লাভজনক কার্প জাতীয় মাছের

মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশে মাছে নতুন রেকর্ড, উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনের বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ এবার বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এক নম্বরে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া।

দেশটিতে দেশে মাছ উৎপাদন বাড়ার হার ১২ শতাংশ, আর বাংলাদেশে  হার ৯ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে বিশ্বে এ হার প্রায় ৫ শতাংশ। এর আগে বাংলাদেশ বিশ্বে মাছ উৎপাদনে তৃতীয় ছিল, উৎপাদন বাড়ার হারে দ্বিতীয় হয়েছে। কৃতিত্ব ইলিশের আর দেশি মাছ চাষের।

দেশের মাছ চাষের এমন সুখবর দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বৈশ্বিক প্রতিবেদন দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার–২০২০। এটা প্রকাশিত হয়েছে ৮ জুন।

প্রতিবেদনটি বলছে, গত বছর বিশ্বে প্রায় ১৮ কোটি টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে। এর অর্ধেকেরও বেশি অভ্যন্তরীণ উৎসের তথা স্বাদুপানির মাছ। বাকিটা সামুদ্রিক মাছ।

২০১৮ সালে প্রকাশিত গতবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালেই স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এক লাফে পঞ্চম থেকে তৃতীয় স্থানে উঠেছিল। এবার প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছে যথাক্রমে চীন ও ভারত। চাষের মাছে বাংলাদেশের অবস্থানটি চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের পরে।

এ নিয়ে আজ শুক্রবার (১২ জুন, ২০২০) প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন সংবাদ মাধ্যমটির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইফতেখার মাহমুদ। প্রতিবেদনটি নিচে তুলে ধরা হলো।

এতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিশ্বে মাছের উৎপাদন সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে। স্বাদুপানির মাছে বাংলাদেশ তার তৃতীয় স্থানটি ধরে রেখে উৎপাদন বাড়ানোর হারে দ্বিতীয় স্থানে উঠেছে। চাষের মাছে দেশ গত ছয় বছরের মতোই পঞ্চম হয়েছে।

বাংলাদেশের মৎস্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনের হার মূলত বেড়েছে ইলিশের সৌজন্যে। গত এক যুগে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে জাতীয় মাছটির উৎপাদন এখন পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়েছে। ইলিশে এ দেশ বিশ্বে এক নম্বর। মোট ইলিশের ৮০ শতাংশই এখানে উৎপাদিত হয়।

বিশেষজ্ঞরা আরও কৃতিত্ব দিচ্ছেন, দেশের বিজ্ঞানীদের দেশি মাছের চাষোপযোগী উন্নত জাত উদ্ভাবনকে। এফএও এবং ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) একাধিক প্রতিবেদনও বলছে, বাংলাদেশে পুকুরে মাছ চাষে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।

এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্বে লোনাপানির মাছসহ সব ধরনের মাছের উৎপাদন বেড়েছে ১৪ শতাংশ। চাষের মাসের ক্ষেত্রে এটা বেড়েছে ৫২৭ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে মানুষের মাছ খাওয়া বেড়েছে ১২২ শতাংশ।

তবে প্রতিবেদনে একটি আশঙ্কার কথাও বলা হয়েছে। মাছের উৎপাদন বাড়ছে বটে, কিন্তু মাছের মোট মজুত কমে আসছে। বিশ্বে প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় পর্যাপ্ত মাছ নেই। যতটা থাকতে পারত, ১৯৯০ সালে ছিল তার ৯০ শতাংশ। ২০১৮ সালে সেটা ৬৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত রুই, কাতলা, কই, তেলাপিয়া, কালবাউশ ও সরপুঁটির উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। দেশের পুকুরে যত মাছ চাষ হচ্ছে, তার অর্ধেকেরও বেশি এসব জাতের। তাঁরা দেশের বিলুপ্তপ্রায় ২২টি প্রজাতির মাছের চাষপদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছেন। সে তালিকায় টেংরা, পাবদা ও মলার মতো পুষ্টিকর মাছগুলো রয়েছে।

এফএওর প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ছয়টি দেশে মোট প্রাণিজ আমিষের চাহিদার অর্ধেকের বেশি মেটায় মাছ। গত এক যুগে বিশ্বে মাছ আহরণকারী ও নৌকার সংখ্যা প্রায় আড়াই শতাংশ কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে তা বাড়ছে।

গত বছর ইফপ্রির একটি প্রতিবেদন বলেছিল, বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ মাছ আসছে পুকুর থেকে। পুকুরে মাছ চাষের কারণে গত তিন দশকে মোট উৎপাদন বেড়েছে ছয় গুণ। মাছ চাষ ও ব্যবসায় দুই কোটির কাছাকাছি মানুষ যুক্ত আছেন। ১৯৯০ সালে মানুষ মাথাপিছু বছরে সাড়ে সাত কেজি মাছ খেত। এখন সেটা ৩০ কেজিতে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) মৎস্যসম্পদের অবদান এখন ৪ শতাংশ। অধ্যাপক আবদুল ওহাব বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক এনজিও ওয়ার্ল্ড ফিশ-এর ইকোফিশ প্রকল্পের দলনেতা।

তিনি মনে করেন, নদী ও অন্যান্য জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ আছে। সমুদ্রসীমা বাড়ার পর বঙ্গোপসাগরে আহরণের সুযোগও বেড়েছে। এগুলো কাজে লাগাতে পারলে দেশ মাছ উৎপাদনে আরও এগিয়ে যাবে।

দেশে মাছে নতুন রেকর্ড, উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশ্বে দ্বিতীয় এমন সুখবর মাছ চাষে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।