ইউসুফ আলী সুমন, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর নিয়ামতপুরে ড্রাগন ফল চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন এক ড্রাগন চাষি। তার বাগানের ড্রাগন গাছে এখন দৃষ্টিনন্দন অসংখ্য ফুল-ফল ঝুলছে। এই ড্রাগন চাষি রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান সরকারী কলেজের গণিত বিষয়ের শিক্ষক ওবাইদুর রহমান জুয়েল।

সম্প্রতি তিনি নিয়ামতপুরের রসুলপুর ইউনিয়নের দামপুরা গ্রামে তার খামার বাড়ীতে প্রায় এক একর জমিতে ড্রাগন চাষ করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন। তিনি রাজশাহীর হেতেম খাঁ এলাকার বাসিন্দা। ছোট বেলা থেকেই ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছা ছিল। ইন্টারনেটের বদৌলতে ইউটিউবে ড্রাগন ফল চাষের ভিডিও দেখে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি।

আরও পড়ুন: নওগাঁয় ড্রাগন চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা, বাড়ছে বাগান

স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রায় ৫-৬ বছর থেকে বিভিন্ন জাতের আমসহ কমলা ও মালটার বাগান গড়েছেন। এক বছর আগে খামার বাড়ীর পাশে ড্রাগন ফলের বাগান গড়েন। বাগানের এক একর জায়গা প্রস্তুত করে তাতে ৫০০ ড্রাগনের চারা লাগান। সে চারাগুলো বড় হয়ে এখন তাতে ফুল ও ফল এসেছে।

তাঁর মতে ড্রাগন ফল চাষ প্রথম দিকে (কংক্রিটের পিলার, লোহার রিং ও তাতে টায়ার পরাতে) একটু বেশী খরচ হলেও তা অত্যন্ত লাভজনক। তার বাগানে প্রথমে লাগানো ৩০০ টি গাছে ফুল ফল আছে। পরে লাগানো ২০০ টি গাছে ফুল আসবে শীঘ্রই। তিনি আশা করছেন আগামী বছর থেকে পুরো মাত্রায় উৎপাদন শুরু হবে বাগান থেকে।

গাছের পরিচর্যা নিয়ে তিনি বলেন, গাছে অধিক পরিমাণে জৈব সার ও অল্প পরিমাণে ইউরিয়া, ফসফেট ও পটাশ সার প্রয়োগ করতে হয়। খরা মৌসুমে সেঁচ দিতে হয়। এছাড়া বাড়তি কোনো যত্ন নিতে হয় না। ড্রাগন গাছে সাধারণত ভাইরাসজনিত রোগ, পাতা মোড়ানো ও ছত্রাকজনিত রোগ দেখা যায়।

গাছে ফল আসলে পিঁপড়া ও মিলিবাগ পোকার আক্রমণ হতে পারে। এজন্য ক্যারাইটি, কপার অক্সিক্লোরাইড ও সাইফারম্যাথিন নামক কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে বাগানে তিনি বেশি বেশি সময় দিচ্ছেন। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত কৃষকদের সঙ্গে তিনি নিজেও কাজ করছেন।

আর খরচের প্রসঙ্গে বলেন, ড্রাগন চাষ করতে তার এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আর বাগান থেকে এক লাখ টাকা মত আয় করেছেন। আগামী মৌসুমে ড্রাগন থেকে ভাল মুনাফা পাবেন বলে আশা করেন তিনি।

তিনি বলেন, “ড্রাগন ফল এখনও অনেকের কাছেই অজানা। তিনি এ ফলটিকে গ্রামীণ মানুষের কাছে পরিচিত করাতে চান। তাই এ ফলটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে তিনি বাগানের প্রথম ফল (যেগুলোর ওজন প্রায় ৩৫০- ৪০০ গ্রাম) পার্শ্ববর্তী পাড়াগুলোর বাড়িতে বাড়িতে একটি করে বিনামূল্যে বিতরণ করেন। এসময় তিনি ফলটির পরিচয় ঘটান ও এর পুষ্টিগুণ জানান এলাকার মানুষ ও চাষিদের কাছে। সাথে সাথে ফলটি চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ ও করেন।”

আরও পড়ুন: মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন নওগাঁর কৃষকরা

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াহিদুজ্জামান এগ্রিকেয়ার.কমকে জানান, পুষ্টিমানসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় ড্রাগন ফল চাষে সৌখিন কৃষকের পাশাপাশি সব শ্রেণির কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। প্রায় সব ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে বেলে, দোঁ-আশ মাটিতে ড্রাগন ফল চাষ উত্তম।

তিনি জানান, উচ্চ ফলনশীল বাউ ড্রাগন-১ ও বাউ ড্রাগন-২ বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য উপযোগী। এ ফলের চাষ বাড়াতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন।

এগ্রিকেয়ার / এমবি