মৎস ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আমাদের দেশে অনকে মাছ চাষি তেলাপিয়া চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।এতে মাছ চাষিসহ দেশও আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠছে। এর কারণ হলো তেলাপিয়া চাষে উপযোগী পুকুর নির্বাচন এবং সঠিক পদ্ধতিতে পুকুর ব্যবস্থাপনা করা।

চলুন তেলাপিয়া চাষে পুকুর নির্বাচন ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জেনে নিই:

তেলাপিয়ার চাষ পদ্ধতি: তেলাপিয়া দুই ধাপে চাষ করা হয়। একটি হলো নার্সারি আর অপরটি হলো মজুদ পুকুরে চাষ । এতে করে কম সময়ে একই পুকুর হতে অনেক বেশি উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।

নার্সারি পুকুর নির্বাচন: দেড় ফুট থেকে চার ফুট গভীরতার পুকুর তেলাপিয়া নার্সারির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। পুকরে নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখতে হবে-

১.পুকুরের পাড়সমূহ যেন মজবুত ও বন্যামুক্ত থাকে।
২.পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে।
৩.পুকুরটি যেন জলজ আগাছামুক্ত থাকে।

নার্সারি ব্যবস্থাপনা:

১. প্রথমেই সম্পূর্ণ পুকুর শুকিয়ে অথবা রোটেনন ওষুধ প্রয়োগ করে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করে নিতে হবে;
এরপর প্রতি শতকে ১ কেজি চুন, ৫-৭ কেজি গোবর, ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০-৭৫ গ্রাম টিএসপি ও ২০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

২. পুকুরের চারিদিকে জাল দিয়ে এমনভাবে ঘিরে দিতে হবে যেন ব্যাঙ বা সাপের উপদ্রব না হয়।

আরও পড়ুন: ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে যেসব স্থান নির্বাচন করবেন

৩. সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর প্রতি শতকের জন্য ২১-২৮ দিন বয়সের ১০০০-২০০০ টি মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা মজুদ করতে হবে।

৪. মজুদকৃত পোনার মোট ওজনের ১০-১৫% হারে ৩৫% আমিষ সমৃদ্ধ খাবার দিনে ৩-৪ বার দিতে হবে। এভাবে নার্সারি পুকুরে ৪০-৬০ দিন পোনা পালন করে পোনার ওজন ২০-৩০ গ্রাম হলে মজুদ পুকুরে ছাড়তে হবে।

মজুদ পুকুর ব্যবস্থাপনা:

১.মজুদ পুকুরের গভীরতা কোন সমস্যা নয়। ফলে বেশি গভীরতার পুকুরকেও তেলাপিয়া মাছ চাষে ব্যবহার করা যায়।
প্রথমেই সম্পূর্ণ পুকুর শুকিয়ে অথবা বারবার জাল টেনে কিংবা রোটেনন ওষুধ প্রয়োগ করে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করে নিতে হবে।

২.প্রতি শতকে ১ কেজি চুন, ৫-৭ কেজি গোবর, ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০-৭৫ গ্রাম টিএসপি ও ২০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

৩. সার দেয়ার ৫-৭ দিন পর যখন পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হবে তখন নার্সারি পুকুরে উৎপাদিত ২০-২৫ গ্রাম ওজনের পোনা থেকে প্রতি শতকে ২০০-২৫০ টি হারে পোনা মজুদ করতে হবে।

আরও পড়ুন: জেনে নিন লাল তেলাপিয়া চাষ পদ্ধতি

৪. পুকুরে প্রাকৃতিক খাবারের যাতে অভাব না হয় সেজন্য প্রতি ৭ দিন পরপর প্রতি শতকে ৪-৫ কেজি গোবর, ২-৩ কেজি মুরগীর বিষ্ঠা, ৩৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ২০ গ্রাম টিএসপি সার দিতে হবে। তবে পরবর্তীতে খাবার প্রয়োগের পরিমান বেড়ে গেলে সার প্রয়োগ বন্ধ করে দিতে হবে।

৫. মাছের গড় ওজন যখন ১০০ গ্রামের বেশি হয় তখন থেকেই দৈনিক ৫% হারে পুকুরের পানি পরিবর্তন করে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

৬. মজুদের ১০০-১২০ দিন পর থেকে মাছের গড় ওজন ২০০-২৫০ গ্রাম হয়ে যায়। তখন থেকেই মাছ বিক্রি করা যেতে পারে। যখন মাছের গড় ওজন ৩০০-৫০০ গ্রাম হয় তখন বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে সব মাছ ধরে ফেলতে হয়।

তেলাপিয়া চাষে পুকুর নির্বাচন ও ব্যবস্থাপনা শিরোনামে লেখাটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার / এমবি