মালিকুজ্জামান কাকা, যশোর: পলিথিন ও প্লাস্টিক সহজে না পচায় মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়। আগুনে পোড়ালে কার্বন তৈরি হয়, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। সেই পলিথিন ও প্লাস্টিককে কাজে লাগিয়ে তেল-গ্যাস তৈরি করছেন যশোরের শেখ আবু তাহের আলী।

ইউটিউবের ভিডিও দেখে তেল ও গ্যাস উৎপাদন করছেন তিনি। তার এমন উদ্যোগকে বাহবা দিচ্ছেন স্থানীয়রা। যা দেখতে প্রতিদিন অনেকেই ভিড় করছেন তার তেল ও গ্যাসের উৎপাদন কেন্দ্রে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বসতবাড়ির সামনেই পরিত্যক্ত স্থানে একটি লোহার ড্রামের সঙ্গে কয়েক স্তরে পাইপের মাধ্যমে তিনটি সিলিন্ডারে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে যুক্ত করা তিনটি হিট মিটার। এরপর ড্রাম ভর্তি পলিথিন দিয়ে ড্রামের মুখ বন্ধ করে নিচে আগুন জ্বালিয়ে তা গলানো হচ্ছে।

৪০-৫০ মিনিট ধরে উচ্চ তাপ প্রয়োগের পর দেখা যায়, পলিথিন তরল রূপ নিয়ে পাইপের মাধ্যমে বাষ্পীভূত হয়ে স্তর আকারে সিলিন্ডারে জমছে ডিজেল-পেট্রোল। পাইপের মাধ্যমে আসছে গ্যাস যা আবার ঐ পলিথিন পুড়ানোর কাজে ব্যবহৃত করা হচ্ছে। প্রতিটি সিলিন্ডারের নিচের অংশে যুক্ত করা আছে পাত্র যাতে তেল ভর্তি হয়ে গেলে প্রয়োজনে সেখান দিয়েও বোতলে তেল সংরক্ষণ করা যায়। এই জ্বালানি তেল দিয়ে গ্রামবাসী পরীক্ষা ও দেখার জন্য চালিয়েছেন মোটরসাইকেল ও জমিতে পানি সেচের মেশিন।

শেখ তাহের আলী বলেন, আমি লেখাপড়া জানি না। মোবাইল ভিডিও দেখেই পলিথিন দিয়ে তেল উৎপাদনের চিন্তা করি। এরপর ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সব সরঞ্জাম কিনে পলিথিন জোগাড় করে চারদিন ধরে তেল ও গ্যাস উৎপাদন করছেন। এ কাজে আমি সফল হয়েছি।

প্রতি কেজি পলিথিন থেকে প্রায় ৪০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম তেল উৎপাদন হচ্ছে। যেখানে প্রতি কেজি পলিথিন কিনতে হয় ১৫-২০ টাকা দরে। উৎপাদিত জ্বালানি তেল দুটি পদ্ধতিতে পরিশোধন করা হয়। এক ছাঁকন পদ্ধতি এবং দুই থিতানো পদ্ধতি। থিতানো পদ্ধতিতে এক কেজি পলিথিনে ৪০০ গ্রাম ও প্লাস্টিক থেকে ২৫০/৩০০ গ্রাম জ্বালানি তেল উৎপাদিত হয়। এতে খরচ হয় মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, কম খরচে তেল ও গ্যাস উৎপাদন অত্যন্ত লাভজনক। একদিকে পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে পরিবেশকে হুমকির মুখ থেকে রক্ষা করবে অন্যদিকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদন করে ভালো আয় করা যাবে। সরকারের সহযোগিতা পেলে আরও অনেক জ্বালানি তেল উৎপাদন করতে পারতাম।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিদুল ইসলাম জানান, তাহের আলী শতভাগ সফলভাবেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন দিয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করছে। এতে একদিকে পরিবেশ ভালো থাকছে, অন্যদিকে জ্বালানি তেল উৎপাদিত হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে তেল উৎপাদন করা গেলে স্বল্পমূল্যে জ্বালানি তেল পাওয়া সম্ভব হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ