ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশের সর্ব উত্তরের জেলা দিনাজপুর। এই একটি জেলায় এবার ৬০০-৭০০ কোটি টাকার শাকসবজি উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে যে পরিমাণ জমিতে কপি চাষ করা হয়েছে তাতে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ১৬৮ কোটি দুই লাখ থেকে ১৯২ কোটি দুই লাখ টাকার ফুলকপি, ১২৮ কোটি ৯৪ লাখ থেকে ১৬১ কোটি ১৭ লাখ টাকার বাঁধাকপি বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। কপি থেকে আয় ২৯৬ কোটি টাকা জেলার মানুষের সমৃদ্ধি বয়ে আনবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, দিনাজপুরে চলতি বছর ২১৭২ হেক্টর জমিতে ফুলকপি, ২০২১ হেক্টরে বাঁধাকপি চাষ করা হয়েছে।

এছাড়া চলতি বছর যে পরিমাণ জমিতে শাকসবজি আবাদ হয়েছে, তাতে ৬৩৫ কোটি ৭৮ থেকে ৭৭০ কোটি ৫১ লাখ টাকার শাকসবজি বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। এরই মধ্যে জেলার বাজারগুলোতে উঠেছে শাকসবজি। আগেভাগে শীতকালীন শাকসবজি বাজারে উঠায় ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।

জেলার সবচেয়ে বড় শাকসবজির বাজার বাহাদুরবাজার এনএ মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, বরবটি, মুলা, পটল, বেগুন, গাজর ও টমেটোতে বাজার ভরপুর। এই বাজারে কৃষকরা শাকসবজি পাইকারিতে বিক্রি করেন। এখান থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারিতে শাকসবজি কিনে জেলার বিভিন্ন স্থান ও অন্যান্য জেলা শহরে খুচরা দামে বিক্রি করেন।

বর্তমানে এনএ মার্কেটে ফুলকপির কেজি ৩৫-৪০, বাঁধাকপি ২০-২৫, শিম ৪০-৪৫, বরবটি ৩৫-৪০, মুলা ১২-১৫, বেগুন ১৫-২০, গাজর ৮০-১০০, টমেটো ৯০-১০০, ঢ্যাঁড়স ২২-২৫, মিষ্টি কুমড়া ২২-২৫, লাউ প্রতি পিস (দুই-তিন কেজি) ২০-২৫, দেশি করলা ৫০-৬০, হাইব্রিড করলা ২০-৩০ টাকা ও শসা ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

পাশাপাশি লাল শাকের আঁটি (৩০০-৪০০ গ্রাম) পাঁচ-সাত, পালং শাকের আঁটি ১০-১২, মুলার শাকের আঁটি পাঁচ-সাত, ডাঁটা শাকের আঁটি পাঁচ-সাত, নাপা শাকের আঁটি ১০-১৫, সরিষা শাকের আঁটি ১০-১২ ও পুঁই শাকের কেজি ৮-১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ৮৫০ হেক্টরে শিম, ১৯০ হেক্টরে বরবটি, ১০১০ হেক্টরে মুলা, ২৩৯২ হেক্টরে বেগুন, ২৩২ হেক্টরে গাজর, ২৪৫২ হেক্টরে টমেটো, ৮৬ হেক্টরে ঢ্যাঁড়স, ৩৭৮ হেক্টরে করলা, ৯৭৪ হেক্টরে লাউ, ৩১০ হেক্টরে শসা, ৫০০ হেক্টরে লাল শাক, ৩৮৮ হেক্টরে পালং শাক, ৩৮৮ হেক্টরে পুঁই শাক, ১৩০ হেক্টরে ডাঁটা শাক এবং ২০০ হেক্টর জমিতে নাপা শাক আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ জমিতে আবাদ হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, এবার ৪৮ হাজার সাত মেট্রিক টন ফুলকপি, ৬৪ হাজার ৪৭০ মেট্রিক টন বাঁধাকপি, ১১ হাজার ৬৫৪ মেট্রিক টন শিম, এক হাজার ৮১৮ মেট্রিক টন বরবটি, ২৭ হাজার ৫৭৩ মেট্রিক টন মুলা, ৬৪ হাজার ১০৬ মেট্রিক টন বেগুন, তিন হাজার ৬৫ মেট্রিক টন গাজর, সাত হাজার ৯০২ মেট্রিক টন টমেটো, ৯০৩ মেট্রিক টন ঢ্যাঁড়স, চার হাজার ৫৫৯ মেট্রিক টন করলা, ২৮ হাজার ৭৩৩ মেট্রিক টন লাউ, পাঁচ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন লাল শাক, দুই হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন পালং শাক, এক হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন পুঁই শাক, এক হাজার ৬১৯ মেট্রিক টন ডাঁটা শাক ও এক হাজার ১১২ মেট্রিক টন নাপা শাক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে আশানুরূপ জমিতে ফলন হয়েছে।

এরমধ্যে ৪৬ কোটি ৬১ লাখ থেকে ৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শিম, ছয় কোটি ৩৬ লাখ থেকে সাত কোটি ২৭ লাখ টাকার বরবটি, ৩৩ কোটি আট লাখ থেকে ৪১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার মুলা, ৯৬ কোটি ১৫ লাখ থেকে ১২৮ কোটি ২১ লাখ টাকার বেগুন, ২৪ কোটি ৫২ লাখ থেকে ৩০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার গাজর, ৭১ কোটি ১১ লাখ থেকে ৭৯ কোটি দুই লাখ টাকার টমেটো, এক কোটি ৯৮ লাখ থেকে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার ঢ্যাঁড়স।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

প্রকল্প আকারে সবজি চাষে লাভবান কৃষকরা

বাকৃবিতে শীতকালীন শাক-সবজি চাষ প্রতিযোগিতা

কুয়েতের মাটিতে সবজি চাষে সফল বাংলাদেশী প্রবাসীরা

শ্রাবন মাসে কি কি সবজি চাষ করবেন, জানুন বিস্তারিত

১৫ কোটি ৯৫ লাখ থেকে ২০ কোটি ৫১ লাখ টাকার করলা, ২২ কোটি ৯৮ লাখ থেকে ২৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার লাউ, ছয় কোটি ৯৫ লাখ থেকে নয় কোটি ৭৩ লাখ টাকার লাল শাক, সাত কোটি ১৮ লাখ থেকে আট কোটি ৬২ লাখ টাকার পালং শাক, দুই কোটি দুই লাখ থেকে দুই কোটি ৮৩ লাখ টাকার ডাঁটা শাক, দুই কোটি ৭৮ লাখ থেকে চার কোটি ১৭ লাখ টাকার নাপা শাক, এক কোটি ১৫ লাখ থেকে এক কোটি ৪৪ লাখ টাকার পুঁই শাক বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। অর্থাৎ চলতি মৌসুমে ৬৩৫ কোটি ৭৮ লাখ থেকে ৭৭০ কোটি ৫১ লাখ টাকার শাকসবজি বিক্রি করতে পারবেন তারা।

বাহাদুরবাজার এনএ মার্কেটে সবজি বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার দিঘন গ্রামের কৃষক স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘আমি এবার আগাম জাতের মুলা, বেগুন ও করলা আবাদ করেছি। এগুলো প্রতিদিন বাজারে নিয়ে আসতে হয়। দাম ভালো পাচ্ছি। এবার শাকসবজিতে পোকার আক্রমণ কম। ফসল ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে খরচ তুলে লাভ হচ্ছে।’

জয়দেবপুর এলাকার কৃষক রহমত উল্লাহ বলেন, ‘প্রতিদিন বাজারে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢ্যাঁড়স ও লাল শাক নিয়ে আসতে হয়। এই বাজার সকাল থেকেই জমজমাট থাকে। ভোরবেলায় আসি। চার বিঘা জমিতে শাকসবজি আবাদ করেছি। দাম ভালো পাচ্ছি। আশা করছি, লাভবান হবো।’

সদর উপজেলার নুনাইচ গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বেগুন, টমেটো ও ফুলকপি নিয়ে বাজারে এসেছি। গত বছরের তুলনায় এবার শাকসবজির দাম ভালো পাচ্ছি। তাই লাভবান হবো।’

বাহাদুরবাজারে পাইকারিতে শাকসবজি কিনতে আসা জেলা শহরের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখান থেকে শাকসবজি কিনে গ্রামে নিয়ে বিক্রি করি। এতে আমার যা লাভ হয় তা দিয়ে সংসার চলে। যে দামে শাকসবজি কিনি তা থেকে ৫-১০ টাকা বেশিতে বিক্রি করি।’

চিরিরবন্দর থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, ‘পাইকারিতে শাকসবজি কিনে চিরিরবন্দর বাজারে বিক্রি করি। সেখানে আমার খুচরা দোকান আছে। ভ্যানে করে শাকসবজি নিয়ে যাই। প্রতিদিন এক ভ্যান শাকসবজি বিক্রি করলে এক হাজার ২০০-৫০০ টাকা লাভ হয়।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মাহবুবুর রশিদ বলেন, এবার উৎপাদন অনুযায়ী চলতি মৌসুমে ৬৩৫ কোটি ৭৮ থেকে ৭৭০ কোটি ৫১ লাখ টাকার শাকসবজি বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। শাকসবজির ক্ষেতে রোগ-বালাই কম। ফলে উৎপাদন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে শাকসবজিতে ভরে উঠেছে বাজারগুলো। ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ