ্ধি সব মিলিয়ে ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। কয়েকমাসে তা মূলধনে আঘাত হানবে বলে জানান তারা। ইতোমধ্যে কিছু প্রান্তিক খামরি ব্যবসা ধরে রাখতে ব্যাংক ঋণ, এনজিও, ধার-দেনা ছাড়াও জমি বিক্রি করেছেন বলে জানা গেছে।

বস্তাপ্রতি খাদ্যের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেডের সিনিয়র কাস্টমার অফিসার মাসুদুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, করোনা শুরু হওয়া থেকেই বৈশ্বিক সংকট শুরু হয়ে যায়। পোল্ট্রি খাদ্য তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন, ভুট্টাসহ সবকিছুর দাম বাড়তে শুরু করে এবং সংকট দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে প্রডাকশন কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে আমাদের ওপর। ইউরোপ ও চীন থেকে মূলত এসব পণ্য আমদানি করতে হয়। সেখানেই দাম বেড়েছে তাই খাদ্যের দামও বেড়েছে। এখন আমাদের প্রতিকেজি খাদ্যে আড়াই টাকা লোকসান হচ্ছে। আর খাদ্যেও দাম আগামী দু-চার মাসে কমবে কি না বলা যাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, একটা সিন্ডিকেট মহল দফায় দফায় বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে খামারি ও কোম্পানিদের হেনস্তা করছে। মহামারির সময়ে পোল্ট্রি খাতে এ সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে পোল্ট্রি পণ্য আমদানি করতে হবে। ডিম কিনতে হবে ১৫ টাকা, পোল্ট্রির মাংসের কেজি হবে ২০০ টাকা। এখনই সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

আরোও পড়ুন: বাংলাদেশে মুরগির বিভিন্ন রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

মোরগ-মুরগির ফাউল টাইফয়েড রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা

কথা হয় সিপি কোম্পানির সেলস অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুল হাসানাল এর সাথে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিকভাবেই সয়াবিনের দাম বেশি। বাংলাদেশে সিটি গ্রুপের কাছে সয়াবিন রয়েছে, মেঘনা গ্রুপের বিক্রি বন্ধ। তাছাড়া ভুট্টা, রাইস পলিস, সয়াবিনের দাম বেড়েছে।

সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট নেই। আমদানির সময়েই কারসাজি করে দেরি করে নিয়ে আসে। এতে কালক্ষেপনের কারনে দাম বেড়ে যায়। তাছাড়া মজুদ সিন্ডিকেট দেখা যায় না।

পোল্ট্রি খামারিদের দাবি আদায়ে ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে পোল্ট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশ (পিপিবি)। হটাৎ খাদ্যের দাম বাড়ার ফলে খামারিদের সমস্যা ও সরকারের ভূমিকা বিষয়ে সংগঠনটির সভাপতি মজুমদার অঞ্জন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এই মূহুর্তে সরকারের করণীয় কাজ হলো- সরকারি তালিকাভুক্ত খামরিদের ভর্তুকি দেওয়া। তাছাড়া কোন পথ খোলা আছে বলে মনে হয় না।

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানো হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সিস্টেমের মাধ্যমে ফায়দা লুটছে কাঁচামাল আমদানিকারকরা। সরকার ট্যাক্স ফ্রি করে দিয়েছে। এখানে কোন সিন্ডিকেট নেই- সাপ্লাই স্লো হওয়ার কারনেই এমন অবস্থা।

সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে খাদ্যের দামে বিপাকে পোল্ট্রি খামারিরা। তারা বলছেন, খুব দ্রুত খাদ্যের দাম কমাতে হবে। এভাবে একের পর এক দূর্যোগ নেমে আসলে পোল্ট্রি খামারিরা নিঃস হয়ে পড়বে। লোকসানে জীবনের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে যাবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ