নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কমঃ প্রায় ৩ দশক আগে এক লাখ টাকা খরচ করে মুরগির খামার গড়ে তোলেন রাজশাহী নগরীর হেঁতেম খাঁ এলাকার শফিকুল ইসলাম। স্বপ্ন ছিল নিজের গড়া খামারে মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হবেন। দু দশক ভালোভাবে চললেও বিপত্তি বাঁধে ২০১২ সালের পর থেকে। কিন্তু বড় ধাক্কা খেয়েছেন করোনার প্রথম বছরেই। ১৬ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে গুটিয়ে নিয়েছেন ব্রয়লার ব্যবসা।

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় পরের বছর ৩ হাজার লেয়ার মুরগি পালন করেন তিনি। কিন্তু কিছুতেই আলোর মুখ দেখতে পান নি। ফিডের দাম বাড়ার কারণে ও পণ্যের দাম না থাকায় দিন দিন আশাহত হয়েছেন এই খামারি। আগের লোকসান আর ডিলারের বাঁকি পরিশোধ করতেই লাভের টাকা কুলোয় নি। তাঁর অভিযোগ, খুচরা বাজারে কিছুটা দাম থাকলেও মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে একের পর এক লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারিদের। এবছর ব্রয়লার মুরগি না থাকলেও ডিম বিক্রি করে ৯০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তাঁর।

খামারে উৎপাদিত ডিম, মুরগি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলাসহ ঢাকা শহরেও যায়। রাজশাহী থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০ লাখ ডিম যায় রাজধানীতে। রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাজার পরিস্থিতিতে বর্তমানে মুরগির চাহিদা কম থাকায় বাজারদর পড়ে গেছে। ফলে ক্ষুদ্র খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

চাকরি ছেড়ে লেয়ার মুরগিতে বাজিমাত ইরাক ফেরত ফারুকের

শীতকালে লেয়ার গ্রোয়ার পালনে সতর্কতা ও নিয়মাবলী; পর্ব ১

শীতের সময়ে লেয়ার গ্রোয়ার পালনে ভ্যাক্সিন সিডিউল; পর্ব-৩

এই খামারি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমার গত ৩ বছরে ১৬ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। ব্রয়লার পালন ছেড়েছি। একটা ৯ লাখ টাকার শেড পড়ে আছে। পোল্ট্রি সেক্টর ঝুঁকির সম্মুখীন। বলা যায় খামারিরা পথে বসেছেন। ডিমের উৎপাদন খরচ এখন ১০ টাকা আর বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ৫০ টাকা পিস কিনে ৯০ টাকা কেজিতে খরচ করে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করে ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় নাই।

পবা উপজেলার আরেক খামারি সোহেল রানা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, খামারে যে পরিশ্রম করতে হয় তাতে লাভের কোন আলোচনা করা যাবে না। ৬০ দিনে সোনালি মুরগি বিক্রয়ের উপযোগী হয়। আমার খামারের মুরগি বিক্রয়ের উপযোগী হয়ে গেছে। পাইকাররা প্রতি কেজি মুরগি ১৯০ টাকা দর করছেন, যেখানে আমার খরচ পড়েছে ২৩০ টাকা। হিসাব করে দেখেছি, এই পর্যায়ে মুরগি বিক্রি করলে মোটা অঙ্কের লোকসান যাবে। কিছু করার উপায় নাই বিক্রি করতে হবে। লোকসান একবার যায় আবার আরেক চালানে কিছু লাভ আসে সেটা দিয়ো আবার খামার চালু রাখি। এভাবেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছি। খাদ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। ফলে খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।

বাগমারা উপজেলার দামনাশ এলাকার লেয়ার খামারি হাসানুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, খাদ্যের দাম অনেকটা বেড়েছে ভাই। ১৬’শ টাকার ফিডের বস্তা এখন ৩৪’শ টাকা। ডিমের দাম ১২ টাকা পিস পাইকারি বাজার হলে লাভ হবে তাছাড়া ব্যবসা ছাড়তে হবে। আমি এ বছর দেখব, এরপর খামার ব্যবসা ছেড়ে অন্যকিছু করব।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

মাছ মাংস ডিমের উৎপাদন রপ্তানির পর্যায়ে পৌঁছেছে

ডিমের দামে হতাশ খামারিরা, উঠছেনা উৎপাদন খরচ

মাছ, মাংস, দুধ, ডিম উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীর ৭০ শতাংশ খামার বন্ধ। বহুবার বলেছি বিভিন্ন জায়গায়। কোন কাজ হয়না। পোল্ট্রি ফিডের বর্তমান দাম খামার চালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত নয়। ডিমের দাম উৎপাদন খরচের তুলনার কম। প্রতিপিস ডিমে ৩ টাকা লোকসান টাকা দিচ্ছেন খামারিরা। খাদ্যের দাম কমানো, প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, সটিক বাজার নির্ধারণ সবকিছু এখন করা জরুরি প্রয়োজন। তা না হলে পোল্ট্রি খাত টিকবে না।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মোঃ আখতার হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ডিম মুরগির দাম উঠানামা হয়। লাভের বিষয়টা আসে খামার ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগের পরিমাণ নানান বিষয়ের উপর। এরআগে ডিমের দাম কমে যাওয়ার কারণে খামারিরা স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। আমরা প্রাণিসম্পদ দপ্তর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ