মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মৎস্য অধিদপ্তরের ২২ দিনের জন্য নিষেধাজ্ঞায় সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীর পদ্মায় মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। এসময় দেশীয় জেলেরা ধরতে না পারলেও পদ্মার ইলিশ ধরছে ভারতীয় জেলেরা।

প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ইলিশ আহরণ করলে জেল-জরিমানার বিধান থাকায় মাছ ধরতে নামতে পারছেন না দেশীয় জেলেরা। অপরদিকে জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশী জলসীমা থেকে ইলিশ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছেন। এ রকম যে শুধু এবারই প্রথম তা নয়। বাংলাদেশে মৎস্য শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রতিবছরই ভারতীয়রা ইলিশ ধরে নিয়ে যায়।

পঞ্চোশার্ধ জেলে আইনাল হকের ভাষ্যমতে, পদ্মানদীতে এবার এমনিতেই ইলিশ কম। তারপরও ভারতীয় জেলেরা ইলিশ শিকার করছেন। পেটে ক্ষুধা নিয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে তারা সেই দৃশ্য দেখছেন। তাদের ইলিশ তো দূরের কথা, জাল নিয়ে পদ্মায় নামারই অনুমতি নেই।

বাংলাদেশে নদ-নদীতে মৎস্য শিকার বন্ধ থাকায় সরকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে মাথাপিঁছু ২০ কেজি করে চাল দিচ্ছে। কিন্তু শতভাগ জেলে এই চাল পাচ্ছেন না। ফলে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব জেলেরা বলছেন, নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে তারা ভারতীয়দের মাছ ধরে নিয়ে যাওয়া দেখছেন। কিন্তু তাদের ঘরে খাবার নেই। মাছ ধরার অনুমতিও নেই।

রাজশাহীর পবা উপজেলার নবগঙ্গা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সদস্য ২২ জন। তাদের সমিতির নিবন্ধনও আছে। নিবন্ধন নম্বর-১৩৭৪। কিন্তু এই সমিতির একজন জেলেও সরকারের খাদ্য সহায়তা পাননি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আইনাল হক বলেন, ভারতীয়রা চোখের সামনে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা মাছ ধরতে পারছি না। সরকার আমাদের সহায়তাও করছে না।

পদ্মায় মাছ ধরা বন্ধ রাখতে মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ-পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সম্মিলিতভাবে অভিযান চালাচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাজশাহীর পদ্মানদীর বাবলাবন নামক স্থান থেকে দুই লাখ ২৫ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করে মৎস্য অধিদপ্তর ও নৌ-পুলিশ। পরে জালগুলো পাড়ে এনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এই অভিযানে ছিলেন নৌ-পুলিশের পরিদর্শক মেহেদী মাসুদ।

তিনি বলেন, বাবলাবন এলাকাটি একেবারেই সীমান্ত এলাকা। অথৈ পানি। সেখানে নির্দিষ্ট করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চিহ্নিত করা কঠিন। আমরা সেইখানে জেলেদের নৌকা নিয়ে জাল ফেলে মাছ ধরতে দেখি। সেদিকে এগিয়ে যাই। আমাদের দেখে জেলেরা জাল ফেলে ভারতের দিকে পালিয়ে যায়। আমরা জালগুলো তুলে নিয়ে আসি। জেলেরা ভারতে ঢুকে পড়ায় আটকের জন্য তাদের পিঁছু নেয়া যায়নি। পুলিশের এই কর্মকর্তার ধারণা, ওই জেলেরা ভারতীয়।গত বছর পদ্মায় ইলিশ ধরাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের আলোচিত ঘটনা ঘটলেও এবারও ভারতীয় জেলেরা আসছেন।

রাজশাহীর পবা উপজেলা মৎস্য দপ্তরের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান বলেন, এবার নদীতে বাংলাদেশী জেলে পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। তবে অনেক সময় ভারতীয় জেলেদের নৌকা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু তারা একেবারেই সীমান্ত এলাকায় থাকায় আমরা সেখানে যেতে পারছি না।

অন্তত এক কিলোমিটার দূর থেকেই আমাদের অভিযান চালাতে হচ্ছে। তবে ইলিশ রক্ষায় দুই দেশ যদি সম্মিলিতভাবে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে ভাল হয়। ভারতে এখন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা নেই।

তবে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় ‘মা ইলিশ রক্ষায় যৌথ সামুদ্রিক সহযোগিতা’ শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়ে জানানো হয়েছে, সাগরে আন্তর্জাতিক জলসীমার কাছাকাছি অবস্থানরত সমস্ত ভারতীয় মাছধরা নৌকাকে ভারতীয় সীমানার দিকে পাঠানো হচ্ছে।

এতে বলা হয়েছে, মা ইলিশ রক্ষায় এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের চলমান প্রচেষ্টায় সহায়তা করার লক্ষ্যে ভারতীয় কোস্ট গার্ড আন্তর্জাতিক জলসীমার কাছাকাছি ভারতীয় মাছধরা নৌকা সরাতে নজরদারি বৃদ্ধি করছে।

ভারতীয় হাইকমিশন বলছে, ভারত বিমানে নজরদারি করছে। সেখান থেকে আন্তর্জাতিক জলসীমার কাছাকাছি অবস্থানরত ভারতীয় মাছধরা নৌকাকে ভারতীয় সীমানার দিকে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। হাইকমিশন সাগরে এমন তৎপরতার কথা জানালেও দুই দেশের মধ্যে দিয়েই প্রবাহিত বড় পদ্মা নদীর দিকে কোন নজরদারি করা হচ্ছে কি না তা জানায়নি। স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়েও এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে রাজশাহীর পদ্মানদীতে নৌ-পুলিশ, মৎস্য অধিদপ্তর ও বিজিবি দুই দেশের জেলেদের হাত থেকেই আপাতত ইলিশ রক্ষার
চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি। মৎস্য বিভাগ ডাকামাত্রই আমরা নদীতে অভিযানে যাচ্ছি।

তথ্য নিয়ে দেখেছি, এবার পদ্মা নদীতে দুই দেশেরই জেলেদের উপস্থিতি কম। এর কারণ হিসেবে বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, গত বছর নিষেধাজ্ঞার সময় একটা ঘটনা ঘটেছিল। বিএসএফ গুলিবর্ষণ করেছিল। আত্মরক্ষায় আমাদেরও গুলি করতে হয়েছিল। তাই সতর্কতার অংশ হিসেবে এবার কম জেলে আসতে পারে। ইলিশ রক্ষার জন্য আমাদের অবস্থান গতবছর যেমন ছিল, এবারও তেমনই আছে। সরকারি নির্দেশনা আমরা বাস্তবায়ন করব।

উল্লেখ্য, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা, বিক্রি, বিপণন, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ হয় গত ১৪ অক্টোবর। পদ্মায় ইলিশ ধরছে ভারতীয় জেলেরা সংবাদের তথ্য সাহেববাজার.কম থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ