ইউসুফ আলী সুমন, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দায় অবৈধভাবে আত্রাই নদী দখল করে মাছের ঘের তৈরির মহোৎসব শুরু হয়েছে। এসব ঘেরে মাছ জমানোর নয়া কৌশল হিসেবে বেঁধে রাখা হচ্ছে মৃত প্রাণী। স্থানীয়দের অভিযোগ, মৃত প্রাণীর পচা গন্ধে এলাকার পরিবেশ ক্রমেই দুষিত হয়ে উঠছে।

নদীতে গাছের কাটা ডালপালা নামিয়ে ও বাঁশের বেড়া দিয়ে মৎস্য ঘের তৈরি করে নদীর স্বাভাবিক পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। নদী দখলমুক্ত রাখতে প্রশাসনের কড়া নজরদারীর পরও ঘের তৈরি হচ্ছে প্রতিবছর। মৎস্য দপ্তরের নাকের ডগায় ঘের তৈরির মহোৎসব চললেও তা বন্ধ করতে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শেষ হবার পর অবৈধভাবে নদী দখল করে কিছু অসাধু ব্যক্তি মৎস্য ঘের তৈরি করেন। এতে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ও নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়।

আরোও পড়ুন: এবারের বন্যায় নওগাঁয় মাছে ক্ষতি সাড়ে ৪৮ কোটি টাকা

জানা গেছে, মান্দা উপজেলার বুড়িদহ, সুজনসখী, বাগাতিপাড়া, জোতবাজার, ত্রিমহনীসহ বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে বেশকিছু ঘের তৈরি করা হয়েছে। এসব ঘেরে মাছ জমিয়ে রাখতে এবার নয়া কৌশল অবলম্বন করেছে দখলকারীরা। গাছের কাটা ডালপালার পাশাপাশি ঘেরগুলোর বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে শেয়াল, কুকুরসহ মৃতসব প্রাণী।

এ বছরের প্রথমদিকে আইন-শৃঙ্খলার সভায় নদী দখলমুক্তসহ তৈরি মৎস্য ঘের উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তাকে। কিন্তু মৎস্য কর্মকর্তার নীরব ভূমিকায় স্থানীয় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। এনিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শুরু হয় নদীজুড়ে উচ্ছেদ অভিযান। এরপরও চলতি মৌসুমে নদীতে ঘের তৈরি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, আত্রাই নদীর মান্দা উপজেলার উজানঅংশ বানডুবি থেকে শুরু করে ভাটিঅংশ মিঠাপুর পর্যন্ত অন্তত: ৩০ কিলোমিটার এলাকায় চলতি মৌসুমেও অবৈধ মৎস্য ঘের তৈরির প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। গাছের ডালপালা নামিয়ে ও বাঁশের খুঁটিতে বেড়া দিয়ে নদীর প্রায় পুরো অংশ ঘিরে ফেলার প্রস্তুতি চলছে আগের মতই। ঘেরগুলোতে এসবের পাশাপাশি কচুরিপানা দিয়ে মাছের অভয়ারন্য তৈরি করা হয়ে থাকে।

আরোও পড়ুন: রাজশাহীতে দু-দিনে মাছের ক্ষতি ১৪ কোটি টাকার বেশি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মৎস্যজীবীর অভিযোগ, নদীতে ঘের তৈরির কারণে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে মাছ শিকার করতে পারছেন না। ঘেরের আশপাশে বরশি, হুইল অথবা বিভিন্ন প্রকারের জাল দিয়ে মাছ শিকারে বাঁধা দেয়া হয় তাদের। বিগতদিনে অবৈধ দখলদারদের হাতে লাঞ্ছিতের শিকার হয়েছেন অনেক মৎস্যজীবী। কিন্তু দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পান না তারা।

এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, নদীতে মৎস্য ঘের তৈরি না করতে নোটিশ জারী করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, নদীতে কোন প্রকার মৎস্য ঘের তৈরি করতে দেয়া হবে না।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ