নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশী মাছের ওপর আমাদের জনগণের আস্থাবাড়াতে হবে এবং বিদেশ থেকে কোনো মাছ আমদানি নয়। সমুদ্রের মাছ আহরণ, মাছ ধরার জন্য উন্নত জাহাজ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ মৎস্য ও পশুসম্পদ খাতের আধুনিকায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপরগুরুত্ব দিতে হবে।

‘উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাপ্রাপ্তি’ উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ এক ‘নাগরিক সংলাপ’অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী নারায়নচন্দ্র চন্দ এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জিডিপিতে আমাদের মাছের অবদান ২.৬১% হলেও এটি উপেক্ষার ব্যাপার নয়। কারণ এককভাবে দেশের জনগণের আমিষসহ অন্যান্য পুষ্টির যোগান দাতা হচ্ছে এই একটি মাত্র মন্ত্রণালয়ই। তবে মিঠাপানির মাছ এবং ছাগল উৎপাদনে আমরা বিশ্বে চতুর্থ হলেও জিডিপিতে মাংস ও মাছের অবদান খুবই কম। অন্যদিকে চীনের জিডিপিতে মাছের অবদানই ৬১%।

তারা বলেন, সাড়ে ছয়শত কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট বিশাল সমুদ্রসম্পদের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে, আমরা ৪৭ বছরে যার ১০০ কিলিমিটার ভেতরেও এখনো প্রবেশ করতে পারিনি। সমুদ্রের অবারিত মাছ, খনিজসম্পদ, শ্যাওলাসহ যাবতীয় সম্পদকে আমাদের করায়াত্ত করতে হবে এবং টেকসই উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে।

সমুদ্রসম্পদসহ মৎস্যসম্পদ আহরণে উন্নত জাহাজ-যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তির দরকার উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, সরকার এমভি মীন সন্ধানী নামক যে সমুদ্রগবেষণা ও জরিপ জাহাজ দিয়ে মৎস্যসম্পদের জরিপ চালাচ্ছে, তার সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।

সবচে বড়কথা, মৎস্যখাতের টেকসই উন্নয়ন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে হলে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দের অপচয়রোধ, নির্ধারিত প্রকল্পের মেয়াদ দীর্ঘায়িত না করা, দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাগ্রহণের মাধ্যমে ভূমি, পানি, বন ও পরিবেশ, স্বরাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে সমন্বিতভাবে আমাদের কাজ করতে হবে।

তারা বলেন, পোলট্রিখাতেও বাংলাদেশ যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করলেও মুরগি ও ডিমের ব্যাপক মূল্যহ্রাস, প্রাণঘাতি রোগে গবাদিপশু ও মাছের মৃত্যু,পর্যাপ্ত প্রতিষেধক টিকা উৎপাদন এবং খামারিদের মাঝে প্রতিষেধক টিকা সহজলভ্য করতে না পারাসহ আমাদের অনেক ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জও আছে,যা দ্রুত অতিক্রম করা জরুরি।

দেশে দুধের ঘাটতি পূরণেও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের দেশী গরু ও মহিষের দুধ উৎপাদনবৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি খাসজমি এবং চরাঞ্চলে্র পতিত জমিতে মহিষের খামারস্থাপনের বিকল্প নেই।

বক্তারা দেশে রপ্তানিযোগ্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মাছ, মাংস ও দুধের পর্যাপ্ত উৎপাদনের মাধ্যমে যাবতীয় ঘাটতিপূরণ এবং আমদানিকৃত গুঁড়োদুধ ও মাছকে নিরুৎসাহিত করার প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, আমাদের উৎপাদিত মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের প্রতি অবশ্যই জনগণের আস্থার সৃষ্টি করতে হবে যাতে আমদানিপণ্যের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়।

মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলমের সভাপতিত্বে ”Sustainable Marine Fisheries Management in Bangladesh: Blue Economy Perspective”শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদফতরের প্রকল্প ‘Sustainable Marine Fisheries Management in Bangladesh’ এর উপপ্রকল্প পরিচালক শাইনার আলম এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের প্রকল্প ‘Dairy Revolution And Milk Production’ এর উপপ্রকল্প পরিচালক গোলাম রব্বানী।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়াল এডমিরাল (অবঃ) মোঃ খুরশেদ আলম, PKSFএর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, মৎস্য অধিদফতরের ডিজি গোলজার হোসেন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ডিজি আইনুল হক, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন ডিজি ড. খান শহীদুল হক, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড অ্যানিমেল সাইসেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. এ কে এম নাওশাদ আলম, মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব তৌফিকুল আরিফ।