মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: আবহাওয়ার পূর্বভাসের মতো পোল্ট্রি পণ্যের দাম উঠানামা করছে। সপ্তাহে দু-বার আবার কখনো মাসে পাঁচ-ছয় বার। অথচ সর্বোচ্চ মাংস উৎপাদনকারী ব্রয়লার মুরগি বিক্রয়োপযোগী হতে সময় লাগে ৩১ দিন থেকে ৩৫ দিন। একদিকে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও অন্যদিকে দামের উঠানামার গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন পোল্ট্রি খামারিরা। এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে এমনই তথ্য দিয়েছে খাত সংশ্লিষ্টরা।

কয়েক মাস ধরেই রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে বেশ ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার, সোনালীসহ সব ধরণের মুরগি। তবে, খাদ্যের দাম বস্তায় বেড়েছে পাঁচ’শ টাকা। সে তুলনায় বাড়েনি পোল্ট্রি পণ্যের দাম। এরইমধ্যে হটাৎ মুরগির দাম কমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে পোল্ট্রি সংগঠনগুলো।

পড়তে পারেন: সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পোল্ট্রি শিল্প

কথা হয় রাজশাহীর পবা উপজেলার পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তা মুজিবুর রহমানের সাথে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মূলত প্রান্তিক এক হাজার-দু-হাজার মুরগির খামারিরা ধ্বংশ হয়ে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে যেসব মুরগি ও ডিমের উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারে আসলে দাম কমার আশঙ্কা রয়েছে। গতমাসে মুরগিতে ১০ টাকা বেড়েছে, আবার শুনছি ১৫ টাকা কমবে। এমন উঠানামার মধ্যেই আছি। এক চালান দাম পেলে পরের চালানেই শেষ!

খাদ্যের দামে উৎপাদিত মুরগির দাম তুলনামূলক ঠিক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা ডিম উৎপাদন করতে লাগে ৬ টাকা ৪০ পয়সা। আর বাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা ৬০ পয়সা। এই হলো অবস্থা। মাঝখানে একটু দাম বেড়েছিল কিন্তু আবার কমলো। করোনাকালীন সময়ে যেখানে সারাবিশ্ব কৃষি-প্রাণিসম্পদ রক্ষায় নেমে এসেছে; সেখানে আমাদের দেশের সিন্ডিকেট সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ৪-৫ দফায় পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়ে এখন আকাশচুম্বী। ১৮’শ টাকার খাদ্যের বস্তা এখন ২৫’শ টাকা। সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই। খামারি মরলে তাদের কি? ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

পড়তে পারেন: ডিমের দামে সর্বস্বান্ত লেয়ার মুরগির খামারিরা

দাম বাড়নো প্রয়োজন আছে কিনা? এমন প্রশ্নে পাইকারি মুরগি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, মুরগির দাম বাড়ছে আবার কমছে। ব্রয়লারের কেজি সর্বনিন্ম ১৬০ টাকা রাখা দরকার। তাহলে আমাদের দেশের খামারিরা লাভবান হতে পারবে। ব্রয়লার মুরগির দাম সবচেয়ে বেশি উঠানামা হয়েছে। এরআগে সচরাচর ব্রয়লারের কেজিতে ১০ টাকা বাড়লে আবার ১০ টাকা কমে যায়। এই ব্যবসায়ী জানান, বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকা, সোনালী ২৩০ টাকা, লাল লেয়ার ২২০ টাকা, সাদা লেয়ার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

বাজারের ডিম ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। কাঁচাবাজারের ঠিক নাই। মাল (ডিম) একটু টান পড়লে দাম বাড়ে আবার ক্রেতা কমে গেলে বা চাহিদা না থাকলে দাম কমে যায়। প্রতিহালি (৪টি) লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৪ টাকায়। সাদা ডিম ৩২ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪৮ টাকা হালি দরে বিক্রি করছেন।

পড়তে পারেন: ব্রয়লারের মাংস খাওয়া নিরাপদ : প্রাণিবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ

মুরগির দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীতে করোনায় ৬০ ভাগ খামার বন্ধ ছিল। মাঝখানে উৎপাদন খরচ আরো বেড়ে গেলো, কারণ ভুট্টা, সয়াবিন মিল, প্রোটিনের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে শীতে বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মুরগি মারা গেছে, লোকসান খেয়েছে খামারিরা। আসলে খামারিরা যাবে কোথায়! দামের উঠানামা তো আছেই। বাজার সামান্য মনিটরিং নাই। উৎপাদক টাকা না পেয়ে পাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।

খাদ্যের দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে আদর্শ পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের মালিক এএইচএম আরিফুজ্জামান বলেন, পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে খামার বন্ধ হয়ে গেছে। খামার বন্ধে আমাদের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে। কোনমতে টিকে আছি। খামারিদের দিকে যদি এখনই সরকার না তাকায় তাহলে পোল্ট্রি খাত ধ্বংশের মুখে চলে যাবে। অনেক খামারি বাড়ি-ভিটা বিক্রি করে ব্যবসার ঋণ শোধ করছেন। ৬ মাস একটু দামের স্থির হলেই আমরাও বাঁচি খামারিরাও বাঁচে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ